1st Oct 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
৮৩ তম বর্ষে এবারের থিমের নাম সাতমহলার অন্তঃপুরে। গড়িয়াহাট থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে যাওয়ার পথে বাঁদিকের গলিতে পড়বে এই পুজো মন্ডপ। সমগ্র ভাবনার আবহ সংযোজনায় পন্ডিত সুভেন চট্টোপাধ্যায়। সাবেকি প্রতিমা রূপায়ণে ভাস্কর শ্রী প্রদীপ রুদ্রপাল।
ষোড়শ শতাব্দীর সাহিত্যে আমরা পশ্চিমবঙ্গে (তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশে) জমিদারদের দ্বারা দুর্গাপূজার উদযাপনের প্রথম উল্লেখ পাই। সেই সময় লক্ষ্মী পুজো, সরস্বতী পুজো প্রতিটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে জায়গা করে নিলেও প্রধানত দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন গ্রাম বাংলার বর্ধিষ্ণু পরিবারের মানুষজনই। এটা অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে পাঁচটি দেবদেবীর মূর্তি তৈরী এবং তদুপরি তিন চার দিন ব্যাপী তার পূজা ও ভোগের আয়োজন করতে স্বভাবতই আর্থিক সঙ্গতি ও স্বচ্ছলতার প্রয়োজন হতো। সুতরাং দুর্গাপূজা ধীরে ধীরে বনেদী বাড়ির চৌকাঠে আবদ্ধ হয়ে পরে।
আমাদের এই বছরের প্রয়াস সাতমহলার অন্তঃপুরে সেই জমিদার বাড়ির কিছু মুহূর্তকে দর্শকের সামনে তুলে ধরবে। বেত এবং বাঁশের কারুকার্যে প্রাণ পাবে সাতমহলার অন্তঃপুর। শিল্পী শ্রী সুদীপ্ত মাইতির কল্পনায় ধরা পড়বে সেই সব পরিবারের নানা উত্থান পতনের কাহিনীর দৃশ্যপট। সেই সব পরিবারের খিলানে খিলানে লুকোনো কত অব্যক্ত বেদনা, কত না বলা কথা। দেখা যাবে সেই আরাম কেদারা যেখানে বসে গরগড়ার নলে মুখ লাগিয়ে বাবু হুকুম দিতেন চাবুকের আধাতে নিঃস্ব কৃষকের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়ার, দেখা যাবে সেই ড্রেসিং টেবিল যার সামনে বসে সিঙ্গার শেষে অপমানিত বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করতেন গৃহকর্ত্রী, কোথাও বা দেখা যাবে চোরা কুঠুরিতে প্রবেশের ঘোরানো সিঁড়ি, দেখা যাবে সেই চিক্ দিয়ে ঘেরা বারান্দা যার অলিন্দে হয়তো হারিয়ে গেছে কত নব যৌবনার স্বপ্নের পুরুষ। সিংহ দরজায় দেবীর আরাধনা আর অন্দরে আরেক দেবীকে প্রতারণা।
তবে সবটাই কি ব্যভিচার আর কলঙ্ক? না তা অবশ্যই না হয়ত সেই আরাম কেদারায় বসে জমিদার মশাই কত পিতৃ মাতৃহীন কন্যার সুপাত্রে সম্প্রদান করেছেন, সেই ড্রেসিং টেবিলে বসে রাণীমা তার গলার মুক্তাহার পরিয়ে দিয়েছেন কোনো দাসীকে, চিক ঘেরা বারান্দায় তৈরী হয়েছিল নতুন প্রেমের বন্ধন বা ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে কেউ দেখেছিল শুকতারা।
পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপরে আপনি কি দেখতে চাইছেন? আর আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার পাবে এই শিল্পকর্ম, এই প্রয়াস।