1st Oct 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
৭০ তম বর্ষে এবারের থিমের নাম কথা। সৃজনে রয়েছেন সোমনাথ তামলী। গতবছর তাদের থিম ছিল মিলন।
এত শব্দ থাকতে কথা কেন?
পুজো কমিটির ভাবনা অনুযায়ী, আসলে এখানে মুখ নয়, কথা বলছে দশটা আঙুন, দুটো হাত আর দুটো পা। গাছগুলি কে দেখলে মনে হবে বুঝি মাঠ ভরা ধানের গাছ ফনফন করে বেড়ে উঠেছে। এ গাছ ফলের জন্য চাষ হয় না। ওই ধান জাতীয় গাছের চাষ হয় তার লম্বা লম্বা পাতার জন্য। এখানে আসলে মাদুর তৈরির কথা বলা হয়েছে।
কাপড়ে নকশা তোলা তো নদীয়া জেলার ফুলিয়া, শান্তিপুর, হুগলির ধনেখালি কিংবা বর্ধমানের সমুদ্রগড়ের ঘরে ঘরে ঘরে দেখতে পাই। বাড়ির সামনে লুটোচ্ছে সুতো। বাড়ির ভিতরে তাঁত চলছে খটা-খট খটা-খট। মাকু ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিকে ওদিকে। আর নকশা উঠে যাচ্ছে কাপড়ে।
তবে আমাদের গন্তব্য ফুলিয়া কিংবা সমুদ্রগড় নয়। থিম শিল্পী সোমনাথ তামলী আমাদের নিয়ে গিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং। আমরা গেলাম এক বৃদ্ধার বাড়িতে। চোখে চশমা সেই বৃদ্ধা তাঁতে মাদুর তৈরি করছেন। নকশা তোলা মাদুর। পুষ্পা রাণি জানার দুই হাতের দশ আংগুল, দুই হাত, দুই পা যেন কথা বলছে। আমাদের চোখের সামনে নকশার ছবি পরিষ্কার হযে এল। অবচেতন মন যেন কথা বলে উঠল, সর্বমঙ্গলা মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে। ঠিক ধরেছেন ওটা দশভূজার অবয়ব। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হলেন মা। যেন কৈলাশ থেকে অবতীর্ণ হলেন বৃদ্ধা মাদুর শিল্পীর কুটিরে।
মাদুর শিল্পীর পুষ্পা রাত্রির ঘর থেকে সেই দেবী মূর্তি এল পশ্চিম পুঁটিয়ারিতে। পল্লি উন্নয়ন সমিতির মন্ডপে। সঙ্গে সেই অশীতিপর মাদুর শিল্পী। মাদুর শিল্পের জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেযেছিলেন তিনি। সেই ১৯৮০ সালে। মাদুরের পাতার জায়গায় এখন বাড়বাড়ন্ত প্লাস্টিকের। দামে সস্তা, চটজলদি মাদুর তৈরি হওয়ার প্রকৌশল ক্রমেই পুষ্পারাণিদের একঘরে করে দিচ্ছে। কিন্তু নিজের শৈলী বিসর্জন দিতে চাননি ওই বৃদ্ধা। বাড়ির পাশের জমিতে ধান নয়, হাওয়ায় লুটোপুটি খাচ্ছে মাদুর ঘাসের পাতা। তার উপরে পড়েছে বৃষ্টির ফোটা। যেন অশ্রু টলটল করছে ওই শিল্পীর চোখে। এটা আনন্দাশ্রু। নিজের এলাকার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার আনন্দে। মন্ডপে মাদুরে অর্বিভূতা মাতৃ প্রতিমার চোখের দিকে দেখুন। খুঁজে পেতে পারেন সেই আনন্দাশ্রু।