29th Aug 2024
স্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাডপ্রেশারকে বলা হয় 'নীরব ঘাতক'। কেননা, অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগ খুব সহজে ধরা যায় না। আবার ধরা পড়ার পর এর সঠিক চিকিৎসা না হলে বা প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সবথেকে ভালো উপায় হলো জীবনযাত্রা বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ বা ওষুধ গ্রহণই এর একমাত্র চিকিৎসা নয়, ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি আর কি কি উপায় মেনে থাকলে সুস্থ থাকবেন বহুদিন। চলুন জেনে নিই।
ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক ওজন বজায় রাখার লক্ষ্যে উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে খাদ্যের ক্যালরি যথাযথভাবে মেনে চলতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন খাসির মাংস, বড় চিংড়ির মাথা, ডিমের কুসুম, বেকারির খাবার, বাটার, ঘি, ভাজা খাবার ইত্যাদি। অবশ্যই কম গ্রহণ করতে হবে। চিনি, অতিরিক্ত ভাত, আলু, মিষ্টি-এই জাতীয় শর্করাযুক্ত খাবারও কম খেতে হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি আসিডসমৃদ্ধ ফ্যাটজাতীয় খাবার ব্লাডপ্রেশার কমাতে সাহায্য করে, যেমন: ফুলকপি, বাদাম, মাছ ইত্যাদি।
জলপাইয়ের তেল, সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লবণ হল সোডিয়ামের খুব ভালো উৎস। প্রতিদিন রান্নায় চার থেকে পাঁচ গ্রাম (১ চা চামচ = ৫ গ্রাম) পর্যন্ত লবণ ব্যবহার করা ভালো। খাবারের সময় আলাদা লবণ পরিহার করতে হয়। লবণাক্ত খাবার, যেমন : চিপস, পাপড়, চানাচুর, আচার ইত্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
পটাশিয়ামযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক জরুরি। পটাশিয়াম রক্তের সোডিয়ামের মাত্রা যথাযথভাবে বাড়িয়ে রাখতে সহায়তা করে। ডাবের জল, কলা, টমেটো,গাঢ় সবুজ শসা, সবজি, স্যালাড পটাশিয়ামের ভালো উৎস, যা উচ্চ রক্তচাপ রোগীর খাদ্যতালিকায় থাকলে তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রোটিনজাতীয় খাবার উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে একটু হিসাব করে খেতে হয়। মুরগির মাংস, মাছ, ডিমের সাদা অংশ, লো ফ্যাট দুধ, টক দই, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে লবণের সঙ্গে পান-জদা-তামাক পরিহার করতে হয়। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ হওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নির্ধারন করা মহিলাদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এসময় কোনও ওষুধ খাওয়া যায় না। তাই দরকার যেকোনও ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিকারের। তবে প্রয়োগের আগে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ পরিচালনা করতে এখানে আপনার জন্য প্রতিকারের সুপারিশ করা হল।
১। ব্যায়াম
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আপনার রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করাকে একটি প্রয়োজনীয়তা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
২। সোডিয়াম গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনুন
গর্ভবতী অবস্থায় আপনার হরমোনগুলি অত্যাধিক মাত্রায়
ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এটি আপনার অনাক্রম্যতায় আঘাত করে। তাছাড়াও এটি আপনার দেহের প্রাকৃতিক কার্যকারিতাকে হ্রাস করে। এর অর্থ হল নুন বা নোনতা জাতীয় খাবারগুলি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হজম করা আরও বেশি কঠিন হয়ে ওঠে এবং যদি নুনটি সঠিকভাবে হজম না হয় বা আপনার খাদ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে থেকে থাকে, তবে এটি অত্যাধিক রক্তচাপের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে। লবণের মাত্রা কমানোর ফলে তা আবার গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে কাজ করে।
৩। কলা খান
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একটি অথবা দুটি করে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এটি আবার পটাসিয়ামেও সমৃদ্ধ। এই গুণগুলি কলাকে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর করে তুলেছে উচ্চ রক্ত-চাপ আছে এমন যেকোনও লোকের জন্য।
৪। ম্যাগনেসিয়াম
২০১১ সালে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালের এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, অত্যাধিক রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি পরিচালনা করতে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে থাকে। বেশিরভাগ চিকিৎসক সুপারিশ করেন যে গর্ভবতী মহিলাদের ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন টফু, অ্যাভোকাডো, কলা, আমণ্ড বাদাম এবং সয়া দুধ খাওয়া উচিত কারণ ম্যাগনেসিয়াম কেবল রক্তচাপের একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে না, এটি আবার গর্ভাবস্থায় অকাল সংকোচনকে প্রতিরোধের মাধ্যমে জরায়ুর সম্পূর্ণতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
৫। চাপ-মুক্ত
আপনি গর্ভবতী হলে, উদ্বেগ, অবসাদ এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়া সাধারণ ব্যাপার। এগুলির কারণেও আপনার উচ্চ রক্ত-চাপ হয়ে থাকতে পারে। তাই তাদের সারা দিনে কমপক্ষে ৩ বার ৩০ মিনিট করে গান শোনার সুপারিশ করা হয়।
৬। অ্যালকোহল বা মাদক দ্রব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আনুন
গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহলের জটিলতা এত বেশি যে ডাক্তাররা আপনাকে আপনার গর্ভাবস্থার সম্পূর্ণ সময়ের জন্য যেকোনও অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বর্জন করার পরামর্শ দেন। এর পিছনে অনেকগুলি কারণগুলির মধ্যে একটি হল উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হওয়া। অ্যালকোহল গ্রহণ বিভিন্ন কারণে যে কোনও গর্ভাবস্থাকে জটিল করে তুলতে পারে।
৭। ধূমপান করবেন না
অনেকটা অ্যালকোহলের মতই, ধুমপান করার খারাপ দিকগুলির প্রভাব আপনার দেহের উপর পড়ে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার মাধ্যমে। এমনকি যখন আপনি গর্ভবতী নন তখনও এর ফলে ক্যান্সার, ওজন বৃদ্ধি, উদ্বেগ, অবসাদ এবং উচ্চ রক্ত-চাপ পর্যন্ত হতে পারে। যখন আপনি গর্ভবতী থাকেন এই ঝুঁকিগুলি আরও চতুর্গুণ বেড়ে যায়। সুতরাং আপনি গর্ভবতী হলে ধূমপান করা থেকে সম্পূর্ণরূপে অব্যহতি নেওয়া হল সবচেয়ে সেরা বিকল্প।
৮। ক্যাফিন পরিহার করুন!
উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হল ক্যাফিন গ্রহণ। আমরা আপনার গর্ভাবস্থায় আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর রক্ত-চাপ বা ব্লাড প্রেসার (BP)-এর মাত্রা বজায় রাখতে ক্যাফিন গ্রহণে সীমাবদ্ধতা আনতে বা সেটিকে পুরোপুরি ত্যাগ করারই পরামর্শ দিই।
৯। মশলাদার খাবার বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন
জাঙ্ক ফুড বা মশলাদার খাবারগুলি সাধারণত প্রিজারভেটিভ দ্বারা প্যাকেট করা হয় এবং এটি অত্যন্ত অ-স্বাস্থ্যকর হিসাবে পরিচিত। যদিও এটি আপনার খাদ্যটির প্রতি তীব্র বাসনাকে তৃপ্ত করতে পারে, এটি কিন্তু পুষ্টির এক দুর্দান্ত উৎস নয়। সুতরাং, আপনার গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর থাকতে এবং আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাঙ্ক ফুডগুলি এড়িয়ে চলুন