10th Jun 2024
প্রতিবেদন
সুস্মিতা মিত্র
এককালে সংস্কার ছিল কন্যা যতদিন না পুত্রবতী হয় ততদিন কন্যার পিতা মাতা কন্যা গৃহে পদার্পণ করবেন না। অল্প বয়সে বিয়ের কারণে সন্তান ধারণের সমস্যা বা শিশু মৃত্যু ইত্যাদির কারণে মেয়ের মুখ একবারের জন্য দেখতে হলেও, অপেক্ষা করতে হতো বছরের পর বছর। এই কারণে জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিকে বেছে নেওয়া হয়। যেদিন জামাইসহ কন্যা পিতৃগৃহে আসবে, তাদের আদর সমাদর করে খাওয়ানোর পাশাপাশি মা ষষ্ঠীর পুজো করে কন্যা যাতে শীঘ্র পুত্রবতী হতে পারে তার প্রার্থনা করা হবে। এভাবেই শুরু হয় জামাইষষ্ঠীর।
আরো একটি কাহিনী লোকমুখে প্রচলিত আছে। একটি পরিবারে দুই বউ ছিল। ছোট বউ এত লোভী ছিল যে বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলেই লুকিয়ে সব খেয়ে নিতো। আর দোষ চাপাতো বিড়ালের ওপর। নিজের বাহনের উপর অকারনে দোষ চাপানোর জন্য মা ষষ্ঠী ক্ষুদ্ধ হয়ে ছোট বউয়ের সন্তানের প্রাণ কেড়ে নেন। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে দেবীর কাছে ক্ষমা চাওয়ায় সন্তানের প্রাণ ফেরত পেলেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে তার বাপের বাড়িতে যেতে বাধা দেন। অরণ্য ষষ্ঠীর দিন মেয়ে জামাইকে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন ছোট বউয়ের বাবা মা। এই দিনটি পরে জামাইষষ্ঠী হিসেবে প্রচলিত হয়।
দেবী ষষ্ঠী দেবসেনাপতি কার্তিকেয়ের স্ত্রী, ইন্দ্র ও শচীদেবীর কন্যা দেবসেনা।
তিনি দ্বিভুজা, দুনয়না, গৌরবর্ণা, দিব্যবসনা, সর্বসুলক্ষণা ও জগদ্ধাত্রী শুভপ্রদা। তিনি মাতৃত্বের প্রতীক। তাঁর বাহন বিড়াল। বাহন বলতে কিন্তু দেবতার যান নয়। যা দেবতার চিহ্ন বহন করে বিশ্বময় ঘুরে বেড়ায় তাই তার বাহন।
শ্রীমদ্ দেবীভাগবত পুরাণে এমন উল্লেখ আছে, "প্রকৃতির ষষ্ঠ অংশটির নাম ষষ্টী। দেবী হলেন শিশুদের দেবতা; তিনি স্বয়ং বিষ্ণুর মায়া এবং তিনি সকলকে সন্তান দান করেছেন। তিনি ষোড়শ মাতৃকার একজন। তিনি দেবসেনা নামে পরিচিত, ব্রতের দেব ; তিনি স্কন্দের সতী ও প্রিয়তমা স্ত্রী। তিনি বাচ্চাদের দীর্ঘায়ু সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন এবং সর্বদা তাদের সংরক্ষণে নিযুক্ত হন। সিদ্ধ যোগিনী সর্বদা বাচ্চাদের পাশে রাখে।"
কীভাবে পালিত হয় জামাইষষ্ঠী?
জামাইয়ের হাতে দুর্বার আটি বাঁধা কাঁচা হলুদে ছোপানো সুতো বেঁধে, কপালে তেল হলুদের ফোঁটা দিয়ে, জলে ভেজানো তালপাতার পাখার বাতাস করেন শাশুড়ি মা। মুখে তিনবার বলেন ষাট ষাট। পাখার ওপর থাকে আম, বাঁশের করুল, খেজুরের ছড়া, করমচা, ১০৮ টি দূর্বা। দূর্বা গাছের মৃত্যু নেই, আর ধান সমৃদ্ধির প্রতীক। সেই কারনে ধান দূর্বা দিয়ে সবসময় আশির্বাদ করে মঙ্গল কামনা করা হয়।
থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় মিষ্টি দই, খই, মাখা সন্দেশ, পাঁচ রকম মরশুমী ফল। এছাড়াও ষোড়শ ব্যঞ্জন সাজিয়ে খেতে দেওয়ার প্রথা ও রয়েছে বিভিন্ন বাড়িতে।