15th Apr 2024
ভ্রমণ
তৃষা নন্দী
গরমের ছুটি পড়তে আর খুব বেশি দেরি নেই। ঠিক এমন সময় মন যদি পাহাড়-পাহাড় করে, তবে চোখবুজে চলে যেতে পারেন বরাক উপত্যকায়। জানালেন তৃষা নন্দী
নর্থ-ইস্ট শুনে নাক কুঁচকোবেন অনেকেই, তবে আস্থা রেখে একবার গেলে কিন্তু বারবার টানবে আপনাকে ব্রহ্মপুত্রে ঘেরা নীল পাহাড়ের দেশ, অসম। ট্রাইবাল সংস্কৃতি, বিহুর বোল, আ-দিগন্ত চা বাগান--- সব মিলিয়ে ভ্রমণপ্রেমীদের যথার্থই নিশ্চিন্তিপুর অসম। কেন্দ্রস্থলে জ্বলজ্বল করছে উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র কসমোপলিটল সিটি, গুয়াহাটি, দ্য লাইট অফ দ্য ইস্ট। কাছাকাছির মধ্যে রয়েছে অজস্র টুরিস্ট ডেসটিনেশন। তবে শুধু চোখের শান্তিই নয়, জিভের শান্তির জন্যও অসমের রয়েছে অঢেল ভাঁড়ার। ভেতো বাঙালিরা জেনে খুশি হবেন অসমও কিন্তু মাছ-ভাতের দেশ। চেখে দেখতে পারেন আদি ও অকৃত্রিম বেশ কিছু ডিশ, তা সে সর্ষে দিয়ে হালকা মাছের ঝোল 'টেঙ্গা'ই হোক, কলাপাতা দিয়ে রাঁধা চিকেনই হোক, বা টক ঝালের মিশেলে পর্ক।
কী কী দেখবেন:
কামাখ্যা মন্দির- গুয়াহটির পশ্চিম প্রান্তে ৫১ সতীপীঠের এক পীঠ হল এই কামাখ্যা। পুরাণ অনুসারে, সতীর যোনি পড়েছিল এখানে। তবে শুধু ধর্মচর্চাই নয়, ইতিহাস ও স্থাপত্যের মেলবন্ধনের সাক্ষীও এই কামাখ্যা।
উমানাদা মন্দির- ব্রহ্মপুত্র নদে ঘেরা পিকক আইল্যান্ডে শিবের উপাসনার জন্য নির্মিত এই মন্দিরটি। চারপাশে জলে ঘেরা এই পিকক আইল্যান্ডের সৌন্দর্যের টানে যেতেই পারেন।
হাজো- হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মের একাধারে সংমিশ্রণ ঘটেছে এখানে। রয়েছে অজস্র মন্দির-মসজিদ।
হাফলং- যেন বিশাল এক ক্যানভাসে আঁকা শৈলশহর! পাহাড়ের উপর থেকে নীচের দিকে তাকালে রামধনু দেখা যায়। হাফলং থেকে মাত্র ন'কিমি দূরে পরিযায়ী পাখিদের অস্বাভাবিক মৃত্যুস্থল জাটিঙ্গা।
আসাম স্টেট মিউজিয়াম- গুয়াহাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অসমিয়া সংস্কৃতি ও ইতিহাস চর্চার ধারক এই মিউজিয়ামটি।
সুয়ালকুচি- গুয়াহাটি শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অসমিয়া হস্তশিল্পের খনি সুয়ালকুচি। ছোট্ট এই জনপদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে বাঁশের তৈরি তাঁত। অসমিয়া মেখলা, সিল্কের শাড়ি, চাদর এসব তো পাবেনই, সঙ্গে বাড়তি পাওয়া নীল পাহাড়ের সৌন্দর্য।
মাজুলি দ্বীপ- ব্রহ্মপুত্র নদের ঠিক মাঝে অবস্থিত মাজুলি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী-দ্বীপ। অজস্র তীর্থক্ষেত্র এবং বন্যজন্তু দেখতে পাবেন।
তেজপুর- শোণিতপুর জেলায় অবস্থিত তেজপুর
অসমের অন্যতম আর্কিওলজিক্যাল সাইট। তবে তেজপুরকে অনেকে চেনেন ভালোবাসার শহর নামেও। ভগবান কৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের সঙ্গে রাজকুমারী উষার প্রণয়গাথা আজও চর্চিত হয় তেজপুরের আকাশে-বাতাস। অরুণাচলী পাহাড়ে ঘেরা, ব্রহ্মপুত্রের ঢেউ, পাহাড়ের ঢালের চা-বাগান সব মিলিয়ে তেজপুর আসামের অন্যতম সেরা হানিমুন স্পট। দোকায় নিভৃতে সময় কাটাতে অনেকেই ফিরে ফিরে যান এই রোম্যান্সের শহরে।
জোড়হাট- চায়ের চুমুকে দার্জিলিং না আসাম
বলে দিতে পারেন যাঁরা, তাঁদের তীর্থক্ষেত্র এই জোড়হাট। শুধু চা চাষই নয়, দেশের সবচেয়ে বড় চা গবেষণাগারটিও কিন্তু এখানেই। তবে শুধু কাপ বা গ্লাসেই নয়, সবুজে ছাওয়া চা- বাগানের সৌন্দর্য চোখ আর মনের তৃষ্ণাও কিন্তু মিটিয়ে দেবে।
শিবসাগর- ছ'শতকেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করা অসমের অহম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু এই শিবসাগর। ইতিহাসপ্রেমীদের বরাবরের পছন্দের জায়গা।
ডিব্ৰুগড়- ভারতের চা-রাজধানী ডিব্রুগড়। তবে পর্যটনপ্রেমীরা বলেন, ব্রহ্মপুত্রের আসল রূপ দেখতে হলে আসতেই হবে ডিব্রুগড়ে। বেড়াতে গিয়ে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে মজে যান যাঁরা, ডিব্রুগড় তাঁদের পছন্দের জায়গা। ট্রেকিং, মাউন্টেনিয়ারিং, ক্যাম্পিং-- কী নেই অ্যাডভেঞ্চারের তালিকায়!
উত্তর কাছাড়- শহরের কোলাহল, টুরিস্ট প্লেসের ব্যস্ততা থেকে অনেক দূরে শান্তিতে খানিকটা নিভৃত সময় কাটানোর জায়গা। ঘন সবুজ পাহাড়, ইতিউতি পাহাড়ি নদীর ছটফটানি, পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা, প্রাচীন জনজাতিদের আদিম জীবনযাপন আপনার হলিডে চিরকালীন করে রাখবে।
বরাক উপত্যকা- নিঃসন্দেহে বরাক ভ্যালিই অসমের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। অসমকে তো বলাই হয় বরাক ভ্যালির দেশ। বরাক আর কুশিয়ারা নদী দিয়ে ঘেরা বরাকের আকর্ষণ অমোঘ। ভুবন মন্দির, করিমগঞ্জ, বদরপুর ফোর্ট, হাইলাকান্দি, সিদ্ধেশ্বর মন্দির, আদি কালীমন্দির আরও বেশ কিছু কাছাকাছি স্পট ঘুরে আসতে পারেন। কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক- বিভিন্ন জন্তুর সমাহার হলেও মূলত একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্যই এখানে যাওয়া যেতে পারে।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ওয়াহাটি বিমানযোগ রয়েছে। হাওড়া থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত অজস্র ট্রেন রয়েছে। সময় লাগে প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টা। শিয়ালদহ থেকে রয়েছে সকাল ৬.৩৫ মিনিটে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। কলকাতা স্টেশন থেকে রয়েছে রাত ৯.৪০ মিনিটে কলকাতা গুয়াহাটি গরিবরথ এক্সপ্রেস।
যোগাযোগ: অসম টুরিজম অসম হাউস ৮ রাসেল স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০৭১ ফোন- ০৩৩ ২২২৯৫০৯৪ ওয়েবসাইট- tourism.assam.gov.in