13th Dec 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

শহরের বিভিন্ন মন্দিরে কী বিশেষ নিয়ম মানা হয় দীপান্বিতা অমাবস্যায়?

31st Oct 2024

প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি


কলকাতা ও তার আশেপাশেই রয়েছে অনেক কালী মন্দির। সেই সব মন্দিরের ভোগেও রয়েছে নানা বিশেষত্ব। মায়ের সেই ভোগ খেতে সারাবছর ভিড় করেন ভক্তরা। তবে জানেন কি কোন মন্দিরে কী ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে?

তারাপীঠ:

দেবী এখানে মা তারা রূপে পূজিত হন। সারা বছর নানা ব্যঞ্জন সাজিয়ে নিবেদন করা হয় মা কে। কালী পুজোর দিনেও থাকে বিশাল আয়োজন। সকালে নিবেদন করা হয় অন্নভোগ। থাকে পোলাও, খিচুড়ি এবং সাদা ভাত। সঙ্গে পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকম তরকারি। চারাপোনা, কাতলা, রুই-সহ বিভিন্ন মাছ রান্না করে নিবেদন করা হয়।

তান্ত্রিক মতে নিবেদিত বলির পাঁঠার মাংস কারণবারি সহযোগে নিবেদন করা হয় তারা মা কে। পায়েস, চাটনি, দই, এবং পাঁচ রকম মিষ্টি থাকে ভোগে। রাতের ভোগে প্রধানত থাকে খিচুড়ি। প্রায় দেড় কুইন্টাল খিচুড়ি রান্না করা হয়। এছাড়াও থাকে পাঁচ রকম সবজির ভাজা, তরকারি, শোল মাছ পোড়া, ও বলি-দেওয়া পাঁঠার মাংস। কারণবারি থাকবেই। মন্দির কতৃপক্ষ ছাড়াও মায়ের কাছে ভোগ নিবেদন করেন অনেক ভক্তরাও।

কঙ্কালীতলা:

বোলপুরে কোপাই নদীর তীরে কঙ্কালীতলা মন্দির। সতীপীঠের অন্যতম এই স্থানে মায়ের কাঁকাল অর্থাৎ কোমরের হাড় পড়েছিল বলে কথিত রয়েছে। আবার ৫১টি সতীপীঠের শেষ পীঠ হল কঙ্কালীতলা। এখানে মহাকালী রূপে পূজিতা হন মা। দুপুরে অন্নভোগে মাকে দেওয়া হয় ৫ রকমের ভাজা, ডাল, ফ্রায়েড রাইস, বাঁধাকপির তরকারি, চাটনি ও পায়েস।

দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবারও কঙ্কালীতলায় ভক্তদের ভিড়। করোনা আবহে রয়েছে কড়াকড়ি। রাতে শ্যামা মায়ের বিশেষ পুজো হবে। এখানে একটি কুণ্ড রয়েছে। মায়ের স্নানজল হিসেবে ব্যবহার হয় এই কুণ্ডের জল।

কালীঘাট:

খাস কলকাতায় মায়ের এই মন্দির শক্তিপীঠ হিসাবে বেশ খ্যাত। নিত্য কালীপুজোর সঙ্গে লক্ষ্মীপুজোও করা হয় মায়ের মন্দিরে। কালী পুজোর দিন যে পালাদার ভোগের দায়িত্বে থাকেন, তাঁরাই ভোগের সব খরচ বহন করেন। কালীঘাট মন্দিরে প্রায় ৬০০ সেবায়েত রয়েছেন। কালীপুজোর দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত পালাদার-সহ আরও প্রায় শ দেড়েক সেবায়েত ভোগ নিবেদন করেন।

অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার আগে মা কালীকে একপ্রস্ত ভোগ দেওয়া হয়। কালী পুজোয় মায়ের ভোগে থাকে শুক্তো, পাঁচ রকমের ভাজা যেমন- আলু, বেগুন, পটল, উচ্ছে অথবা করলা, ও কাঁচকলা ভাজা, পোলাও। থাকে তিন রকম মাছ রুই, ইলিশ, চিংড়ির পদ, কচি পাঠার মাংস, চাটনি ও পায়েস। শেষ পাতে মুখসুদ্ধি হিসাবে থাকে পান ও জল।

ডাকাতকালী মন্দির:

হুগলির সিঙ্গুরে অবস্থিত ডাকাতকালী মন্দিরও সেজে ওঠে। বৈদ্যবাটী- তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুষোত্তমপুর এলাকায় এই ডাকাতকালী মন্দির ঘিরে রয়েছে পুরনো ইতিহাস। এই কালী মন্দিরে নিয়ম করে নিত্য পুজো হয়। তবে কালী পুজোর সময়ে হয় বিশেষ পুজো। কালীপুজোর দিন মায়ের ভোগে থাকে লুচি ভোগ, পুজোর নৈবিদ্য হিসেবে দেওয়া হয় ফল। কালী পুজোর দিন চার প্রহরে চার বার পুজো ও পাঁঠা বলিও হয়।

তবে এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পুজোর আগে কেউ কালী প্রতিমা বাড়িতে রাখেন না। মল্লিকপুর গ্রামে এই ডাকাতকালী মন্দির থাকার কারণে আশেপাশের জামিনবেরিয়া, পুরষোত্তমপুর ও মল্লিকপুর গ্রামে কোনও বাড়িতে কালীপুজো হয় না। এমনকী কারও বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো থাকে না বা ক্যালেন্ডারে আঁকা থাকে না কালী মূর্তির ছবি। বছরে একবার কালীপুজোর দিন গ্রামের শুদ্রদের আনা গঙ্গাজলে ঘটের জল পাল্টানো হয়। ঘটের জল পাল্টানোর সময় মন্দিরের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়। সেইসময় মহিলাদের মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষেধ থাকে।

দক্ষিণেশ্বর:

দেবী এখানে পূজিতা হন ভবতারিণী রূপে। পন্ডিত রামকুমার চট্টোপাধ্যায় যে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা লিপিবদ্ধ রয়েছে শ্রী শ্রী জগদীশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানী নামেই। দেবীর ভোগেও আছে নানা বিশেষত্ব। অন্নভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় ভাত ও ঘি ভাত। থাকে পাঁচ রকম তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজা ও পাঁচ রকমের মাছ। সঙ্গে থাকে চাটনি, পায়েস এবং পাঁচ রকমের মিষ্টি। বিকেলের ভোগে থাকে নানা রকমের ফলের সম্ভার। এক সময় বলি প্রথা থাকলেও, বহু কাল তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই মায়ের ভোগে থাকে না কোনও মাংস।

Archive

Most Popular