12th Oct 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের পতিরামের জমিদার বাড়িতেও শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো চলে আসছে সেই থেকে। দুর্গা দালানে চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। পাশাপাশি সেজে ওঠে জমিদার বাড়ি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় বাড়ির আশপাশ। পতিরাম জমিদার বাড়ি, ঘোষ বাড়ি বলেই পরিচিত। পতিরামের ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় সাত পুরুষ আগে শুরু হয়েছিল। সঠিক বয়স বলতে না পারলেও কম করে তা ২৫০ বছরের পুরনো তো হবেই।
দেশে তখন ব্রিটিশদের শাসন। আত্রেয়ী নদীও তখন বেশ হৃষ্টপুষ্ট। নদীতে পারাপার হত বণিকদের বড় বড় নৌকা থেকে বজরা সবই।আত্রেয়ীর জলপথে বাংলাদেশ থেকে এলেন এক চালের ব্যবসায়ী। নোঙ্গর ফেললেন পতিরামে। বেশ ভালোই ব্যবসা হল। ব্যবসার খাতিরে পতিরামে যোগাযোগ নিয়মিত হল। ব্যবসায়ী রামসুন্দর ঘোষ এই এলাকাতে থাকার সুবিধার্থে বাড়ি বানালেন। এতে ব্যবসারও সুবিধা। ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ নাম ডাক হল রামসুন্দর বাবুর। ধীরে ধীরে সেই এলাকায় ব্রিটিশদের সুনজরে পড়লেন। পতিরাম এলাকায় জমিদারির দায়িত্ব পেলেন রামসুন্দর বাবু। তারপরই নিজের বসতবাড়িতে শুরু করলেন দুর্গা পুজো।
চারদিনের এই পুজোয় গ্রামের মেজাজই পাল্টে যেত অনেক। পুরো এলাকাজুড়ে এই একটি মাত্র দুর্গাপুজো। ফলে গ্রামের লোকেদের উত্তেজনার শেষ ছিল না। পুজোয় আগের মতো জাঁকজমক না থাকলেও মেনে চলা হয় বাকি সমস্ত নিয়ম। নিয়ম মেনেই করা হয় নারায়ণ পুজো থেকে চন্ডী পুজো। তবে এখানে অন্ন ভোগের আয়োজন নেই। পরিবর্তে মিষ্টান্ন ভোগ। ভোগ প্রসাদ বিলি করা হয় দর্শনার্থীদের মাঝেও।
প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। সে সময় পুজোর কয়েকদিন ধরে চলত মঙ্গলচণ্ডী গান। পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনে এখনও পুজো হলেও নেই আগের মত জৌলুস। অতীতের টিনের ছাওনিওয়ালা মন্দিরে পুজো হলেও আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষরা পাকা মন্দির তৈরি করেছিল। এখন সেখানেই চলছে পুজো। ঘোষ বাড়ির কুল দেবতার কাঠামো পুজো দিয়েই শুরু হয় দুর্গা পুজো। এটাই বিশেষত্ব। অতীতে এই পুজোতে মোষ, পাঁঠা, লাউ ও আখ প্রভৃতি বলি দেওয়ার প্রচলন থাকলেও সেই সব রীতি তুলে দিয়েছে জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। এই পুজোতে বিভিন্ন খ্যাত নামা স্বাধীনতা সংগ্রামীর আনাগোনা ছিল বলেও জানা গিয়েছে।