23rd Jul 2024
রান্নাঘর
সুস্মিতা মিত্র
বর্ধমান নামটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কোনো কোনো মতে জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীরের নামে এই শহরের নামকরণ করা হয়। আবার অন্যমতে পূর্ব ভারতে আর্যীকরণের সময় গড়ে ওঠা এই জনপদটির বর্ধিষ্ণুতার কারণে এটিকে বর্ধমান নামে অভিহিত করা হয়। পূর্বে বর্ধমান জেলার রাজধানী ছিল মুঘল। তখন এই শহরের নাম ছিল শরিফাবাদ। ১৭৬০ সালে মীরকাশিম বর্ধমান জেলা ব্রিটিশদের হস্তান্তরিত করে এবং এরপর এটি জেলা সদরে পরিণত হয়।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা
সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল তাঁর রূপমঞ্জরি বইতে ল্যাংচার নামকরণ নিয়ে বেশ জমিয়ে গল্প বলেছেন।
ল্যাংচার জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগর। একসময় নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কন্যার সঙ্গে বর্ধমান জেলার রাজপরিবারের রাজার পুত্রের বিয়ে হয়। কৃষ্ণনগরের রাজকন্যা বর্ধমান রাজপরিবারের রাজবধূ হিসেবে বর্ধমানেই থাকতে শুরু করেন। বিয়ের কিছু বছর পরে রাজকন্যা অন্তঃসত্ত্বা হলে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কন্যাকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসেন। ক’দিন পর থেকেই রুচি হারিয়ে ফেলে রাজকন্যা। কিছুই মুখে তুলতে চান না সন্তানসম্ভবা রাজবধূ। রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কোনও চিকিৎসকও রাজকন্যার না খাওয়ার রোগ সারাতে পারলেন না। একদিন রাজকন্যা নিজেই তাঁর বাবাকে ডেকে বললেন, তিনি বর্ধমানে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে এক ময়রার হাতে তৈরি কালো রঙের ভাজা মিষ্টি রসে ডুবিয়ে খেয়েছিলেন। সেই স্বাদে তিনি আচ্ছন্ন। সেই মিষ্টি খেলেই নাকি তাঁর মুখের রুচি ফিরবে। রাজা তো পড়লেন মহা ফাঁপরে। তাঁর কন্যা না তো সেই ময়রার নাম বলতে পারে না তো মিষ্টির নাম। অনেক ভেবে চিনতে রাজকন্যা জানান, সেই ময়রা ছিলেন খঞ্জ, অর্থাৎ তাঁর একটি পা ছিল খোঁড়া। রাজা তাঁর দলবল পাঠালেন বর্ধমানের সেই খোঁড়া ময়রাকে খুঁজে আনতে। অবশেষে ময়রাকে খুঁজে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে নিয়ে আসা হল এবং তিনি আবার রাজকন্যার জন্য বানালেন সেই ভাজা মিষ্টি। স্বাদ ফিরল রাজকন্যার এবং তাঁর জন্য তৈরি সেই মিষ্টির নাম ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। তবে মিষ্টির নাম কী সেটা কেউই বলতে পারলেন না। তাই সেই খঞ্জ ময়রা যিনি লেংচে হাঁটেন তাঁর এই শারীরিক সমস্যার নামেই নাম হয়ে যায় মিষ্টির।
কী কী লাগবে
ছানা, ময়দা, খোয়া ক্ষীর, চিনি, এলাচ গুঁড়ো, ঘি
কীভাবে বানাবেন
ছানা হাতের তালুর সাহায্যে মেখে নিন। এতে ময়দা আর খোয়া ক্ষীর মিশিয়ে আরো কিছু সময় মাখুন। হাতে ঘি মেখে লেচি কেটে ল্যাংচার আকারে গড়ে নিন। তেল গরম করে বেশ লাল করে ভেজে তুলে নিন। চিনি আর জল ফুটিয়ে ঘন সিরা তৈরি করে তাতে ভিজিয়ে রাখুন ২-৩ ঘন্টা। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।