29th Jun 2024
স্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
অন্যান্য সব ঋতুতে যতটা ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, বর্ষাকালে সেই প্রয়োজনীয়তা একটু হলেও বেশি। একে তো সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, তার ওপর বর্ষার নোংরা জল থেকে ত্বকের সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। বর্ষার কাদাজলে মিশে থাকা ধুলো-বালি খুব সহজেই ত্বকের রন্ধ্রে প্রবেশ করে অ্যাকনে, ইনফেকশন ইত্যাদি সমস্যার সূত্রপাত ঘটায়। তাছাড়া বর্ষাকালে আমাদের শরীরের ইমিউনিটিও খানিকটা দুর্বল থাকায়, সহজেই বিভিন্ন সমস্যাগুলোয় ত্বক রিঅ্যাক্ট করে। শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও প্রবল হয়ে দেখা দেয়।তাই বর্ষাকালে ত্বক তথা পুরো শরীরেরই যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। ধরন বুঝে যত্ন নিন...
বর্ষাকালের আবহাওয়া বেশ কনফিউজিং। কারওর ক্ষেত্রে ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যায়, তো কারওর ক্ষেত্রে রুক্ষতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হয়তো বছরের অন্যান্য সময় ত্বকের ধরন সম্পূর্ণ অন্যরকম থাকে। কিন্তু বর্ষার আগমনে সেও যেন হঠাৎ ভোল পালটে ফেলে। তাই যত্ন নেওয়ার আগে ত্বকের ধরন বুঝে নিন।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে:
শুধুমাত্র বর্ষাকাল বলেই নয়, ত্বকে পর্যাপ্ত ভিটামিনের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়াতেও যদি ত্বক রুক্ষ লাগে, তবে সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা যে কোনও মরশুমেই জরুরি। আবার যদি আপনার ত্বক স্বাভাবিকভাবেই রুক্ষ হয়, সেক্ষেত্রে বর্ষায় তা আরও বেড়ে যেতে পারে। দু'ক্ষেত্রেই কিন্তু ত্বক ভাল রাখতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।
* প্রচুর জল খান। শরীর আর্দ্র রাখার জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর কিছু নেই।
* ক্রিম বেসড বা অয়েল বেসড ক্লেনজ়ার ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন।
* মুখ ধোওয়ার পর ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এতে ত্বকের আর্দ্রতা সঠিক থাকবে এবং ত্বকও কোমল দেখাবে।গোলাপজল এবং গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণে মিশিয়ে প্রতিদিন শুতে যাওয়ার আগে লাগিয়ে নিন। এতেও ত্বক স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরে পাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে:
অতিরিক্ত রুক্ষতাও যেমন ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক, তেমনই অতিরিক্ত তৈলাক্তভাবও অ্যাকনে এবং নানা ধরনের ইনফেকশনের কারণ হতে পারে, বিশেষত বর্ষাকালের আবহাওয়ায়।
* প্রতিদিন অন্তত ৩-৪বার মুখ ধোওয়ার চেষ্টা করুন। এতে অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দূর হবে। তবে যদি এতে ত্বক শুষ্ক লাগে তবে মুখ ধোওয়ার পরিমাণ কমান।
* যেহেতু তৈলাক্ত ত্বক, তাই অল্পেই ত্বকের রন্ধ্র আটকে অ্যাকনে দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন স্ক্রাবার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের ওপরে জমা মৃতকোষের স্তর দূর হবে এবং ত্বকও উজ্জ্বল দেখাবে। তবে কেমিক্যালযুক্ত স্ক্রাব নয়, প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া স্ক্রাব ব্যবহার করুন।
* হালকা গরমজলে মুখ ধুতে পারেন। এতেও ত্বকের তৈলাক্তভাব কমবে।
মিশ্র প্রকৃতির ত্বকের ক্ষেত্রে:
মিশ্র প্রকৃতির ত্বক বলে আলাদা যত্ন নেওয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন। শুষ্ক অংশের জন্য আলাদা এবং তৈলাক্ত অংশের জন্য আলাদা যত্ন নিন।
স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে:
ত্বক স্বাভাবিক হলেও, তা সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন।
* পর্যাপ্ত জল খেতে ভুলবেন না।
* প্রতিদিন ২-৩ বার মুখ পরিষ্কার করুন। তোয়ালে চেপে অতিরিক্ত জল শুকিয়ে নিন।
* প্রতিদিন ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন।
* সপ্তাহে একবার বা দু'বার স্ক্রাবিং করুন।
এ তো গেল সাধারণ যত্নের পরামর্শ।তবে ত্বকে আলাদা করে কোনও সমস্যার উদ্রেক হলে, তার জন্য আলাদা যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ইনফেকশন, র্যাশ, অ্যাকনে ইত্যাদির তো বর্ষাকালে পোয়া বারো! তাই এদের কাবু করতেও রইল কিছু বিশেষ যত্নের পরামর্শ।
অ্যাকনে থেকে বাঁচতে: তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা এমনিই সারাবছর অ্যাকনের সমস্যায় জেরবার হন। আর বর্ষাকালে শুধু তৈলাক্ত ত্বকই নয়, অন্যান্য ত্বকের ক্ষেত্রেও অ্যাকনে অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই অ্যাকনে নির্মূল করতে রইল বিশেষ কিছু টিপস।
* নিম এবং টি-ট্রি অয়েল অ্যাকনের যম। এই দুই উপাদানের একটাও হাতের কাছে থাকলে আর চিন্তা করবেন না। মূলত ব্যাক্টিরিয়াঘটিত কারণেই অ্যাকনে দেখা দেয় বলে, এই দু'টি উপাদানই খুব কার্যকরী। নিমপাতা বেটে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। অথবা দু'-এক ফোঁটা টি-ট্রি অয়েল মেশানো জলে মুখ ধুতে পারেন বা টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ফেস স্টিমিংও অ্যাকনে কমানোর খুব ভাল উপায়। এতে ত্বকের রন্ধ্রের মুখ খুলেযায় এবং ভিতরে থাকা ময়লা বেরিয়ে আসে। তাই শুধু অ্যাকনেই নয়, ত্বকের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করতেও স্টিমিং খুব ভাল উপায়। সপ্তাহে একদিন ধোঁয়া ওঠা গরম জলের পাত্রের ওপর ১০-১৫ ইঞ্চির গ্যাপে মুখ রেখে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন। অন্তত ১০ মিনিট এভাবে রাখুন। এতে ত্বক ভাল থাকবে।
* ব্রাউন শুগারও অ্যাকনের ক্ষেত্রে স্ক্রাবার হিসেবে খুব ভাল। অল্প মধু এবং ব্রাউন শুগার মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।
* আলুর রসও অ্যাকনে প্রতিরোধে সাহায্য করে। আলু থেঁতো করে কিংবা রস বের করে তা অ্যাকনের ওপর লাগাতে পারেন। সারারাত রেখে দিন। উপকার পাবেন।
স্কিন র্যাশের সমস্যায়: অ্যাকনের থেকে বেশ কিছুটা আলাদা, তবে এক ধরনের স্কিন ইনফেকশনই বটে। বর্ষার নোংরা জল লেগে পায়ে, গলায়, ঘাড়ে বা মুখে র্যাশ বেরতেই পারে। প্রয়োজন শুধু সঠিক প্রতিকারের।
* র্যাশ মানেই সঙ্গে চুলকানিভাব থাকবেই এবং তা থেকে র্যাশ আরও ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সেদিকে খেয়াল রাখুন। র্যাশ যতটা সম্ভব কম ছোঁওয়ার চেষ্টা করুন।
* ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এতে নানা রকম উপাদান থাকে যা স্কিন র্যাশ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
* হালকা কটন বা লিনেনর পোশাক পরুন। টাইট পোশাক থেকে ঘষা লেগে র্যাশ আরও বেড়ে যেতে পারে।
* কেমন গোলাপজল, অ্যালো ভেরা, দুধ ইত্যাদি স্কিন র্যাশের সমস্যায় খুব উপকারী। ফেসপ্যাকে মিশিয়ে দেখতে পারেন।
* অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল বা অ্যান্টি-ফাংগাল সাবান ব্যবহার করতে পারেন।
ইনফেকশন এবং দুর্গন্ধ: এটিও বর্ষাকালের অন্যতম সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা শরীরের অন্যান্য অংশের থেকেও পায়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। বন্ধ জুতো কিংবা ভিজে পায়ে অনেকক্ষণ থাকা— কারণ যাই হোক, সমস্যা এড়াতে গেলে কিছুদিকে নজর দিন।
* অনেকক্ষণ বন্ধ বা টাইট জুতো পরে থাকবেন না। হাওয়া চলাচল করতে পারে এমন জুতো পরুন।
* সপ্তাহে অন্তত একদিন ফুট সোক নেওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব না হলে পা ভালভাবে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। স্নানের আগে ফুট স্ক্রাবার দিয়ে ভালভাবে ঘষে ধুয়ে নিন।
* অতিরিক্ত ঘাম হলে অ্যান্টি- ব্যাক্টিরিয়াল পাউডার ব্যবহার করুন। এতে দুর্গন্ধও হবে না এবং পাউডার ঘামও শুষে নেবে। স্নানের জলে এসেনশিয়াল অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন।
* চন্দনও এক্ষেত্রে খুব কার্যকরী। ই দু'চামচ চন্দনগুঁড়ো এবং পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে, পায়ে লাগাতে তা পারেন। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* জুতোর দুর্গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডা, অ্যালকোহল বা ফেলে দেওয়া টি ব্যাগ জুতোর ভিতর ভরে রাখুন।
টিপস
* যতই মেঘলা আবহাওয়া থাকুক, দিনের বেলা মানেই সূর্যের আলো রয়েছে। সুতরাংসানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বেরবেন না।
* অ্যালকোহল-ফ্রি টোনার ব্যবহার করুন। এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়বে না।
* ভারি মেক-আপও বর্ষাকালে নৈব নৈব চ। যতটা সম্ভব কম মেক-আপ করুন। ব্লিচিংও যতটা সম্ভব কম করুন।
রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে মিল্কক্রিম বা দুধের সর লাগাতে পারেন।
* বাড়ি ফিরেই ঈষদুষ্ণ জলে হাত, মুখ, পা ধুয়ে ফেলতে পারলে খুব ভাল।
* কোনও স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট বা কৃত্রিম গয়না, যা আপনি সচরাচর ব্যবহার করেন না, তাই নিয়ে এই মরশুমে এক্সপেরিমেন্ট করতে যাবেন না। যে কোনও সময় স্কিন রিঅ্যাক্ট করতে পারে।