10th Feb 2025
প্রতিবেদন
সুস্মিতা মিত্র
জামদানি শব্দটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে। ফার্সিতে জামা শব্দটির অর্থ কাপড় এবং দানা শব্দটির অর্থ বুটি। অর্থাৎ জামদানি কথার পুরোপুরি অর্থ হলো বুটি দার কাপড়। একারণে মনে করা হয় মুসলমানেরাই ভারত উপমহাদেশে জামদানির প্রচলন ও বিস্তার করেন। আরেকটি মতে, ফারসিতে জাম অর্থ এক ধরনের উৎকৃষ্ট মদ এবং দানি অর্থ পেয়ালা। মূলত জাম পরিবেশন কারীর পরনের মসলিন থেকেই জামদানি নামের উৎপত্তি ঘটেছে। জামদানি শাড়িতে বুননের মাধ্যমেই নক্সা ফুটিয়ে তোলা হয়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম নকশা অনুযায়ী জামদানীর নানাবিধ নাম থাকে। যেমন তেরছা, জল পাড়, পান্না হাজার, করোলা, দুবলা জাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলা ফুল, আঙ্গুর লতা, ময়ূরপ্যাচ পাড়, বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা, বুটিদার, ঝালর, ময়ূর পাখা, পুঁই লতা, কল্কা পাড়, কচুপাতা, প্রজাপতি, জুঁই বুটি, হংস বলাকা, শবনম, ঝুমকা, জবাফুল ইত্যাদি।
পুরাতন ইতিহাসে জামদানির উল্লেখ:
আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে, পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি বইতে এবং বিভিন্ন আরব, চীন ও ইতালীর পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনাতে জামদানির উল্লেখ পাওয়া যায়। যোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংরেজ পর্যটক র্যালফ ফিচ ও ঐতিহাসিক আবুল ফজল ও ঢাকার মসলিনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
কারুকার্যের ধরন:
পাতলা বুননে তৈরি কাপড়ের ওপর করা কারুকার্য গুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় মুঘল ও পারস্যের শিল্প রীতির প্রভাব চোখে পড়বে। কারণ এই সময়েই জামদানি ও মসলিন কাপড়ের চাহিদা তুঙ্গে ছিল।আরো বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হলেও বাংলাদেশের ঢাকা কেই এর আদি জন্মস্থান বলে ধরে নেওয়া হয়। এই অঞ্চলের সোনারগাঁও, তিঁতাবাড়ি, ধামরাই, বাজিতপুর ইত্যাদি অঞ্চল এই কাপড় উৎপাদনের জন্য শীর্ষে ছিল প্রথম থেকেই।
জামদানি শাড়িতে নকশার বেশিরভাগই জ্যামিতিক, উদ্ভিদ এবং ফুলের নকশার। এবং বলা হয় যে এর উৎপত্তি হাজার হাজার বছর আগে থেকে। একসময় শুধুমাত্র অভিজাত এবং রাজপরিবারের মহিলারাই এই ধরনের বিলাসবহুল শাড়ি কিনতে সক্ষম ছিলেন।তবে জামদানি শাড়িতে কখন থেকে ফুলের নকশার প্রচলন শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। তবে এটা নিশ্চিত যে মুঘল আমলে, সম্ভবত সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) অথবা সম্রাট জাহাঙ্গীরের (১৬০৫-১৬২৭) রাজত্বকালে, এই আকৃতির বা ফুলের মসলিন জামদানি নামে পরিচিতি লাভ করে।
জামদানি শাড়ি আমাদের দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য। আমাদের উচিত নিজস্ব এই সংস্কৃতিকে বাচিয়ে রাখা।