28th Jan 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

মানসকন্যা মনসার জন্ম বৃত্তান্ত ও সয়লা গান...

22nd Aug 2024

প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি


দেবী মনসা হলেন শেশ ও বাসুকির বোন, নাগদের রাজা এবং ঋষি জরুৎকারুর স্ত্রী। তিনি ঋষি অস্তিকার মা। তিনি বিষহরি, নিত্য এবং পদ্মাবতী নামেও পরিচিত। মহাভারত সহ দেবীভাগবত পুরাণ আদি অনেকানৈক পুরাণে দেবী মনসার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি প্রধানত পূর্ব্বভারতীয় অঞ্চল অবিভাজিত বঙ্গদেশ, অঙ্গদেশ, মিথিলা, কামরূপ এবং উৎকলে যেকোনো বিষধর প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা ও বিষের প্রতিকার পেতে, প্রজনন ও ঐশ্বর্যলাভের উদ্দেশ্যে তার পুজো করা হয়।


এ বিষয়ে পুরাণ কী বলছে?

মনসা হলেন শিবের মানসকন্যা ও জরুৎকারুর পত্নী। জরৎকারু মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মাতা পার্বতী প্রথমে তাঁকে ঘৃণা করলেও পরবর্তীকালে দেবী চণ্ডী মনসাকে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তবে কোনও কোনও প্রাচীণ গ্রন্থ অনুসারে শিব নয়, ঋষি কাশ্যপ হলেন মনসার পিতা।

মনসার উৎপত্তি:

"সা চ কন্যা ভগবতী কাশ্যপস্য চ মানসী।
তেনৈব মনসা দেবী মনসা বা চ দীব্যতি।।"

একবার সর্প দংশনের ভয় থেকে মানুষের পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা কশ্যপ মুনিকে একটি মন্ত্র বা বিশেষ বিদ্যা আবিষ্কার করার নির্দেশ দেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুসারে কশ্যপ যখন মনে মনে এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন, তখন তাঁর মনন ক্রিয়া থেকে আবির্ভূত হন এক স্বর্ণ বর্ণা দেবী। যেহেতু তিনি মানস জাতা, মন থেকে জন্ম, তাই তিনি 'মনসা'। এই দেবী 'কাম রূপা', অর্থাৎ নিজের ইচ্ছে অনুসারে বিভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারেন।

মা মনসার জন্ম বৃত্তান্ত:
পদ্মপুরাণ অনুসারে, মহাদেব শিব হিমালয়ে উত্তরে অবস্থিত তাঁর বাসস্থান কৈলাসে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কালিদহের তীরে আসন গ্রহণ করেন। সেই সময়ে তাঁর সম্মুখে পার্বতির সৃষ্ট পুষ্পকাননের শোভা ভেসে ওঠে এবং তা দেখে তিনি মুগ্ধ হন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর স্ত্রী-পার্বতিকে মনে পড়ে এবং বীর্যস্খলন হয়। মহাদেব তা সংরক্ষণের জন্য পদ্মপাতার ওপরে রেখে দেন। কিন্তু একটি পাখি তা খেয়ে ফেলে। পরবর্তী সময়ে ডিম পাড়ে, সেই ডিম পাতালপুরীতে বাসুকিরাজের প্রাসাদে পতিত হয় এবং ডিম থেকে পদ্মার জন্ম হয়।

দেবীর অষ্টনাগের নাম কী কী?
১) অনন্ত 
২) বাসুকী 
৩) পদ্ম 
৪) মহাপদ্ম 
৫) তক্ষক 
৬) কুলীর 
৭) কর্কট
৮) শঙ্খ

এই অষ্টনাগ এক দিকে যেমন অষ্টবিধ সিদ্ধির কথা বোঝায় তেমনি অপরদিকে অষ্টপাশের কথাও বোঝায়।

 বাংলা সাহিত্যে দেবী মনসা এবং পুজোর শুরু..

মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে বারবার উঠে এসেছেন দেবী মনসা। বাংলা ভাষায় মনসা নিয়ে লিখেছেন কেতকা দাস, নারায়ণ দত্ত, বিজয়গুপ্ত, কানাহরি দত্তরা। এঁদের লিখিত পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গলে দেবীর চরিত্রচিত্রণ করা হয়েছে নানান ভাবে। যেমন মনসামঙ্গল কাব্যে বলা হয়, চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে পুজো পাওয়ার বাসনায় একের পর এক সমস্যা তৈরি করেন দেবী মনসা। তাঁর পুত্র লখিন্দরের প্রাণ সর্পাঘাতে হরণ করেন দেবী। তারপর বেহুলার কৃতিত্বে ফেরে লখিন্দরের প্রাণ। এরপর মর্ত্যে দেবী হিসেবে পুজো পান মনসা।

বাংলায় মনসা পুজো

সাধারণত মনসার মূর্তি পূজা হয় না। সিজ বৃক্ষের শাখায়, ঘটে বা সর্প-অঙ্কিত ঝাঁপিতে মনসার পূজা হয়। তবে কোথাও কোথাও মনসার মূর্তিও পূজিত হয়। প্রধানত সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বা সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে মনসার পূজা করা হয়। 

পালা গান সয়লা:

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে পুরো শ্রাবণ মাস মনসা পুজো হয়। পুজো উপলক্ষে হয় পালা গান ‘সয়লা’। এই পালার বিষয় হল — পদ্মপুরাণ বা মনসা মঙ্গল। সারা রাত ধরে গায়ক দোয়ারপি-সহ পালা আকারে ‘সয়লা’ গান গায়। পুরুলিয়ায় মনসা পূজায় হাঁস বলি দেওয়া হয়। রাঢবঙ্গ বাঁকুড়ায় জ্যেষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে দশহরা ব্রত পালন করে মনসা পূজা করা হয়।তখন এখানে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। মনসা পুজার অঙ্গ হল অরন্ধন। রাঢ়ে চৈতন্যদেবের সময়ে মনসাকে মা দূর্গার এক রূপ মনে করা হত। তাই কোনও কোনও জায়গায় পুজোয় বলি দেয়া হত। আজও অনেক পুজোয় পাঁঠা বলি হয়।

Archive

Most Popular