2nd Sep 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
দেবী কৌশিকীর চার হাত, দুই দক্ষিণ হাতে খট্বাঙ্গ ও চন্দ্রহাস আর দুই বাম হাতে চর্ম ও পাশ। গলায় নরমুন্ড, দেহ ব্যাঘ্রচর্মে আবৃত। দীর্ঘদম্ভী, রক্তচক্ষু, বিস্তৃত মুখ ও স্থুল কর্ণ। কালীর বাহন মস্তক বিহীন শব। দেবী কালিকার দশমহাবিদ্যা রূপের অন্যতম রূপ তারা। বামা কালীর মতো তিনি বাম পা শিবের বুকে রেখে দণ্ডায়মান। দেবী অবশ্য খর্বা, লম্বোদরী, ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা। চতুর্ভুজা-- খড়্গ, কর্তৃকা, নীল পদ্ম ও সমুন্ড খর্পর। দেবী পিঙ্গলবর্ণা, একজটাধারিণী। ত্রিনয়না, করালবদনা, হাস্যমুখী, ভীষণদন্তা। বিশ্বব্যাপী জলের মধ্যে শ্বেত পদ্মের উপর অবস্থিতা। দেবীর পুজো তিন ভাবে-- ব্রহ্মজটা, উগ্রতারা, নীল সরস্বতী।
পুরাণে বর্ণিত চোলা হ্রদে এই দেবীর সৃষ্টি। সেই হ্রদ আজকের বঙ্গোপসাগর। এই দেবীর প্রথম সাধক বশিষ্ঠ মুনি। এখনকার তারা দেবীর মূর্তি এবং বশিষ্ঠদেবের কল্পিত বা দর্শিত তারা-মূর্তিতে ভিন্নতা আছে। বশিষ্ঠদেবের বর্ণনায় বলা হয়েছে, দেবী দ্বিভুজা, সর্পময় যজ্ঞোপবীতভূষিতা। বাম কোলে স্বয়ং মহাদেব, পুত্ররূপে। সমুদ্রমন্থনে হলাহল পানে শিব যখন নীলকণ্ঠ হয়ে বিষের জ্বালায় জর্জরিত, তখন মাতৃরূপে দেবী তাঁর স্তনদুগ্ধ পান করান দেবাদিদেবকে।
কে এই দেবী?
মার্কণ্ডেয় পুরাণমতে, মহিষাসুরের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ট ছিলেন, তখন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। কিন্তু পরে শুম্ভ- নিশুম্ভের অত্যাচারে দেবতারা ফের অতিষ্ঠ হন। তখন সকলে পার্বতীর স্মরণাপন্ন হলে দেবতাদের রক্ষা করতে মা মহামায়া এক দেবীমূর্তির জন্ম দেন। তিনিই তারা। শোনা যায়, এই তিথিতেই কৌশিকী রূপে মা তারা শুম্ভ- নিশুম্ভ দমন করেছিলেন।
কৌশিকী অমাবস্যা এবং তারাপীঠ:
কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতে তারাপীঠ মহাশ্মশানে থাকা শ্বেত শিমূল গাছের তলায় বসে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক বামাক্ষ্যাপা। মা তারা স্বয়ং মহাশ্মশানে এসে তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন। তাই সবাই এই দিন তারাপীঠ মহাশ্মশানে উপস্থিত থাকতে চান।
তারপীঠের বিশেষ ভোগ:
কৌশিকী অমাবস্যায় মায়ের একবার মধ্যাহ্ন ভোগ হয় আর একবার নিশিথে ভোগ হয়। মধ্যাহ্ন ভোগে পোলাও, অন্ন, পাঁচ রকম ভাজা, খিচুড়ি, নানান ধরনের তরিতরকারি দেওয়া হয়। যেহেতু এটা তন্ত্রপীঠ তাই মাছ রাখা হয়, সঙ্গে কারণবাড়ি; এই সমস্ত জিনিস দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় মাকে লুচি, সুজি, পায়েস, নানা রকম মিষ্টান্ন-ভাজা দিয়ে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। রাতে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয় এবং মন্দিরের ভেতর যে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়, সেই বলির পাঁঠার মাংস মাকে ভোগ দেওয়া হয়।
পুজোর সময়:
এ বছর কৌশিকী অমাবস্যা শুরু হচ্ছে বাংলার ১৫ ভাদ্র রবিবার ভোর ৫ টা ০৭ মিনিটে। থাকবে ১৭ ভাদ্র মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত।
কী কী বিশেষ আচার করতে পারেন এইদিন?
১.অমাবস্যার সন্ধ্যায় বাড়ির প্রধান দরজার বাইরে তিলের তেলের দুটি প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি অশ্বথ গাছের তলায় সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালাতেও বলা হয়।
২.এই দিন সূর্যাস্তের পূর্বে জোড়হাতে সাতবার অশ্বথ গাছকে প্রদক্ষিণ করলে আশীর্বাদ করেন পূর্বপুরুষরা।
৩.ভোরবেলা গঙ্গা বা পবিত্র কোনও জলাশয়ে স্নান করে তর্পণ করার পাশাপাশি দরিদ্রদের দান করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে অত্যন্ত খুশি হন পূর্বপুরুষরা। পিতৃ দোষও দূর হল বলে বিশ্বাস।
৪.অমাবস্যার দিন আপনার বাড়িঘর খুব সুন্দর ভাবে পরিষ্কার রাখুন। ওই দিন যেন বাড়ি অপরিষ্কার না থাকে, সে দিকে নজর রাখবেন। কোনও এঁটো বাসনপত্র যেন না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। কোনও পুরনো, ছেঁড়া জামাকাপড় থাকলে, সেগুলি কাউকে দিয়ে দেবেন বা ফেলে দেবেন। শুধু বাড়িই নয়, বাড়ির সামনের উঠোনও পরিষ্কার রাখবেন।
৫.আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যায় সন্ধ্যাবেলায় একটি কুয়ো বা একটি গর্তে এক চামচ দুধ ঢালুন। তাতে আপনার জীবনের সমস্ত বাধাবিপত্তি দূর হয়ে যাবে।
৬.একটি শুকনো নারকেল, অর্থাৎ নারকেলের ভিতরে জল যেন না থাকে, এমন নারকেল নিয়ে তার এক দিকে ফুটো করে সে ফুটো দিয়ে চিনি পুরে দিন ভিতরে। এ বার ওই অবস্থায় নারকেলটিকে নিয়ে গিয়ে বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে কোথাও পুঁতে দিন।