2nd Dec 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
কথিত আছে কৃষ্ণ প্রতিদিন উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথ ধামে সরোবরে স্নান করেন। গুজরাটের দ্বারকা ধামে পোশাক পরেন। তার পর ওডিশার জগন্নাথধামে ভোজন গ্রহণ করে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে বিশ্রাম করতে যান। আরব সাগরের কোলে গুজরাটের জামনগরে অবস্হিত এই সুবিশাল মন্দির। মহাভারত অনুযায়ী, দ্বারকা ছিল শ্রীকৃষ্ণের নগরী। যাদব বংশের নিরাপত্তার জন্য বিশ্বকর্মাকে দিয়ে এখানে সুবিশাল এক নগরী নির্মাণ করান তিনি। সমুদ্র থেকে পাওয়া এক টুকরো জমির উপর একরাতেই গোটা একটা শহর গড়ে ওঠে বলে কাহিনিতে উল্লেখ রয়েছে।
গুজরাটের গোমতি নদীর তীরে গড়ে ওঠা কৃষ্ণ দেবালয়ের পরিচিতি দ্বারকাধীশ মন্দির হিসেবে। শ্রীকৃষ্ণের শ্যামবর্ণ চতুর্ভুজ মূর্তির পূজা হয় এখানে। যাঁর হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম। মন্দিরের মূল গম্বুজের উচ্চতা ১৫৬ ফুট। সাত তলার সমান উঁচু এই দেবালয় চুনাপাথরে তৈরি। এর দুটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। দক্ষিণদিকের দরজার নাম স্বর্গদ্বার। অন্যদিক মোক্ষদ্বার হিসেবে পরিচিত উত্তর দিকের দরজা। চূড়ার উচ্চতা ৪৩ মিটার। এই চূড়ায় রয়েছে চন্দ্র ও সূর্য লাগানো একটি ধ্বজ। বিশ্বের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় হওয়ায় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে ওই ধ্বজ দেখা যায়। দিনে তিনবার ঢাল-ঢোল পিটিয়ে এই ধ্বজ বদলানোর রীতি রয়েছে। ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়, মাখন মিছরি, ক্ষীর, জিরা লাড্ডু, রাবড়ি জিলিপি, মালপোয়া, মোহনভোগ, মুগ ডালের হালুয়া, ঘেভর, কাজুবাদাম, পেস্তা, এলাচ, পঞ্চামৃত, শক্করপারা, দধি, দুধ কি সবজি, পুরি ইত্যাদি।
সত্যযুগে মহারাজা রৈবত সমুদ্রের মধ্যে একটুকরো ভূমিতে কুশ বিছিয়ে একাধিক যজ্ঞ করেছিলেন। সেখানে কুশ নামক দৈত্যের উপদ্রব ছিল। ব্রহ্মার চেষ্টা সত্ত্বেও সেই দানবের মৃত্যু না হওয়ায় ত্রিবিক্রম ভগবান তাকে ভূমিতে পুঁতে দিয়ে, তার ওপর কুশেরই আরাধ্য দেবে কুশেশ্বরের লিঙ্গ মূর্তি স্থাপন করেন। দৈত্য দ্বারা প্রার্থনা করার পর ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ দেন যে, দ্বারকা আসার পর যে ব্যক্তি কুশেশ্বরের দর্শন করবেন না, তাঁর অর্ধেক পুণ্য সেই দৈত্য লাভ করবে। এ ভাবেই দ্বারকা নগরী গড়ে ওঠে।
দ্বারকার সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার রহস্য সমাধান করতে ১৯৩০-তে ওই এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালায় ব্রিটিশরা। দ্বারকার মধ্যেকার বেট দ্বারকা এলাকায় চলে এই খননকাজ। স্বাধীনতার পর ১৯৬০ ও ১৯৭৯-তে ফের ইতিহাসের খোঁজে নামে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (Archaeological Survey of India)। ৫০০-র বেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন উদ্ধার করেন তাঁরা। যার মধ্যে বেশ কিছু খ্রীষ্টের জন্মের বহু আগে তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণ মেলে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, প্রাচীন ভারতীয় শহরগুলির মধ্যে অন্যতম উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছিল দ্বারকা। এখানকার বাসিন্দারা পোড়া ইঁটের ব্যবহার জানতেন। এছাড়া কৃষিকাজেও যথেষ্ট উন্নতি করেছিলেন তাঁরা। গোটা নগরীর আরব সাগরে তলিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থাকতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা।বর্তমানে দ্বারকাধীশের যে মন্দির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার মূল গম্বুজের উচ্চতা ১৫৬ ফুট। সাত তলার সমান উঁচু এই দেবালয় চুনাপাথরে তৈরি। এর দুটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। দক্ষিণদিকের দরজার নাম স্বর্গদ্বার। অন্যদিক মোক্ষদ্বার হিসেবে পরিচিত উত্তর দিকের দরজা। দ্বারকাধীশ মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ৪৩ মিটার। এই চূড়ায় রয়েছে চন্দ্র ও সূর্য লাগানো একটি ধ্বজ। বিশ্বের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় হওয়ায় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে ওই ধ্বজ দেখা যায়।