14th Oct 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

মানব ৯৩...

12th Aug 2024

বিনোদন

নিজস্ব প্রতিনিধি


'এমনি করে পড়বে মনে' ও 'ঘুমাও সহেলি গো' গানদুটি সেই সময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। আজ বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ৯৩ বছর। ৬১ বছর হতে না হতেই চলে যেতে হল পৃথিবী ছেড়ে। অন্যগ্রহে বা অন্যলোকে। সেখানেও নিশ্চয়ই দল বেঁধে শুনছে তাঁর গান। 'আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি' কিম্বা 'বনে নয়, মনে মোর পাখি আজ গান গায়' শুনে সেলোকবাসী বলছেই বলছে, সাধু, সাধু, সাধু... মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ধন্য তুমি ধন্য হে...!

কাকার কাছেই গানের হাতে খড়ি। বাবা অতুলচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন আর্কিটেকচার। বাবা এস্রাজ বাজাতেন। কাকা রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত কীর্তনশিল্পী। এই কাকার হাত ধরেই তাঁর সুরের পথে হাঁটা। তাঁর প্রভাবে সেই ছোট্টবেলা থেকে মানবেন্দ্র কীর্তন, ভজন ও

ভক্তিগীতির প্রতি আকর্ষণ গড়ে উঠেছিল। তার অন্য তিন কাকাও গান করতেন। ওরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত ছিলেন। এই অল্প বয়সেই গানের অন্দরমহলে ঢুকে পড়ার পিছনে মূলত তাদেরও প্রভাব ছিল। পূজার সময় কেবল নিজেদের বাড়িতে নয়, কাকাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে গান গাইতে যেতেন মানবেন্দ্র।

সঙ্গীত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ সালের ১১ অগাস্ট। কলকাতার কালিঘাটে। তাদের আদি বাড়ি ছিল বরিশালের উজিরপুরে। উজিরপুরে তাদের দেশের বাড়ির চন্ডীমণ্ডপে সারাক্ষণ গান হতো। রাধাকৃষ্ণের লীলাকীর্তন, রয়ানী গান, মনসামঙ্গলের আসর। এমনকি সেখানকার মাঝিমাল্লারাও মণ্ডপে এসে গান গাইত। তারা সারিন্দা বাজিয়ে গাইতো জারি- সারি-ভাটিয়ালি। ফলে এক উৎসব মুখর সঙ্গীত পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন মানবেন্দ্র

জন্ম কালীঘাটে হলেও বড় হওয়া টালিগঞ্জের ভবানী সিনেমার পাশের গলিতে। বাঙাল পাড়ায়। যৌথ পরিবার। বড় সংসার।

গানবাজনা এই পরিবারে সঙ্গী। বাঙাল পাড়ায় আজও 'গানের বাড়ি বললে, লোকে এই বাড়িকেই চিনিয়ে দেয়।

সঙ্গীত চর্চাই মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ও প্রধান কাজ। প্রথম জীবনে তার গাওয়া 'এমনি করে পড়বে মনে' ও ঘুমাও সহেলি গো গান দুটি সঙ্গীত অনুরাগীদের নজরে পড়ে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানবেন্দ্র বাংলার। তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় সুরকার যেমন- সলিল চৌধুরী, সুধীন দাশগুপ্ত, রবীন চাটার্জি, অনল চ্যাটার্জি, নচিকেতা ঘোষ, প্রবীর মজুমদার, জ্ঞানপ্রকাশ। ঘোষ, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ফলে মানবেন্দ্রর জন্য এঁরা গান তৈরি করতে শুরু করলেন। বেসিক গান। হিট। কিন্তু ওঁর গলায় মাত্রা পেল, কাজী নজরুলের গান। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার কাকা রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ভালো সখ্যতা ছিল। তার মাধ্যমেই নজরুলের সঙ্গে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের আলাপ যা পরে আরও দৃঢ় হয়েছিল। পরবর্তীতে নজরুলের গান করতে গিয়ে তিনি কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী ইন্দুবালা দেবী ও আঙ্গুরবালা দেবী থেকে প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন। এছাড়া নজরুল নিজেও তাকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা করেছিলেন। যে কারণে নজরুলের গানের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া। বাগিচায় বুলবুলি তুই', 'মুসাফির মোছ রে আঁখি জল', 'আকুল হোলি কেনো, বৃথা তুই কাহার পানে', 'আমার নয়নে কৃষ্ণ নয়নতারা', 'অরুণকান্তি কে গোর মত ভারতীয় রাগাশ্রিত নজরুলের এসব গ্রুপদি সঙ্গীত এখনও শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করে চলেছে। নজরুল সঙ্গীতের ওপর তিনি যে ধরনের কাজ করেছেন তা একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। মানবেন্দ্র হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি নজরুল গীতি গেয়েছিলেন। আগে কাজীর গানের ডিস্কে লেখা থাকতো সঙ্গস অব নজরুল'। মানবেন্দ্র কাজীর গানের প্রথম ডিস্ক, যেখানে লেখা ছিল, নজরুল গীতি। 'সঙ্গস অব নজরুল' নয়। মানবেন্দ্রর গান কাজী নজরুল খুব পছন্দ করতেন। শেষ জীবনে নজরুল তখন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে মানবেন্দ্র এক জায়গায় বলেছিলেন, '৭১ সালে দেবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এলেন বাংলায়। সে বার ক্রিস্টোফার রোডে গাইতে গেলাম কবির জন্মদিনে। রাধাকান্ত নন্দীকে নিয়ে। বসে আছেন নীরব কবি। কী ট্র্যাজিক সেই নীরবতা! 'কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া' দিয়ে শুরু করে কত গান গেয়েছিলাম। কবির দু'চোখে জলের ধারা। কোনও কথা নেই মুখে।'

পৃথিবীর সর্ব সংখ্যক গানের রচয়িতা কবি নজরুল। ৫ হাজারের বেশি ওঁর গান। এর মধ্যে ১৫০০-২০০০ এর মতো গান পাওয়া যায় না, নজরুল বেঁচে থাকতেই হারিয়ে গিয়েছে। যে ৩ হাজারের মতো গান পাওয়া যায়। নজরুলগীতির জনপ্রিয়তার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান হল শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়েরই।

কবির শিষ্য, গুণগ্রাহী ও বন্ধুরা ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তাঁর সৃষ্টির ব্যবহার সচল রেখেছিলেন। এরপর থেকেই ষড়যন্ত্রের শুরু। কবির 'কথার কুসুমে গাঁথা' গানটি-'কথা প্রণব রায় ও সুর কমল দাশগুপ্ত'-এভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ব নজরুলের 'তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়' গানটির সুরকার হিসেবে ■ চিত্ত রায়ের নাম ছাপা হয়েছে। ধীরেন দাস থেকে শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় হয়ে নতুন যুগের শিল্পীরাও চিত্ত রায়ের সুর হিসেবেই এই গান গেয়েছেন। এমনি করে কবির গান অন্যের নামে হারিয়ে যেতে থাকে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত নজরুলগীতির অন্ধকার যুগ। ১৯৬৪ সালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে নজরুলগীতি গাওয়ানো হল। কিন্তু শান্তিনিকেতনের আশ্রমবাসীরা তাঁর রাশ টেনে ধরলেন। আশ্রমকন্যাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। তিনি ঘরে ফিরলেন। 'কথা প্রণব রায়' এবং 'সুর কমল দাশগুপ্ত' এভাবে এই গান ('বলেছিলে তুমি তীর্থে আসিবে') রেকর্ড কোম্পানিতে চুক্তিবদ্ধ হল। ফিরোজা বেগম রবীন্দ্রনাথের গান ছেড়ে কমলগীতি গাইতে শুরু করলেন। বাংলা গানের দ্বিতীয় পর্যায়। গীতিকার ও সুরকার ততদিনে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে।

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, শ্যামল মিত্র, উৎপলা সেন, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সনৎ সিংহ, রবীন চট্টোপাধ্যায়, রবীন মজুমদার - একঝাঁক নতুন শিল্পী গণমাধ্যমে হাজির। বাংলা গানের নব ধারায় ঢেকে গেল নজরুলী আবহ।

'আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি', 'ময়ূরকণ্ঠী রাতের নীলে', 'বনে নয় মনে মোর' ইত্যাদি গানের মাধ্যমে মানবেন্দ্র তখন বাংলা গানের শ্রোতাদের মনেতাঁর জায়গা করে নিয়েছেন। চলচ্চিত্রের কণ্ঠশিল্পীর সাথে সাথে সুরকারের খাতায়ও নাম লেখালেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বাংলা আধুনিক গানের এই ধারায়। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় যখন তুঙ্গে তখন তাঁর কন্ঠে একক একটি নজরুলগীতির ডিস্ক (১৯৬৫) প্রকাশিত হল। বরিশালের উজিরপুর মুখার্জি পরিবারের উত্তরসূরী মানবেন্দ্র আর একই জেলার তবলাবাদক রাধাকান্ত নন্দীর যুগলবন্দি। হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের তালিমের চরম নির্যাস উভয়ে ঢেলে দিতে পেরেছেন কবির লমুসঙ্গীতে। যেটা আধুনিক গানে সম্ভব নয়। প্রেমে পড়লেন মানবেন্দ্র। পঁয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধের পর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনুরোধের আসরের ফাঁকে শ্রোতারা শুনতে থাকে বাণী-বীণার এই নতুন স্বাদ। সঙ্গীতমোদী মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ল নজরুলের গানে। মানব ও কাজী নজরুল হয়ে গেলেন একই বৃদ্ধের ফুল। অন্যদিকে নজরুলগীতি হয়ে গেল তো একদিন উত্তমকুমার মানবেন্দ্রকে নিয়ে লেখকের বাড়িতে গেলেন। কিন্তু এত অল্প বয়সী এবং অজ্ঞাত একজনের প্রতি ভরসা করতে পারছিলেন না তারাশঙ্কর। তিনি তো প্রথম মুখের ওপর না করে দিয়েছিলেন।

'মানবেন্দ্রর গান'। শ্রোতাদের অনুরোধ, মানবেন্দ্র-র গান শুনতে চাই। নিজের গাওয়া বিখ্যাত আধুনিক গানের প্রলোভন দেখিয়ে নজরুলের এক ডজন গান শোনানো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এমনটা বহুবার ঘটেছে। কোথাওবা তিনি বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। কখনও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। কিন্তু নজরুলগীতি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। থামেননি একটুও। মানবেন্দ্র নজরুলগীতি নব আন্দোলন শুরু করলেন। তবলায় রাধাকান্ত নন্দী। 'বাগিচায় বুলবুলি তুই', 'এত জল ও কাজল চোখে', 'কেন আনো ফুলডোর', 'মুসাফির মোছ রে আঁখিজল ফিরে চল', 'ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান' বাংলা গানকে সুরের বন্যায় ভাসিয়ে দিল।

অনেকে অভিযোগ তুললেন, 'মানব তো সুর বিকৃত করছে।' কিন্তু, তাঁর গায়কীর চাল ধরতে গেলে যে তালিম প্রয়োজন, সেটা তো তাঁদের নেই। না ক্লাসিক্যালে, না নজরুলগীতিতে। পল্লীগীতি ও আধুনিক গানের অক্ষম গায়করা এহেন মন্তব্যে জীবনপাত করেছেন। বাঙালি সঙ্গীত সমাজে জড়িয়ে গেল মানবেন্দ্র-র গান। এমনকি মানবেন্দ্র নিজের সুরে গাইলেন নজরুলের কথায়, 'আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন' গানটি। জনপ্রিয় হবার পর তিনি স্বীকার করলেন এ গানের সুর তাঁর। নব প্রজন্মের হাতে বাংলা গানের এই শ্রেষ্ঠ ধারার আলোকবর্তিকা যে শিল্পী নিজের জীবন নিঃশেষ করে বর্তমান। প্রজন্মের কাছে দিয়ে গেলেন তার জন্য তিনি অমর, অক্ষয় হয়ে থাকবেন। তারপরও মূল শক্তি হল কাজী নজরুল ইসলামের বাণী ও সুরের অপূর্ব সমন্বয়- ভারতীয় সুর ও ছন্দের সার্থক প্রয়োগ। এ জন্যই সফল হয়েছেন যোগ্য নাবিক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভালো সম্পর্ক ছিল। এই লাতিকার তারাশরিচালকের পারিস্থিনি এখ ছবির সংগীত পান। তিনি 'শিবো কে শিবো' গানটিতে মহাদেবের গাজনের স্বাদ নিয়ে এসেছিলেন। এখনও পশ্চিম বাংলার গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এটি পাওয়া হয়ে থাকে। এর আগে অবশ্য তিনি উত্তমকুমার অভিনীত সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে অভিনয় করেছিলেন এবং এতে একটি গানও গেয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে প্রতিবন্ধী ছেলের গল্প নিয়ে তৈরি 'সাধু ভুলু' সিনেমার গানগুলো জনপ্রিয়তা পার। ছবির 'জার হিয়া আকাশের নীল নীলিমায় 'দুঃখ আমার শেষ করে দাও প্রশ্ন, 'সূর্য তোমার সোনার তোরন খোলো', 'সুখের পথে নাই যদি', 'এই পরান কর্ণা জাগলে গানগুলো তখন লোকের মুখে মুখে ফিরতো। এছাড়া 'মায়ামৃগ' (১৯৬০), বধু (১৯৬২), 'যত মত তত পথ', 'জয় জয়ী (১৯৭০), 'গোধুলি বেলা' (১৯৬৫) সহ প্রায় ৩০ টির মতো বাংলা ছবিতে সংগীত রচনা করেছিলেন।

তবে সমালোচকরা মনে করেন, সোনাদি যুগের একজন ধ্রুপদী শিল্পী হিসেবে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার প্রতিভার যোগ্য স্বীকৃতি পাননি। কেন পাননি সে অবশ্য অন্য হিসেব।

মানবেন্দ্রর ঠাকুরদাদা ছিলেন গজেন্দ্রনাথ। তিনিও অসম্ভব সঙ্গীত- রসিক। রজনীকান্ত সেনের সঙ্গে এক মেসে থাকতেন। ভক্তিগীতি, হরিনামের গান করতেন। রজনীকান্ত গান লিখলে গজেন্দ্রনাথকে দেখাতেন। ফলে মানবেন্দ্রর রক্তেই গান আর গান। মানবেন্দ্রর শ্বশুর বাড়ি সচ্ছল পরিবার।

পরিচয়ের সূত্র ধরেই উত্তমকুমার তার প্রযোজিত 'চাঁপাডাঙ্গার বউ' (১৯৫৪) ছবির সংগীত পরিচালক মনোনীত করেন তাকে। আর এই ছবির মাধ্যমেই চলচ্চিত্র জগতে সুরকার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন এই শিল্পী। যদিও বিষয়টা এতটা সহজ ছিল না। কেননা এই ছবির কাহিনীকার বিশিষ্ট লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই চলচ্চিত্রের গানগুলি লিখেছিলেন। তো একদিন উত্তমকুমার মানবেন্দ্রকে নিয়ে লেখকের বাড়িতে গেলেন। কিন্তু এত অল্প বয়সী এবং অজ্ঞাত একজনের প্রতি ভরসা করতে পারছিলেন না তারাশঙ্কর। তিনি তো প্রথমে মুখের ওপর না করে দিয়েছিলেন। পরে কী ভেবে তার পরীক্ষা নিতে রাজি হন। তিনি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের 'শিবো হে শিবো' গানটির সুর করতে বলেন। মানবেন্দ্র ওইদিন তারাশঙ্করের বাড়িতে বসে তৎক্ষণাৎ গানটির সুর তৈরি করে ফেলেন যা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন লেখক ও তুলনায় এরা অনেকটাই অসচ্ছল। কিন্তু তাতে শ্বশুর-শাশুড়ির কোনও আপত্তি তো ছিলই না, উলটে বিয়ের আগে থেকেই ভাবী শ্বশুরবাড়িতে মানবের অবাধ যাতায়াত ছিল। ওরা হবু জামাইকে খুব ভালোবাসত। কথা প্রসঙ্গে মানবেন্দ্র তনয়া মানসী মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, মায়ের বাবা কম্যান্ডিং অফিসার। তো, বিয়ে ঠিক হলে পর, দিদিমা সব জিনিসপত্র কিনতে লাগল। একটা জিনিস শুধু কিনেছিল বাবাকে না বলে। সে কথা বাবা জেনেছিল একবারে বিয়ে করতে গিয়ে। দিদা বলল, "পল্টন, (বাবার ডাকনাম) তোমার জন্য একটা জিনিস আমি নিজে গিয়ে করিয়ে এনেছি, তোমায় বলিনি।"

বাবা তো শুনে অবাক, কী এমন জিনিসযেটা কিনে আনার আগে বলা যায় না। দিদা বলল, "একটা হারমোনিয়াম।" বাস, শোনা মাত্র বাবা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে চৌচয়ে মেচিয়ে একশা।

"মামণি, খুব ভুল কাজ করেছ। হারমোনিয়ামটা বাজিয়ে দেখে কিনতে হয়," বলে বাবা খুব রাগ দেখাতে লাগল। শেষে শুধু বলল, "তা, কোত্থেকে কিনেছ, শুনি!"

দিদিমা একটা বিখ্যাত দোকানের নাম করল। বাবার রাগ তাতে যেন অল্প পড়ল। বসল হারমোনিয়াম নিয়ে। আর বেলো ধরে রিড-এ হাত দেওয়া মাত্র চমকে উঠল। এ তো অসাধারণ। অসম্ভব সুরেলা। রিডে হাত চালিয়ে এত খুশি হল যে, সোজা উঠে দাঁড়িয়ে দিদাকে কোলে তুলে আনন্দে যেই ধেই করে ঘুরতে লাগল।

সেদিন থেকে হেন কোনও অনুষ্ঠান বা রেকর্ডিং নেই যে, বাবা ওই হারমোনিয়ামটা সঙ্গে নেয়নি। আজও আমার কাছে ওটা রাখা। ওটা যেন ঠিক আর যন্ত্র নয়, আমাদের পরিবারের নানা স্মৃতি বুকে বয়ে জীবন্ত কোনও সত্তা।

আজও তার রিডে হাত চালালে আমি বাবার ছোঁয়া পাই। এত বাজাত, এত বাজাত ওটা, আঙুলের চাপে জায়গায় জায়গায় একটু আধটু বসে গেছে। ঠিক ওইখানগুলোয় যেন জেগে আছে বাবার প্রাণ। বাবা-মায়ের আমি একমাত্র সন্তান। মায়ের সঙ্গে যত না, বাবাকে ছাড়া যেন আমার চলতই না।

বাবা গান গায়, আমি বাবার পিঠে পিঠ দিয়ে পড়ি। বাবা আমার পড়ার বইয়ের কবিতায় সুর করে দেয়, আমি তাই গেয়ে বেড়াই। বাবা কার্নেগি হলে হ‍্যারি বেলা ফন্টের কনসার্ট, গোলাম আলির গজলের ক্যাসেট কিনে দেয়, আমি শুনি। রাতবিরেতেও কোনও গানে সুর করলে বাবা আমায় পায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে ডেকে দেয়, আমি উঠে বসি। বাবা মানেই একরাশ মজা। দুষ্টুমি। আবদার। গান। খেলা।

আড্ডা। সব। মানসী বলছেন, খুব পড়তে ভালবাসত বাবা। ছোটদের। বই, বড়দের বই বলে কোনও বাছবিচার ছিল না। বাবার দেখাদেখি এ স্বভাব আমাকেও পেয়ে বসে। তবে বাবা জেমস হেডলি চেজ, আগাথা ক্রিস্টি পেলে যেন জগৎ ভুলে যেত। খুব ভালোবাসত রিডার্স ডাইজেস্ট ম্যাগাজিনটা।

মায়ের রান্নার হাত খুব ভাল। মাঝেমধ্যেই বাড়িতে ভালমন্দ হত। একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেলে বাবা মজা করে বলত, "বেলু (মায়ের ডাকনাম, ভাল নাম বেলা) এ বার একটু ডাইজেশনের দরকার, যাই পড়ে আসি,” বলেই রিডার্স ডাইজেস্ট খুলে বসত।

একটা হিন্দুস্থান ফোর্টিন গাড়ি ছিল বাবার। ওটা করে আমাকে মাঝে মাঝে স্কুল থেকে আনতেও যেত বাবা। সেখানেও মজা। মেয়েকে স্কুলে আনতে গিয়ে কোনও বাবা লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শুনেছেন কোনও দিন? আমার বাবা তা-ই করত। যখন স্কুল থেকে বেরিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আমার প্রায় কাঁদকাঁদ দশা, তখন পিছন থেকে এসে 'ধাপ-পা.আ' বলে পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে দেখা দিত। ইস্টবেঙ্গল বলতে বাবা অজ্ঞান। এ দিকে আমার অ মামাবাড়ি পুববাংলার লোক হলেও সবাই মোহনবাগান। ফলে খেলার দিন, ইস্টবেঙ্গল জিতলেই বাবা ইলিশ কিনে সোজা চলে যেত মামাবাড়ি।

আর মোহনবাগান জিতল তো, পালট হানা মামাদের। এমনও হয়েছে, বাড়ির টিভিতে খেলা চলছে। পাড়াসুদ্ধ লোক আমাদের ব্ল‍্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ওয়েস্টন টিভির সামনে হামলে পড়েছে। আমরা বাপ-বেটি রবীন্দ্র সরোবরের বেঞ্চে গলদঘর্ম হয়ে রেডিয়ো শুনছি। ইস্টবেঙ্গল হারলে মামাদের আক্রমণ শেষ হল কি না জেনে, তবে আমাদের বাড়ি ফেরা।

গানের জন্য একদিকে আবেগী। অন্যদিকে বেপরোয়া। নাছোড়। সে একেবারে ছোট থেকেই। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, 'দোলে দো দুল দোলে কুলনা' গানের কথা। কী অসামান্য সুর। এর রেকর্ডিং-এর একটা গল্প আছে। 'দেয়া নেয়া' ছবির পরিচালক সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় মানবেন্দ্রকে ডেকে বললেন, "আপনাকে গম্ভীর হয়ে উঠে পড়তে যাচ্ছিলেন মানবেন্দ্র। তখনই নায়ক উত্তমকুমারের প্রবেশ। কনট্রোল রুমে বসেছিলেন এতক্ষণ। এ ঘরের সব কথাই তাঁর কানে গেছে। ঢুকেই বললেন, "মানব, তুই উঠিস না।

মানবেন্দ্রর মনের অবস্থাটা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন তিনি। আলাপ তো আর এক দিনের নয়। যখন তিনি চলচ্চিত্রেরই ধারেকাছে নেই, তখন থেকেই। টালিগঞ্জের বাঙাল পাড়ায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাছে তবলা শিখতে যেতেন সে দিনের অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সে কত কাল আগে। সেই আলাপ আরওই জমে গিয়েছিল 'সাড়ে ৭৪'-এ একসঙ্গে অভিনয় করায়।

ইউনিটের লোকজনের দিকে তাকিয়ে উত্তম বললেন, "দেখুন, গল্পটা তো রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রের নয়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নয়। একটু বদলে নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। নায়কের সে-যাত্রায় বন্ধু উত্তম পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আবার সেই বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েও একবার সঙ্গীত পরিচালনার কাজ থেকে সরে আসেন মানবেন্দ্র। 'বনপলাশীর পদাবলী' ছবি করবেন উত্তমকুমার। সঙ্গীত পরিচালনার জন্য ডাকলেন বন্ধু 'মানব'কে।

একটু খারাপ করে গাইতে হবে।" স্বয়ং ছবির পরিচালক এমন কথা বলছেন। আকাশ থেকে যেন পড়েছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। রিহার্সাল চলছে। শ্যামল মিত্রের সঙ্গে গাইতে হবে। শ্যামল মিত্রের সুর। 'দেয়া নেয়া' ছবির গান। 'দোলে দো দুল দোলে ঝুলনা'। তারই রেকর্ডিং-এর আগে রিহার্সাল। শ্যামল মিত্র আছেন। ইউনিটের অন্যরাও উপস্থিত। তারই ফাঁকে অমন বজ্রপাত। মানবেন্দ্র হতচকিত হয়ে প্রশ্ন করলেন,

"মানে। কেন? কী বলছেন আপনি!" পরিচালকের যুক্তি, "আসলে ছবিতে নায়ক (উত্তমকুমার) গান জানেন। তাঁর বন্ধু (তরুণকুমার) গাইতে পারেন না। গল্পে এমনই বলা আছে। নায়কের গানটা শ্যামলবাবুর (মিত্র)। আপনি গাইছেন বন্ধুর লিপে।"

"তা বলে খারাপ করে গাইতে হবে! তা হলে আমাকে ডেকেছেন কেন? আমায় বরং ছেড়ে দিন।"

বন্ধুকে গায়ক করতে দোষ কী। মানবকে আপনারা ডেকেছেন, ও তো চাইবে ওর একশো ভাগ দিতে। যেমন আমার কাছ থেকেও আপনারা আশা করেন। ওর মতো একজন গায়ক খারাপ করে কী করে গাইবে?"

এই কথায় কাজ হল। হল রেকর্ডিং। সে-যাত্রায় বন্ধু উত্তম পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আবার সেই বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েও একবার সঙ্গীত পরিচালনার কাজ থেকে সরে আসেন মানবেন্দ্র। 'বনপলাশীর পদাবলী' ছবি করবেন উত্তমকুমার। সঙ্গীত পরিচালনার জন্য ডাকলেন বন্ধু 'মানব'কে। প্রথম সিটিঙে গিয়ে মানবেন্দ্র দেখেন, তিনি একা নন। শ্যামল মিত্র সহ আরও জন তিন-চার সঙ্গীতকার রয়েছেন এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে। সবাই মিলেই একই ছবিতে একসঙ্গে সঙ্গীত পরিচালনা করবেন। ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি মানবেন্দ্রর। সরে দাঁড়ান। -"এত অ্যামেচারিশ ব্যাপার আমার পোষাবে না।

অ্যামেচারিজম পছন্দ ছিল না তাঁর। গানের ব্যাপারে বরাবরই সিরিয়াদ মানবেন্দ্র। রাধাকান্ত নন্দীর ছেলে মানিক নন্দী বলছিলেন, একবার সুরকার নচিকেত গোষের সঙ্গে বড়সড় ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যাচ্ছিল প্রায় মানবকাকার। সে বছর পুজোয় বিখ্যাত এক গানের মহলা। 'বনে নয় মনে মোর'। রেকর্ডিং হবে একটু পরেই। অথচ নচিকেতা ঘোষের তৈরি মুখড়াটা কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না মানবেন্দ্রর। শেষে বাবাকে (রাধাকান্ত নন্দী) মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বললেন, তুই একটা টুকরো বাজা তো।" বাজালেন " রাধাকান্ত। সেটাই গানের মুখে লাগালেন। এ বার মানবেন্দ্র-রাধাকান্ত দু'জনেরই খুব পছন্দ হল। নচিকেতা ঘোষ গেলেন রেগে। তক্কাতক্কি করে উঠেই গেলেন মঙ্গল ছেড়ে। মহলা থামল না। রেকর্ডিংও হল। এই পুরো সময়টা বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার অলক্ষ্যে গান শুনেছিলেন নচিকেতা। ধীরে ধীরে গানটা ওর মনে ধরে গেল। শেষে এসে জড়িয়ে ধরলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে।

এমনই ছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। এতো বড় শিল্পী, কতটুকু চর্চা হয় তাঁকে নিয়ে। বাংলার মানুষ যারা তাঁকে ভালোবাসেন, তাঁরা তো সত্যিই ভালোবাসেন। তাঁর মতো মানুষকে না ভালোবেসে পারা যায়? তাই তো ভালোবেসে সাধ মেটে না। মানবেন্দ্রর বহুকালের বন্ধু, গীতিকার শ্যামল গুপ্ত। সঙ্গীত সমালোচক অতনু চক্রবর্তীর সঙ্গে একবার শ্যামল গুপ্তের গানের আড্ডা হচ্ছে। সেই আড্ডার আমিও একজন, কত কথা কতজনের কথা। উঠল মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কথাও। তখন যেন আপ্লুত শ্যামল। বললেন, সে বহু বছরের সম্পর্ক। তখন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়েই হয়নি। তখন থেকেই। ওঁদের বন্ধুত্ব ছিল পারিবারিক।

'মায়ামৃগ' ছবির গান বাঁধা হচ্ছে।

মায়ামৃগ-র সময় শ্যামল গুপ্তকে মানবেন্দ্র বললেন, "নায়ক বিশ্বজিৎ নায়িকা সন্ধ্যা রায়ের প্রেমে পড়েছে। কিন্তু নায়কের সব কথাতেই ডাক্তারির প্রসঙ্গ এসে পড়ে। এমনকী প্রেম নিবেদনের সময়ও তাই। এটাকে মাথায় রেখে একটা গান লেখ।" মানবেন্দ্র তখন ফার্ন রোডে 'গীতবীথিকা' নামে একটা স্কুলে গান শেখান। ক্লাসের পর সেখানে বন্ধু শ্যামলের সঙ্গে গান-আজড্ডাও হয়। তেমনই এক রবিবারের বিকেলে শ্যামল গুপ্ত হাজির হলেন ফার্ন রোডে। সঙ্গে গান- 'মেটেরিয়া মেডিকার কাব্য'। গানটি দেখে মানবেন্দ্র বললেন, 'ছ্যা, এ কী লিখেছিস। এ একেবারে চলবে না। গান লেখা টুকরো কাগজটা হাতে নিয়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন জানলা দিয়ে। বন্ধু আর কী করেন। মুষড়ে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়লেন।

ঘণ্টা দুই গড়াল। গানের ক্লাস শেষ। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে মানবেন্দ্র দেখলেন বন্ধু শ্যামল পাংশুমুখে বসে। বললেন, "না রে, গানটা তুই মন্দ লিখিসনি। দেখি এক বার।"

এ বার রাগে-অভিমানে শ্যামল বললেন, "তুই তো ফেলে দিলি রাস্তায়। আমার কাছে কোনও কপিও নেই। ট্রামে আসতে আসতে হাতে যা ছিল, তার ওপরে লিখেছিলাম।"

তা হলে?

তখন সন্ধে নেমে গেছে। রাস্তায় আলো প্রায় নেই। দুই বন্ধু মিলে একটা ছোট টর্চ নিয়ে খোঁজ চলল। এতোলবেতোল। শেষে দলা পাকানো টুকরো কাগজটার খোঁজ মিলল নর্দমার পাশে। নিয়ে সুর করতে বসা হল। তৈরি হয়ে গেল গান। এরপর 'মেটেরিয়া মেডিকার' জনপ্রিয়তা তো আকাশ ছুঁয়ে যায়। এই শ্যামল গুপ্তরই লেখা সেই বিখ্যাত গান, 'আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি'। মানবেন্দ্রর খুব পছন্দের গান। শুধু পছন্দের বললে ভুল হবে। এটাই কিন্তু মানবেন্দ্র ব্র্যান্ড তৈরি করল। তখন রেডিয়োয় লাইভ ব্রডকাস্টের যুগ। ১ নম্বর গাস্টিন প্লেসে আছে আকাশবাণী। একদিন ছাদে পায়চারি করতে করতে গুনগুন করে গান গাইছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। আর কিছুক্ষণ পর রেকর্ডিং। সন্ধেবেলা। কোনওদিকে খেয়াল নেই তাঁর। হঠাৎ কেউ যেন ডেকে উঠল, "মানব, মানব।" চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখেন অস্পষ্ট একজন মানুষ।

'কে?' 'আমি শ্যামল। একটা গান লিখে ফেলেছি। শুনবি?'

'শুনব।'

অন্ধকারে দাঁড়িয়েই শুনছেন এবং শোনাচ্ছেন সদ্য লেখা গানের কলি, "তোমার কাজল চোখে যে গভীর ছায়া কেঁপে ওঠে ওই/ তোমার অধরে ওগো যে হাসির মধু মায়া ফোটে ওই/ তারা এই অভিমান বোঝে না আমার।"

সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। দুজনেই তৃপ্ত। গান পড়া শেষ হতেই দুই বন্ধু দুজনকে পাকড়াও করলেন। একদম সোজা পাঁচ নম্বর স্টুডিয়ো। ওখানে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো রাখা। তাতে বসেই গানের মুখড়াটা করে ফেলেছিলেন মানবেন্দ্র। তারপর তৈরি হল সেই চির স্মরণীয় মানবেন্দ্রর সিগনেচার সঙ, আমি এত যে তোমায় ভালো বেসেছি'। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর জীবনের শেষ দিন অবধি দুই বন্ধুরই ছিল। এইভাবেই বোধহয় চিরায়তের সৃষ্টি হয়। আজ আমারও বলতে ইচ্ছে করছে, আমি এত যে তোমায় ভালো বেসেছি। মনে। হয় এ যেন গো কিছু নয়। কেন আরও ভালোবেসে যেতে পারেনা হৃদয়...!

Archive

Most Popular