13th Sep 2024
স্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
পারকিনসন, মস্তিষ্কের এক বিশেষ রোগ। মারণ ব্যাধিগুলোর মধ্যে বর্তমানে এটি একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগটি মূলত নিউরো ডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুর অধঃপতনজনিত রোগ। অ্যালজাইমার রোগের পরে এটি দ্বিতীয় সর্বাধিক নিউরো ডিজেনারেটিভ রোগ। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। মারা গেছেন কয়েক হাজার মানুষ।
জানেন কী
পারকিনসন রোগ কী?পারকিনসন রোগ এক প্রকার নিউরো ডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুর অধঃপতনজনিত রোগ। নিউরো ডিজেনারেটিভ মানে নিউরনের অধঃপতন বা মৃত্যু। নিউরন হলো মস্তিস্কের এক ধরনের কোষ এবং মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি। যখন মস্তিস্কের সাবস্টেন্সিয়া নাইগ্রায় নিউরনের মৃত্যু ঘটে তখন এই রোগের জন্ম হয়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এই রোগ। অল্প বা মধ্যবয়স্কদের তুলনায় ৬০ বছরের উর্ধ্ববয়সী মানুষের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা দেয়। নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এই রোগে অধিকতর প্রভাবিত হন।
রোগের লক্ষণ
মানুষ কেন এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্তু এখনও অজানা। তবে গবেষকদের ধারণা জেনেটিক বা পরিবেশগত উপাদানের জন্য এই রোগের সৃষ্টি হয়। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনও সঠিক প্রক্রিয়া নেই। ওষুধ ও অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে লক্ষণগুলো পরিচালনা করা সম্ভব।
১) হাত, পা, মাথা এবং মুখের থুতনি ও চোয়াল কেঁপে ওঠা।
২) ধীরে ধীরে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া।
৩) হাত পা ও শরীরের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া। ফলে, শরীরের যেকোনও অংশ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়, যেমন- হাত ঘোরাতে বেশ কষ্ট অনুভূত হয়।
৪) হাঁটাচলা ক্রমশ ধীরগতি হয় এবং জড়তা দেখা দেয়।
৫) গলার স্বরের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন- গলার স্বর ক্রমশ ভারী ও ক্ষীণ হয়ে যায়।
৬) নিজের মধ্যে অসম্ভব উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও অবসাদ জন্ম নেয়।
৭) স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
৮) কোষ্ঠকাঠিন্য বা চামড়ার নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
৯) ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে।
১০) কখনও ঘুম বেশি হওয়া বা একেবারে ঘুম না হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
১১) যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।
১২) খাবার গিলতে সমস্যা ও অনিয়ন্ত্রিত মূত্র ত্যাগ।
রোগ নির্ণয়
লক্ষণগুলো এবং কিছু মেডিক্যাল টেস্টের উপর ভিত্তি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। শারীরিক পরীক্ষা যেমন- MRI, CT scan, PET (Positron emission tomography) এবং SPECT (Single-photon emission computed tomography) দ্বারা রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা
এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনও সঠিক প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়নি। তবে, ডাবলিনের United neuroscience নামের একটি সংস্থা এই রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ২৪ জন রোগির উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় এবং তা সফল হয়। এই ভ্যাকসিন ছাড়াও UB-312 নামের আরেকটি ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন ছাড়া পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁটাচলার সমস্যাকে দূর করতে স্টেম সেল রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমেও চিকিৎসার কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ এই রোগে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণকারী কোষের মৃত্যু হয় এবং অঙ্গ সঞ্চালনে অক্ষমতা দেখা দেয়। এছাড়াও, যে পদ্ধতিগুলো রয়েছে, যেমন- ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ওষুধের সাহায্যে কিছুটা সুস্থ থাকা যায় এবং রোগটির বাড়াবাড়ি পর্যায় দেখা দিলে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে সাময়িক ভালো থাকা যায়। এমনকি ফিজিওথেরাপির সাহায্যেও এই রোগ কিছুটা ভাল করা যায়।
রোগ প্রতিরোধ:
১) নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে দিন শুরু করুন।
২) সাঁতার ও সাইক্লিং করতে হবে।
৩) হাত, পা, ঘাড় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।
৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও ভিটামিন যুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
৫) একই জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৬) ভিটামিন ডি ও সি যুক্ত খাবার বা ওষুধ সেবন করুন। কারণ, এটি পারকিনসন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।