14th Oct 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

বাবা-মায়ের বদভ্যাসই সন্তানের ডায়াবেটিসের কারণ...

30th Jul 2024

স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি


বিশেষজ্ঞ ড. মাটিয়াস রিডেল বলেন, 'আমার কাছে এটা একটা মাইলফলক। এটা স্পষ্ট, যে ডায়াবেটিস নিরাময় করা সম্ভব। আগের মতো এই রোগকে আর নিয়তি হিসেবে মেনে নিতে হবে না।' ইংল্যান্ডের এই গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, রোগ দেখা দেওয়ার পর প্রথম ৬ মাসের মধ্যে শুধু ওজন কমিয়েই সেটি নিরাময় করা সম্ভব। তাতে কোনও ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। এক পরীক্ষার আওতায় খাদ্য তালিকার অত্যন্ত কড়া নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীদের খেতে দেওয়া হয়েছিল। তিন মাস ধরে তাঁদের দিনে শুধু ৯০০ ক্যালোরি পরিমাণ নিউট্রিশন শেক খেতে হয়েছে। সেইসঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা তাঁদের কাউন্সেলিং করেছেন। বেশ কিছু ব্যায়ামও করতে হয়েছে। যার ফল ছিল বেশ চমকপ্রদ।

যাঁরা ৭ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন কমাতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৭ শতাংশ মানুষ পুরোপুরি ডায়াবেটিস ট্যাবলেট ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। যাঁরা ১৫ কিলো ওজন কমাতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ এই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছেন। ড. মাটিয়াস রিডেল এ বিষয়েও বলেন, 'এই গবেষণা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। ডাক্তার ও রোগিদের নতুন করে ভাবতে হবে। সারাজীবন ধরে ট্যাবলেট ও ইনসুলিন গ্রহণ না করেও রোগ নিরাময় সম্ভব।'

ডিয়র্ক ফন গ্রুবে নিজের ওজন কমিয়ে ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের উপর নির্ভরতা কাটাতে পেরেছেন। আগে তিনি সব সময়ে কিছু না কিছু খেয়ে যেতেন। প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও তার মাঝে মিষ্টি জাতীয় খাবার। এভাবে তিনি মোটা হতে হতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। ড. মাটিয়াস রিডেল এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে বলেন, 'শরীরের ইন্দ্রিয়গুলি ও পেটে মেদের আধিকাই ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ। যত বেশি চর্বি, ততবেশি ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। ইনসুলিনের প্রয়োজন যত বাড়ে, ততবেশি মেদ জমা হয়। এই দুষ্টচক্র অনেক মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই সেই চক্র ভেঙে দিতে হবে।'

শরীর কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে পরিণত করে। প্যানক্রিয়া বা অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপাদন করে, যা রক্ত থেকে শর্করা শরীরের কোষে পাঠায়। এভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে। অতিরিক্ত চিনি খেলে কোষগুলি ইনসুলিন প্রতিরোধ করতে শেখে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে অগ্ন্যাশয়ের উপর বেশি চাপ পড়ে। কোনও একসময় ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায়। তখন শর্করা আর রক্ত থেকে কোষের মধ্যে যায় না। সেই শর্করা ভাঙতে তখন ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দিতে হয়। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ড. ক্রেনাগার বলেন, 'ওজন যত বেশি হবে, ইনসুলিনের প্রভাব তত খারাপ হবে। অর্থাৎ আমি ওজন কমানোর চেষ্টা না করলে আমার শরীরের মধ্যের ইনসুলিনের প্রভাবের আরও অবনতি হয়। এমনকি আমি ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিলে তার প্রভাবও খারাপ হয়। ফলে সহজেই ওজন বাড়তে থাকে।' ডিয়র্ক ফন গ্রুবে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে নিজের খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছিলেন। এভাবে তিনি ২৩ কিলো ওজন কমিয়েছিলেন। ফলে তিনি ওষুধ খাওয়াও অনেক কমাতে পেরেছিলেন। ড. রিডেল তাঁকে মনে করিয়ে দেন, 'যখন আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন, তখন অনেক ইঞ্জেকশন নিতে হত। আর এখন সামান্য কিছু ট্যাবলেট খেতে হয়। এমনটা অব্যাহত থাকলে আরও উন্নতি হবে।'

বাবা-মায়ের বদভ্যাসই সন্তানের ডায়াবেটিসের কারণ...

অতিরিক্ত ওজন ও ডায়াবেটিস আজকের প্রজন্মের জন্য একটা বড় সমস্যা। কিন্তু এর জন্য কি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারাই দায়ী? নাকি কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে জিনের মাধ্যমেও পেতে পারে? জার্মান বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। আমরা তো সবাই জানি, এটা একটা মহামারির মতো। গোটা বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগছে। এই প্রবণতা দ্রুত বেড়ে চলেছে। আমরা এও জানি, অতিরিক্ত ওজন ও অনিয়মিত জীবনযাত্রা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর পেছনে অন্য কারণও কাজ করছে। মিউনিখ শহরে হেল্মহলৎস সেন্টারে গবেষকরা সেই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছেন। তাঁরা পরীক্ষা চালাচ্ছেন, ইঁদুরের উপর। ইঁদুর সবচেয়ে উপযুক্ত প্রাণি। তাদের মেটাবলিজম অনেকটা মানুষের মতোই কাজ করে। মোটা ও রোগা ইঁদুর ঠিক মানুষের মতোই রোগে ভোগে। এমনকি তাদের ডায়াবেটিসও হয়। কিছু মোনোভুলার যমজের মতো এই ইঁদুরদের শরীরে একই জিন রয়েছে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকলে তার কারণ জেনেটিক হতে পারে না। গবেষকরা ৬ সপ্তাহ ধরে ইঁদুরদের হাই-ক্যালোরি খাদ্য দিচ্ছেন। মানুষের মতই এমন ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য খেয়ে তারা মোটা হয়ে যাচ্ছে এবং ডায়াবেটিসের আগের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ইঁদুররা এই বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে। জিনের মাধ্যমে এমন হস্তান্তর একমাত্র ডিম্বাণু ও বীর্যের মাধ্যমে ঘটতে পারে। স্থূলকায় বাবা- মার অন্য সব প্রভাব এড়াতে কৃত্রিম প্রজননের জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করছেন।

২৪ ঘণ্টা পর ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় ডিম্বকোষের বিভাজন ঘটে গেছে। গবেষকরা ইঁদুরের ভ্রূণ সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করছেন। এই সারোগেট মায়েদের স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভালো এবং তারা রোগা। তারা শুধু তাদের গর্ভে ইঁদুরশিশু ধারণ করে না, জন্মের পর শিশুদের দেখাশোনাও করে। ইঁদুর শিশুদের প্রতিপালনের কাজে তাদের মোটা বাবা-মায়েদের আর কোনও ভূমিকা থাকে না। এমনকি খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রেও তারা ভুল আদর্শ হয়ে উঠতে পারে না। এ বিষয়ে ইয়োহানেস বেকার্স বলেন, 'বাবা-মার সঙ্গে সামাজিক স্তরে যোগাযোগের কারণে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের সম্ভাবনা যে নেই, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারলাম। জরায়ু অথবা মায়ের দুধ পান করার প্রক্রিয়াও কোনও প্রভাব ফেলে না। পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়াও এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে হস্তান্তর হয় না। অর্থাৎ এ সব থেকে বোঝা যাচ্ছে, যে পরবর্তী প্রজন্মে যে পরিবর্তন ঘটছে, তা 'জার্ম ট্র্যাক সেল'-এর তথ্যের উপর নির্ভর করে।' গবেষকরা এই ইঁদুর শিশুদের বিকাশের উপর কড়া নজর রাখছেন এবং রোগা বাবা-মায়েদের সন্তানদের সঙ্গে তাদের তুলনা করছেন। সব শিশুদেরই একই খাবার দেওয়া হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যে এই ইঁদুরদের জিনগতভাবে প্রায় একই কাঠামো রয়েছে। একই পরিবেশে তারা বড় হয়েছে। একমাত্র তফাৎ হল, তাদের আসল বাবা-মায়েরা হয় মোটা অথবা রোগা। অথচ এই বিষয়টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোটা ইঁদুরদের বংশধররা রোগা ইঁদুরদের বংশধরদের তুলনায় অনেক দ্রুত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হল। অর্থাৎ নিশ্চয় বংশানুক্রমেই তারা এই প্রবণতা পেয়েছে। বাবা-মায়েরা ভুল খাবার খেয়ে এমন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বাবা এবং মা ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত ওজনের প্রবণতা তাদের সন্তানদের শরীরে হস্তান্তর করেছে। ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য জিনের রেগুলেশন পরিবর্তন করে পরবর্তী প্রজন্মের শরীরে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। অতএব ডায়াবেটিসের দ্রুত প্রসারের কারণ বোঝা যায়।

Archive

Most Popular