2nd Oct 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতার অন্যতম প্রসিদ্ধ পারিবারিক দুর্গাপুজো, শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গাপুজো। সাবেকিআনাই এই পুজোর মূল আকর্ষণ। থিম নেই। চেনা প্রতিমা প্রতি বছর একই ভাবে একই নিয়মে পুজো করা হয়। এই পুজোর গায়ে আসলে লেগে আছে ২৬৭ বছরের পুরনো ইতিহাসের গন্ধ। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ উদ-দৌল্লার বিরুদ্ধে ব্রিটিশের জয়কে উদযাপন করতে প্রথমবার এই দুর্গাপুজো শুরু হয়। প্রথম পুজোটি রাজা নবকৃষ্ণ দেব নির্মিত বড় রাজবাড়িতেই হয়েছিল। তবে এখন বড় রাজবাড়ি এবং ছোট রাজবাড়ি দুটি স্থানেই এই পুজো হয়। প্রথমবার পুজোর সময় বিশেষ অতিথি হিসাবে লর্ড ক্লাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংস নিমন্ত্রিত ছিলেন। রামকৃষ্ণ দেব, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ দের মত আরও বহু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি এই পুজোর মাহাত্ম্যকে বাড়িয়ে তুলেছে।
দুর্গানবমীর ঠিক আগের নবমীতে বোধন হয়। বোধনের দিন থেকে প্রত্যেকটি দিন ১৫ জন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত চণ্ডী, রামায়ণ ও অন্য বহু শাস্ত্রপাঠ করেন। সপ্তমীর সকালে একটা রুপোর ছাতা মাথায় নিয়ে নবপত্রিকাকে বাগবাজারের ঘাটে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না, আতপচাল, ফল, মিষ্টি দই, দেবীকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। একসময় বাড়িতে ভিয়েন বসত, তৈরি হত নানারকমের মিষ্টি। সন্ধিক্ষণের পুজো আজও নিষ্ঠার সঙ্গে হয়। আগে সন্ধিপুজোর সময় বন্দুক ফাটানো হত। দশমীর সকালে দর্পণ বিসর্জন। পিতৃ আলয় ছেড়ে মা দুর্গা শ্বশুরালয় যাত্রা করার আগে কনকাঞ্জলি দেওয়া হয় রুপোর থালায়। সোনার সিঁদুর কৌটো, আতপ চাল, ধান, দূর্বা ও গিনি দিয়ে কনকাঞ্জলি দেওয়া হয়। আগে বিসর্জনের সময় নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়া হত স্বর্গে গিয়ে মায়ের আগমনবার্তা মহাদেবকে পাঠানোর জন্য। এখন মাটির দু’টো নীলকণ্ঠ পাখি বানিয়ে দশমীর দিনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, বিসর্জনের সময় পাখি দু’টোকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়। একদিন যে পুজোতে শুধু গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই আসতেন, আজ দু’বাড়ির ঠাকুরদালানই ভরে ওঠে সাধারণ মানুষের ভিড়ে।