30th Nov 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
অসমের রাজধানী গুয়াহাটির পশ্চিমাংশে অবস্থিত নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির। কামাখ্যা তীর্থক্ষেত্র একটি শক্তিপীঠ ও তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্র। দেবী মহামায়া এই মন্দিরে কামাখ্যা রূপে বিরাজমান। আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণ এই মন্দির সংস্কার করেন। এরপর এই মন্দির সংস্কার করেন রাজা রুদ্র সিংহের জ্যেষ্ঠ পুত্র শিবা সিংহ। মন্দিরের দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন মহন্ত কৃষ্ণরাম ভট্টাচার্যকে।
কামাখ্যা মন্দিরে চারটি কক্ষ আছে। গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ। মণ্ডপগুলির নাম চলন্ত, পঞ্চরত্ন এবং নাটমন্দির। গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। মন্দিরের চূড়াগুলি মৌচাকের মতো দেখতে। গর্ভগৃহটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি গুহা। এখানে কোনও মূর্তি নেই। ভিতরে ঢালু পাথরের একটি খণ্ড আছে। সেটি যোনির আকৃতি বিশিষ্ট এবং এতে প্রায় দশ ইঞ্চি গভীর একটি গর্ত দেখা যায়। একটি ভূগর্ভস্থ প্রস্রবনের জল বেরিয়ে এই গর্তটি সবসময় ভর্তি রাখে। এই গর্তটিই দেবী কামাখ্যা রূপে পূজিতা।
লোক বিশ্বাস অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে ধরিত্রী মা ঋতুমতী হন। এই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়। তিনদিন মন্দির বন্ধ থাকে এবং মন্দির প্রাঙ্গণে বিরাট মেলা বসে। চতুর্থ দিন স্নান ও পূজা শেষে দেবীর দর্শন পান সব ভক্তেরা। সারাবছর এখানে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় খিঁচুড়ি। বিশেষ পুজোর সময় ছাগ বলি দেওয়ার ও রীতি রয়েছে। এছাড়াও অঙ্গোদক এবং অঙ্গবস্ত্র এই ২ রকম প্রসাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। অঙ্গোদক শব্দের অর্থ হল শরীরে তরল অংশ। যা ঝরণার জল হিসেবে মনে করা হয়। অঙ্গবস্ত্র শব্দের অর্থ হল শরীর ঢেকে রাখা কাপড়।
কথিত আছে, এখানে সতীর দেহত্যাগের পর বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে যোনি ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বারাণসীর বৈদিক ঋষি বাৎস্যায়ন খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীতে নেপালের রাজার দ্বারস্থ হয়ে উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলিকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত ও তাদের নরবলি প্রথার গ্রহণযোগ্য বিকল্প চালু করার জন্য অনুরোধ করেন। বাৎস্যায়নের মতে, পূর্ব হিমালয়ের গারো পাহাড়ে তারা দেবীর তান্ত্রিক পূজা প্রচলিত ছিল। সেখানে আদিবাসীরা দেবীর যোনিকে কামাকি নামে পূজা করত। ব্রাহ্মণ্যযুগে কালিকাপুরাণে সব দেবীকেই মহাশক্তির অংশ বলা হয়েছে। সেই হিসেবে, কামাক্ষ্যাও মহাশক্তির অংশ হিসেবে পূজিত হন। এই মন্দির কালো জাদু দূর করার জন্যও দারুণ বিখ্যাত। বশীকরণের জন্য সেখানে নানা যাগযজ্ঞ করা হয়।
মন্দিরের কাছেই রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। জুন মাসে অম্বুবাীর সময় এই নদীর জল লাল হয়ে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস ওই সময় দেবী রজঃস্বলা হন। সেই সময়ে, মন্দিরের দরজা তিন দিন বন্ধ থাকে এবং চতুর্থ দিনে প্রজনন পরব পালিত হয়। কামাখ্যা মন্দিরে ঋতুস্রাবের রক্তে মোড়ানো তুলা প্রসাদ হিসেবে পাওয়া যায়। এই তুলা পেতে ভক্তর দীর্ঘ লাইন পড়ে।
কামাখ্যা মন্দিরটি শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে সড়কপথে সংযুক্ত। গুয়াহাটি থেকে বিমান, সড়ক এবং রেলপথের মাধ্যমে কামাখ্যা পৌঁছোনো যায়।
রেলপথে: কামাখ্যা শহরের রেলওয়ের নাম কামাখ্যা মাতা (কামাখ্যা রেলওয়ে স্টেশন)। এখান থেকে সহজেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়।
আকাশপথে: এই এলাকার নিকটতম বিমানবন্দর গোপীনাথ বরদোলোই বিমানবন্দর। শহরের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। মন্দির যাওয়ার জন্য কলকাতা থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পাওয়া যায়।