14th Oct 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

আজও বাঙালির রোম্যান্টিক আইডল উত্তম-সুচিত্রা..

1st Jul 2024

বিনোদন

কমলেন্দু সরকার


বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের একটা সময় চিরাচরিত বাংলা ছবি দেখে-দেখে ক্লান্ত বাঙালি দর্শক হাই তুলতে শুরু করেছিলেন। হল-এ যাওয়ার চেয়ে দুপুরে একটি ভাতঘুম মেরে দেওয়া অনেক ভাল, এমন চিন্তা শুরু করতে চলেছিলেন বাঙালি বাবু-বিবিরা। নইলে পান মুখে তাস পেটানো। মহিলা মহলে লুডো, নয়তো পিএনপিসি। ঠিক এমন সময় মাত্র একটি জুটি, একটি বাংলা ছবি বাংলা সিনেমার হাল বদলে দিল। হুমড়ি খেয়ে পড়লেন দর্শকেরা। ছবিটির নাম-- 'সাড়ে চুয়াত্তর' (১৯৫৩)। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ মুক্তি পেয়েছিল। পরিচালক নির্মল দে। বাঙালি দর্শকেরা ঘুম চোখ মুছলেন উত্তম-সুচিত্রাকে দেখে। আহা কী জুটি! ঠিক যেন রাধাকেষ্ট! একবার এ-ছবি দেখে মন ভরে না। আবার খাব সন্দেশের মতো আবার দেখি ছবি। বহুদিন পর রিপিট দর্শক পেয়ে বক্স-অফিস ফুলেফেঁপে উঠল। ছবি সুপার হিট। রব উঠল উত্তম-সুচিত্র যুগ যুগ জিয়ো। সত্যি যুগ যুগ জিইয়ে গেলেন উত্তম-সুচিত্রা কিংবা সুচিত্রা-উত্তম।
৬৮ বছর কেটে গেল উত্তম-সুচিত্রা জুটির। বড়রা তো বটেই, নতুন প্রজন্মের সিনেমাপ্রেমীদের কাছেও উত্তম-সুচিত্রার জুটি ভীষণই পছন্দের। 'সাড়ে চুয়াত্তর'-এ উত্তম- সুচিত্রা থাকলেও মূল নায়ক-নায়িকা কিন্তু তুলসী চক্রবর্তী-মনিলাদেবী। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৪- য় উত্তম-সুচিত্রা জুটি করে ছ'টি ছবি তৈরি হল। প্রতিটি ছবির পরিচালকই সে-যুগের প্রথিতযশা। সুকুমার দাশগুপ্ত করলেন 'ওরা থাকে ওধারে'। এই ছবিতেই প্রথম ঘটি-বাঙালের লড়াই এবং ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলার কথা আসে। সতীশ দাশগুপ্তের 'মরণের পরে'। সুকুমার দাশগুপ্তের 'সদানন্দের মেলা'। নরেশ মিত্রের 'অন্নপূর্ণার মন্দির'। অগ্রদূতের 'অগ্নিপরীক্ষা'। এবং অজয় করের 'গৃহপ্রবেশ'।

এর মধ্যে তেমনভাবে চলেনি 'ওরা থাকে ওধারে', 'সদানন্দের মেলা' এবং 'গৃহপ্রবেশ'। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে পূর্ববঙ্গের লোকেরা কলকাতা এবং তার আশপাশে কলোনি গড়ে তোলেন। অনেকে বাড়িও করেন। তাই কলকাতা শহর এবং মফসসলে ঘটি-বাঙাল চর্চাটি বেশ জোরালোভাবেই ছিল। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান তো বরাবরই বাঙালির আবেগ। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্ত ভরসা করেছিলেন ছবি নিয়ে। উত্তম-সুচিত্রা ছাড়াও অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ছিলেন জবরদস্ত। তবুও ছবি চলেনি তেমন। অজয় করের 'গৃহপ্রবেশ'ও চলল না। কিন্তু 'মরণের পরে' এবং 'অন্নপূর্ণার মন্দির' প্রতিটি হলে চলে ১৩ সপ্তাহ ধরে। তবে রেকর্ড করল অগ্রদূতের 'অগ্নিপরীক্ষা'। প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে চলে টানা ১৮ সপ্তাহ। সেই রেকর্ড ভেঙে দেয় পরিচালক অগ্রগামীর 'সাগরিকা' (১৯৫৬)। চলে টানা ২৪ সপ্তাহ। উত্তম-সুচিত্রার সবচেয়ে সফল ছবি।

যাইহোক, 'অগ্নিপরীক্ষা' থেকে উত্তম-সুচিত্রা জুটি পুরোপুরি নির্ভরতা দিয়েছিল বাংলা ছবির প্রযোজক-পরিচালকদের। 'অগ্নিপরীক্ষা'য় উত্তম-সুচিত্রাকে নেওয়ার জন্য বহু কথা শুনতে হয়েছিল পরিচালক অগ্রদূতকে। তার কারণ, 'ওরা থাকে ওধারে', 'সদানন্দের মেলা' এবং 'গৃহপ্রবেশ' ফ্লপ হওয়ার কারণে। বিভূতি লাহা বলেছিলেন, "ওদের নায়ক-নায়িকা বাছাতে আমাকে প্রচুর কথা শুনতে হয়েছিল। প্রায় সকলেই বলেছিল, 'আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? জেনেশুনে ওই ফ্লপ মাস্টার আর মাকাল ফলকে ছবিতে নিলেন।' তখন ইন্ডাস্ট্রিতে ওদের ওই নামেই ডাকত। তা আমি ঝুঁকি একটু বেশিই নিয়েছিলাম। যাইহোক, দু'জনকে সই করিয়ে নিলাম। তার পরের কাহিনি বলে আর লাভ কী! এক কিস্তিতেই বাজিমাত করে দিয়েছিল ওরা।"

উত্তম-সুচিত্রার জুটির মোড় ঘুরে গেল 'অগ্নিপরীক্ষা' থেকেই। উত্তম-সুচিত্রাকে ভাবনাতে রেখেই ছবির চিত্রনাট্য লেখা হত সেইসময়। পাশাপাশি চাঙ্গা হয়ে উঠল বাণিজ্যিক বাংলা ছবির বাজার। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দু'টি ছবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একটি 'অগ্নিপরীক্ষা' (১৯৫৪) অন্যটি 'পথের পাঁচালী' (১৯৫৫)। তার কারণ, 'অগ্নিপরীক্ষা' বাণিজ্যিক বাংলা ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বাংলা ছবির দর্শকেরা তখন বাংলা সিনেমা থেকে প্রায় মুখ ঘুরিয়ে নিতে চলেছেন এবং হিন্দি সিনেমা দর্শকানুকূল্য পাচ্ছিল বেশি। উত্তম-সুচিত্রা জুটি আবার হল মুখো করল বাংলা ছবির দর্শকদের। আর 'পথের পাঁচালী' বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রে ভারতীয় সিনেমাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি ভারতীয় সিনেমায় নতুনধারার জন্ম দেয়। এই দু'টি ছবির কারণেই অনেকেই বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছিলেন।


অগ্নিপরীক্ষা' বাংলা ছবিতে নিয়ে এসেছিল গ্ল্যামার। রোম্যান্টিক জুটি কাকে বলে সেটা উত্তম-সুচিত্রার আগে কোনও জুটিই বোঝাতে পারেনি। হ্যাঁ, কাননদেবী-প্রমথেশ বড়ুয়ার কথা মাথায় রেখেও বলছি। উত্তম-সুচিত্রা যে একটা রোম্যান্টিক টিম তা ভাবনা- চিন্তায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল। এটা কেউ স্বীকার করুন বা না-ই করুন, এটা কিন্তু হয়েছিল। তবে খুব সুচারুভাবে এক্সপ্লয়েট করেছিলেন ওঁরা দু'জনেই। ইন্ডাস্ট্রির লোকজন বুঝতেন, চিত্রনাট্যই আসল নায়ক-নায়িকা। উত্তম-সুচিত্রাকে নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয় 'অগ্নিপরীক্ষা' বক্স-অফিসে সাফল্য পাওয়ার পর। উত্তমকুমার তো সুচিত্রা সেন ছাড়াও বহু নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে বহু ছবি করেছেন। সেসব জুটি নিয়ে তেমন মাতামাতি হয়নি। আসলে বাংলা ছবি বাঁচতে গেলে উত্তম-সুচিত্রার জুটির প্রয়োজন ছিল। তাই আলাদা করে 'উত্তম-সুচিত্রা যুগ, এই তকমাটি সেঁটে প্রচার হয়েছিল জোরদার। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি ওঁদের কোনও ক্যারিশমা ছিল না? নিশ্চয়ই ছিল। সেইজন্যই প্রচারটাকে হাতিয়ার করে নিজেদের দারুণভাবে তৈরি করে নিয়েছিলেন উত্তম-সুচিত্রা দু'জনেই। পর্দায় হোক বা বাইরে। এখানেই উত্তম-সুচিত্রা জুটির চরম সাফল্য। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ হোক বা উত্তম- সুচিত্রার যুগ, ওঁদের জুটির ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি কোনও জুটি। হ্যাঁ, দর্শকেরা পছন্দ করেছেন বা ভাল লেগেছে উত্তম-সুপ্রিয়া, উত্তম- সাবিত্রী, উত্তম-মাধবী, উত্তম-অপর্ণা ইত্যাদি জুটি। কিন্তু উত্তম-সুচিত্রার মুখ দিয়ে লাট্টু, ঘুড়ি তাতে কিংবা উত্তম-সুচিত্রার নামে রোদচশমা বিক্রি যেমন হয়েছিল, তেমনটি আর কোনও জুটি নিয়ে হয়নি। আর সেসব ছিল ওঁদের ছবির মতো সুপার হিট। ছেলেরা তো উত্তমকুমারের চুলের স্টাইল রপ্ত করলেন। সেই চুলের ছাঁট হল 'ইউ ছাঁট'। পিছনে একটা ইংরেজি অক্ষর ইউ-এর মতো রেখে চুল কাটতেন নাপিতেরা। সম্ভবত উত্তম-সুচিত্রা হলেন বাংলা ছবির প্রথম নায়ক-নায়িকা যাঁদের ছবি বিক্রি হত। উৎসাহী ভক্তেরা কিনতেন সেইসব ছবি। এবং লুকিয়ে লুকিয়ে সেই ছবি দেখে উপভোগ করতেন। ওঁদের স্টাইল রপ্ত করতেন। অগ্রদূতের 'পথে হল দেরি' (১৯৫৭) ছবিতে সুচিত্রা সেন নাইলন শাড়ি পরেন। শোনা যায়, প্রায় ২০-২৫ বার শাড়ি বদল করেন ছবিতে। বাঙালি মহিলাদের র কাছে তাঁর শাড়ি পরার স্টাইল এবং নাইলন শাড়ি ফ্যাশন হয়েছিল পঞ্চাশের দশকের শেষে দিকে। দোকানে দোকানে বিক্রি হতে লাগল 'পথে হল দেরি' শাড়ি। ছবিটি চলে টানা ১৩ সপ্তাহ। এই জুটিকে ঘিরে অদ্ভুত একটা পাগলামি বা ক্রেজ ছিল।

কেন এই পাগলামি ছিল ওঁদের ছবি ঘিরে? পঞ্চাশের এবং ষাটের দশকে প্রেম ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ ফলের মতো। সবটাই ছিল চুপিচুপি। কানাকানি থেকে জানাজানি হয়ে গেলে মহাপ্রলয় ঘটে যেত দুই পরিবারে। তাই তখনকার অধিকাংশ তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী উত্তম-সুচিত্রার ছবির প্রেমের মধ্যে নিজেদের খুঁজে নিতেন বা পেতেন। এমনকী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও এমন ব্যাপার ঘটত। আসলে বরাবরই উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত বাঙালি রোম্যান্স-প্রিয়, সেইসময় সংখ্যাটা আরও বেশি ছিল। পঞ্চাশ, ষাটের দশকে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম। খাওয়া-পরা, চাকরিবাকরি নিয়ে অতটা চিন্তাভাবনা ছিল না। বাড়ির কেউ একজন ভাল চাকরি করলেই চলে যেত। পাড়ার রকে, চায়ের দোকানে জমজমাট আড্ডা চলত। বাংলা ছবির হলগুলির পরিবেশও ছিল ভাল। সপরিবারে এবং প্রেমিক-প্রেমিকারা ছবি দেখতেন নিশ্চিন্তে। সেইসময় বাড়ির বড়রা নাইট শো দেখতেন। খেয়েদেয়ে ছবি দেখতে যেতেন। তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম ছিল।

কেমন ছিল উত্তম-সুচিত্রার ছবির প্রেম? দর্শক কীভাবে নিতেন? প্রথমত, ছবিতে উত্তম-সুচিত্রার পর্দার প্রেম বা ভালবাসার মধ্যে দর্শক তাঁর আকাঙ্ক্ষিত কিন্তু অপূর্ণ বাসনাপূরণ করতেন বা দেখতে পেতেন। দ্বিতীয়ত, উত্তম-সুচিত্রার ছবির রোম্যান্সের মধ্যে এমন প্রমত্ত প্রেম আর কোনও জুটির ভিতর পেতেন না দর্শকেরা। তাঁরা উপভোগ করতেন। হয়তো ওই জুটির জায়গায় নিজেদের বসাতেন। এই ধারণা খুব- একটা অমূলক নয়। তার কারণ, উত্তম-সুচিত্রার বেশিরভাগ ছবিই বহু দর্শক পঁচিশ-তিরিশবার দেখতেন। তৃতীয়ত, উত্তম-সুচিত্রা তাঁদের ছবির প্রেম-প্রণয় যেভাবে প্রকাশ করতেন অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে, তা ছিল ভীষণভাবে স্বাভাবিক। বাস্তবের প্রেমিক-প্রেমিকা মনে মনে যেমনটি চান, ঠিক তেমনই। সেই সময়কালে বাস্তবের প্রেমিক-প্রেমিকাদের পর্দার প্রেমের মতো প্রণয় করা সম্ভব হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। তাই অনেকেই উত্তম-সুচিত্রার জুটির অন্ধভক্ত হয়ে ওঠেন। এবং সেই সংখ্যাটি ছিল বিশাল। আবার অদ্ভুত ব্যাপার, উত্তমকুমার যখন অন্য কোনও নায়িকার সঙ্গে একইরকমভাবে অভিনয় করছেন, তখন কিন্তু দর্শকেরা তা মেনে নিতে পারতেন না।

উল্টোদিকে সুচিত্রা সেনের ক্ষেত্রেও একই কথা। অথচ উত্তম-সুচিত্রা দু'জনেই ছিলেন বিবাহিত। তবুও এই জুটি দর্শকদের কোনও সময় বুঝতে দিতেন না তাঁদের পর্দার বাইরে ভিন্ন ভিন্ন সংসার আছে। এমনই ছিল উত্তম- সুচিত্রার পর্দার পরিশীলিত, মার্জিত প্রেমের প্রকাশ। দর্শক ধরেই নিয়েছিলেন পর্দার বাইরেও ওঁদের ভিতর একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাই দক্ষিণ কলকাতার এক প্রেক্ষাগৃহে উত্তম- সুচিত্রা যখন গান ধরেন 'এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলো তো, না, তুমি বলো', ওঁরা দু'জনেই দু'জনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলেন, 'না, তুমি বলো', তখন দর্শকাসনের একাংশ চিৎকার করে বলে ওঠেন, "বলেই ফেলো গুরু, আমরা বহুদিন অপেক্ষা করে আছি শোনার জন্য।" এমনই ছিল ওঁদের পর্দার প্রেমের বহিঃপ্রকাশ!

আসলে উত্তম-সুচিত্রার মধ্যে ছিল দারুণ এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনকে ডাকতেন 'রমা' বলে। সুচিত্রা সেনের পোশাকি নামে। আর সুচিত্রা সেন উত্তমকুমারকে ডাকতেন 'উতু' বলে। উত্তমকুমার 'তুমি' বললেও, সুচিত্রা সেন 'তুই' বলতেন। পর্দার বাইরে অমন সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল বলেই পর্দায় অমন ভাল প্রেমের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতেন দু'জনেই। সেইসময় উত্তম-সুচিত্রা জুটি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, মেট্রো প্রেক্ষাগৃহে পরিচালক - কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের 'চন্দ্রনাথ' (১৯৫৭, ১৫ নভেম্বর) রিলিজ করেছিল মাত্র দু'সপ্তাহের জন্য, চলে টানা ১৩ সপ্তাহ। সেইসময় মেট্রোতে ইংরেজি ছবি ছাড়া অন্যকোনও ছবির কথা ভাবাই যেত না! মেট্রোর দর্শকও ছিল ইংরেজি ছবির।

আসলে, উত্তম-সুচিত্রা এসে বাংলা ছবির দর্শকদের ছিনিয়ে এনেছিলেন নিজেদের কাছে। দু'জনের রোম্যান্টিক চেহারা, গ্ল্যামার, পর্দার প্রমত্ত প্রেম-- সবমিলিয়ে উত্তম-সুচিত্রা হয়ে উঠেছিলেন বাংলা ছবির সেরা রোম্যান্টিক জুটি। ওঁদের জুটি নিয়ে বাংলা ছবির দর্শকদের ভিতর শুরু হয়েছিল নব-উন্মাদনা। এই উন্মাদনা শুধুমাত্র সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ছিল শিক্ষিত পরিমণ্ডল তো বটেই, পরিবারের বসার ঘর ছেড়ে বেডরুম, হেঁশেলেও আলোচনার বিষয় উত্তম-সুচিত্রা এবং তাঁদের ছবির খবরাখবর। 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছেড়ে 'অগ্নিপরীক্ষা'র পর যে- বসন্তবাতাস এনেছিলেন বাংলা ছবিতে ২২ বছর ধরে তা মাতিয়ে রেখেছিলেন। 'সাড়ে চুয়াত্তর' (১৯৫৩) থেকে 'প্রিয় বান্ধবী' (১৯৭৫)। পরিচালক হীরেন নাগের 'প্রিয় বান্ধবী' চলেছিল টানা ন'সপ্তাহ। ২২ বছরেও বন্ধ হয়ে যায়নি বসন্তবাতাস। আজ ৬৮ বছর পেরিয়েও বাঙালির কাছে উত্তম-সুচিত্রা রয়ে গেছেন রোম্যান্টিক আইডল।

Archive

Most Popular