2nd Apr 2024
স্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
"বড়ো গরম! ভারি গরম! ঠাণ্ডা সরবত আনো।
হাত পা কেমন করছে ছনছন! জোরে পাখা টানো”
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর এই কথাগুলো যেন এপ্রিলের শুরুতেই প্রতিটি পশ্চিমবঙ্গবাসীর মুখে মুখে। বৈশাখ নয়, চৈত্রের শেষেই গরমের দাপটে নাজেহাল আপামর বাংলা। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, চলতি এপ্রিল ও আগামী মে-জুন মাস নাগাদ গরমের তীব্রতা আরও বাড়বে। প্রবল তাপপ্রবাহের শিকার হবে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষও। তাপমাত্রা বেড়ে হতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে প্রতিদিনের জীবনযাপনে এই দাবদাহ থেকে নিজেকে সুস্থ রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখবেন চলুন দেখে নিই।
বিপদের লক্ষণ:
মাথাঘোরা, দুর্বল লাগা, গা বমি বমি ভাব, সাময়িক জ্ঞান হারানো, জ্বর জ্বর ভাবও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও আরও দু'টি বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। হিটস্ট্রোক এবং মাসল ক্র্যাম্প।
হিটস্ট্রোক
সাধারণভাবে ভাবা হত হিটস্ট্রোকে বয়স্ক মানুষজনই আক্রান্ত হতে পারেন, সেই ধারণা আজ ভ্রান্ত। বরং যে-কোনও বয়সের মানুষ এর শিকার হতে পারেন। দীর্ঘক্ষণ রোদে একটানা কাজ করলে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে।
লক্ষণ:
দুর্বল ভাব, ঝিমিয়ে পড়া, অসংলগ্ন কথা, খিঁচুনি এমনকী মৃত্যু।
এই অবস্থায় দ্রুত রোগীকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিন। ঘরের পাখা, এসি চালিয়ে দিতে হবে। তাঁর শরীর থেকে জামা-কাপড় সরান। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে গা মুছিয়ে দিন। পারলে তাঁকে জলপান করান। এরপর দ্রুত হাসপাতালে আনুন। এতেই রোগীর প্রাণ বেঁচে যাবে।
সাবধানতা:
অল্প এবং মাঝারি বয়সিদের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ না করা, বাচ্চা ও বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাইরে যথাসম্ভব না বেরোনো।
মাসলক্রাম্প:
গরমকালে ঘাম ও ইউরিনের মাধ্যমে শরীরের জল বেরিয়ে যায় এ আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আরও বেশকিছু পদ্ধতিতে আমাদের শরীরের জল বেরিয়ে যায় যা আমরা দেখতে পাই না, একে এককথায় insensible water loss বলা হয়। যেমন, আমাদের ফুসফুস থেকে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ও ত্বকের সাহায্যে জল বেরোয়। এই গরমে প্রচণ্ডভাবে শরীরে জলের ঘাটতি হতে থাকে যার প্রভাব প্রথমেই পড়ে আমাদের মাংসপেশিতে।
লক্ষণ:
মাংশপেশির ফোলা ভাব, কোষের ক্ষয় এবং শেষে পেশিতে অসম্ভব ব্যথার শুরু।
সাবধানতা:
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান, সঠিক মাত্রায় ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই গ্রহণ।
জলের পরিমাণ: প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কমপক্ষে ৩-৪ লিটার আর শিশুদের ২-৩ মিলি লিটার। তবে কিডনির সমস্যা থাকলে কতটা জল খেতে হবে তার জন্য ডাক্তার পরামর্শ খুব জরুরি।
কীভাবে সুস্থ থাকবেন?
১। হালকা সুতির পোশাক, সানগ্লাস, ছাতা বা টুপির ব্যবহার করতে হবে।
২। শরীরে জলের ঘাটতি এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে।
৩৷ যাঁরা রোদের তীব্রতার মধ্যেও বাইরে কাজে বেরোচ্ছেন তারা যদি ORS বা নুন-চিনি মেশানো এক বোতল জল সঙ্গে নিয়ে বেরোতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
৪। গরমে বাইরে থেকে বাড়িতে আসবার পর নুন-চিনির জল, ডাবের জল, বাটার মিল্ক, ফলের রস খাওয়া যেতে পারে।
৫। শরীরে জলের পরিমাণ এবং ভিটামিনের মাত্রা ঠিক রাখে এমন ফল যেমন শসা, তরমুজ, জামরুল, লেবু, আপেল, কলার সঙ্গে ফাইবার জাতীয় মরশুমি ফল খাওয়া যেতে পারে।
৬। দুপুরের ও রাতের খাবারের সঙ্গে টকদই রাখলে ভাল হয়। রাতে টকদই খাওয়া নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে। সাধারণ তাপমাত্রায় এনে খেলে কোনও সমস্যা হবে না।
৭। চিনি ও তেলের ব্যবহার যথাসম্ভব কম করে সহজপাচ্য খাবার, সঙ্গে প্রচুর সবুজ টাটকা মরশুমি শাকসবজি খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে।
৮.নিয়মিত যোগব্যায়াম আর প্রাণায়ামের প্রয়োজন। এইক্ষেত্রে স্ট্রেচিং, হালকা জগিং, ভুজঙ্গাসন, পদ্মাসন, পবনমুক্তাসন, সূর্যনমস্কার ইত্যাদি আসন এবং প্রাণায়ামের মধ্যে কপালভাতি, অনুলোম বিলোম করা যেতে পারে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য।