4th Apr 2024
বিনোদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৯৫৭। পঞ্চাশের দশকের প্রায় শেষদিক। বাংলা সিনেমার তখন হিট জুটি উত্তম-সুচিত্রা। এঁদের জুটির ১৪টি ছবি হয়ে গেছে। ১৪টি ছবির বেশিরভাগই হিট। ১৫ নম্বর ছবি 'হারানো সুর'। পরিচালক অজয় কর। প্রযোজক উত্তমকুমার নিজেই। রূপবাণী, অরুণা, ভারতী প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি চলেছিল টানা ১২ সপ্তাহ। বক্স-অফিস হিট ছিল 'হারানো সুর'।
এই ছবিটির শুটিং চলাকালীন একটি কাণ্ড ঘটেছিল। সেই কেলেঙ্কারি 'উত্তমকুমারের দৃষ্টি এড়ায়নি। সম্ভবত পরিচালক অজয় কর 'হারানো সুর'-এর শুটিং করছিলেন এনটি-ওয়ানে। টানা শুটিং করতে করতে বিকেল পেরিয়ে সন্ধে। আর পঞ্চাশের দশকে টালিগঞ্জে সন্ধে মানেই অন্ধকার। একেবারে গ্রামের পরিবেশ। বাস-গাড়িও উধাও হয়ে রাস্তায়। শুধুমাত্র ছ'নম্বর রুটের সরকারি বাসটি কদাচিত পাওয়া যেত। তাই টেকনিশিয়ানরা বাড়ি যাওয়ার জন্য উসখুস করতেন। গানের সিকোয়েন্সের শুটিং শেষ হলেই সেদিনের মতো শুটিং প্যাক-আপ।
অজয় কর 'ওগো তুমি যে আমার' গানটির সিকোয়েন্সের শুটিং করবেন। সেইমতন লাইট অ্যারেঞ্জমেন্ট চলছে। ক্যামেরা কোথায় থাকবে তার নির্দেশ দিচ্ছেন পরিচালক। শুটিং তো করবেন, কিন্তু মালা কই! দুটো গোড়ের মালা লাগবে তো! প্রোডাকশন ম্যানেজারের মাথায় হাত। তিনি চুপচাপ অজয় করের পাশে এসে কানে কানে সেই খবরটি দিলেন। কিন্তু এই ভরসন্ধেয় টালিগঞ্জে ফুলের দোকান খোলা থাকবে! তারপর এই খবর যদি একবার সুচিত্রা সেনের কানে যায়, তিনি হুলুস্থুল বাধিয়ে ছাড়বেন। শুটিং করবেনই না। এ-ব্যাপারটি কারওরই অজানা নয়।
অজয় করের নির্দেশমতো ছেলেটি বেরিয়ে গেলেন তাঁর মোটরসাইকেলে। কেউ কিছু জানলেন না দু'টি গোড়ের মালা পরে শুটিং শেষ হল সেদিনের মতো। 'ওগো তুমি যে আমার/ওগো তুমি যে আমার/কানে কানে শুধু একবার বল/তুমি যে আমার'। এই গানটি নিয়ে শুরু থেকেই ঝামেলা। সেইসময় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ভীষণ ব্যস্ত। তিনি আবার এই ছবির সুরকার। তাঁর সময় পাওয়া খুব মুশকিলের। তিনি তখন বলিউডের হেমন্তকুমার। তিনি তৎকালীন বম্বে-কলকাতার নিত্যযাত্রী। তিনি বললেন, 'তুমি যে আমার/ওগো তুমি যে আমার/কানে কানে শুধু একবার বল/তুমি যে আমার' গানটি গীতা (দত্ত) গাইবে। প্রায় সকলেই আঁতকে ওঠেন হেমন্তের কথা শুনে। কেননা, সুচিত্রার ঠোঁটে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় একচেটিয়া হিট। সুরকারের কথামতো গীতা দত্তই রেকর্ড করলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রাতের উড়ান ধরে বম্বে ফিরে যান। তারপর তো বাংলা সিনেমার গানে সবটাই ইতিহাস।
যাইহোক, আবার ফিরে আসি 'হারানো সুর' ছবির শুটিংয়ে। পরদিন শুটিং শুরু হবে। মেক-আপ রুমে উত্তমকুমারের সঙ্গে আলোচনা করতে এলেন পরিচালক অজয় কর। উত্তমকুমারের কথা শুনে চমকে ওঠেন অজয় কর! কী এমন কথা বলেছিলেন উত্তমকুমার পরিচালক অজয় করকে! উত্তমকুমার বলেছিলেন, "অজয়দা ওই গোড়ের মালা দু'টি যে কেওড়াতলা শ্মশানের মৃতদেহের গলার মালা, সেটা আমি জানতাম।"
পরিচালক অজয় কর আকাশ থেকে পড়লেন! "তুমি কী করে জানলে!"
উত্তমকুমারে মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি। "ছেলেটিকে আপনি যখন মালা আনতে পাঠালেন, তখন আমিই ওকে একপাশে চুপিচুপি ডেকে নিয়ে বলে দিয়েছিলাম, ফুলের দোকান খোলা না পেলে ফিরে আসবি না। সোজা চলে যাবি কেওড়াতলায়। শ্মশানে মৃতদেহের গলার পরে থাকা মালা থেকে দুটো ভাল মালা দেখে বেছে নিয়ে আসবি। তবে কখনওই যেন একথা রমার কানে না যায়। তাহলে ও কিন্তু মালা তো পরবেই না। শুটিংও ভেস্তে যাবে।" উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনকে ডাকতেন রমা নামে। আর সুচিত্রা সেন বলতেন উতু।