7th Nov 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রাচীন বাংলায় গৌড় রাজ্য এবং বঙ্গ রাজ্যের অংশ ছিল। মুর্শিদাবাদের আগের নাম ছিল মুখসুসাবাদ, লোকে বলতো মুখসুদাবাদ। তারও আগে নাম ছিল সৈদাবাদ। আইন-ই-আকবরিতে উল্লেখ আছে, মখসুস খাঁ নামে একজন ওমরাহ ছিলেন, মুঘল সম্রাট আকবরের অধীনে রাজমহলের ফৌজদার। ১৭০৪ সালে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ রাজস্ব আদায় কেন্দ্র ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত করেন মুখসুদাবাদে। তারপর মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অনুমতি পেয়ে নিজের নামে মুখসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মুর্শিদাবাদ। এখানে এলে খাগড়ার ছানাবড়া, আজিমগঞ্জের বরফি সন্দেশ, রঘুনাথগঞ্জের রসকদম্ব, ধুলিয়ানের খোয়া চমচম, কমলাভোগ, ক্ষীরমোহন ইত্যাদির স্বাদ অবশ্যই নেবেন, ভুলবেন না।
ছানাবড়া
সৃষ্টির ইতিহাসে দুটি কিংবদন্তি প্রচলিত। একটিতে বলা হয় ছানাবড়া সৃষ্টির ইতিহাস নবাবি আমল থেকেই। সেকালে নবাব অতিথি অভ্যর্থনা করার জন্য বিশালাকৃতি ছানাবড়া তৈরি করে অতিথিদের অবাক করে দিতেন। আর অবাক হয়ে অতিথিদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত বলেই এর নাম ছানাবড়া। অপর কিংবদন্তি প্রায় ২০০ বছর আগে কাশিমবাজারের রাজা শ্রী মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী সাহেবদের মিষ্টি উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। রাজা তাঁর ভাণ্ডারের কারিগরদের মিষ্টি তৈরির আদেশ দেন। ছানাকে ময়দার সঙ্গে মিশিয়ে ঘি দিয়ে ভাজেন কারিগররা। সেই ভাজা মিষ্টি গাঢ় রসে ডুবিয়ে দেন। অপূর্ব সেই স্বাদ। সেই মিষ্টি ইংরেজদের উপহার দেন রাজা। তাতে বেশ সুনামও করেন ইংরেজরা। ইংরেজরা মিষ্টির নাম জানতে চাইলে রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র বলেন, যেহেতু ছানাকে ঘি দিয়ে ভাজা হয়েছে, তাই এর নাম ছানাবড়া।
কী কী লাগবে
ছানা ২৫০ গ্রাম, মিহি করে বাটা ছোলার ডাল ৩ টেবিল চামচ, চিনি ২০০ গ্রাম, সাদা তেল অথবা ঘি ভাজার জন্য, এলাচদানা ২০টি, সামান্য খাবার সোডা
কীভাবে বানাবেন
ছানার জল ঝরিয়ে নিন। তারপর হাত দিয়ে ভালো করে মেখে ছোলার ডালের সঙ্গে ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এইসময় খাবার সোডা দিন। এবার গোল গোল বড়ার মতো বানিয়ে প্রত্যেকটির মধ্যে একটি করে এলাচদানা ভরে দিন। তেল গরম হলে বড়াগুলো লাল করে ভেজে তুলে নিন। চিনির পাতলা রস বানিয়ে বড়াগুলো ছেড়ে দিন। ঠান্ডা হলে রস থেকে তুলে পরিবেশন করুন।
মুরগির কোরমা
মুঘল দরবারের রসুইঘরে প্রায়ই কোরমা প্রস্তুত করা হত, যেমন বিখ্যাত সাদা কোরমা। বলা হয়, তাজমহল উদ্বোধনের সময় শাহজাহান এবং তাঁর অতিথিদের পরিবেশন করা হয়েছিল। ইরানি ঘোরমেহ থেকে কোরমা। তুর্কিতে একে বলে কোভারমা বা কাভারমা। কোরমা মানে ভাপে রান্না। ভারতে মুঘল আমলে এই পদের প্রচলন হয়। ভারতের মুঘল আমলের দিল্লি নিয়ে লেখা বেশ কটি বইয়ের রচয়িতা রানা সাফভি বলেছেন, কোরমা শব্দটা প্রথম পাওয়া গেছে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময়ে। তিনি বলেছেন, সম্ভবত আঠারো শতকের কোনও এক সময়ে গুরকানি (মুঘলরা নিজেদের এই নামেই পরিচয় দিতেন) রন্ধনশালায় পারস্যের মাংসের স্টু মিশে গিয়েছিল মশলা, দই, কাঠবাদাম, রসুন আর অন্যসব উপকরণের সঙ্গে। এর ফল হিসেবে বেরিয়ে এসেছিল ঘন, ঝাঁজালো কারি; যার ওপরে পেঁয়াজের বেরেস্তা ছড়ানো থাকত। মুর্শিদাবাদে নবাবি আমলে এই কোরমা খুব জনপ্রিয় হয়।
কী কী লাগবে
মুরগি ২টি (১৬ টুকরো), টকদই আধা কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ কাপ, পেঁয়াজ মিহি করে কাটা ২ কাপ, ২-৩টি এলাচ ও দারুচিনি, তেজপাতা ২টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, কাঁচালঙ্কা ৭-৮টি, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, কিশমিশ ১৫-২০টি, কাঠবাদাম আর পেস্তা বাদামকুচি ৩ টেবিল চামচ, মাওয়া আধা কাপ গ্রেট করা, দুধ ১ কাপ, চিনি ১ চা চামচ এবং আলুবোখারা ৫-৬টি
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে মুরগির টুকরোগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর এতে মাওয়া, দুধ, কিশমিশ, বাদাম ও কাঁচালঙ্কা বাদে সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। একটি বড় কড়াইয়ে তেল ও ঘি একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে মিহি করা পেঁয়াজ দিয়ে বাদামি করে ভেজে মুরগির টুকরোগুলো তাতে দিয়ে ভালো করে কষাতে থাকুন। মুরগি কষানো হয়ে গেলে তাতে পরিমাণমতো জল, দুধ, মাওয়া, কিশমিশ, বাদাম ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে অল্প ঢেকে প্রায় ২০ মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিজের পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।