15th Nov 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
শ্রীকৃষ্ণ জাগতিক ক্লেশ দূর করে এদিন মুক্তি দেন তাঁর ভক্তদের। এই উদযাপনকে কেন্দ্র করেই রাস উৎসব। রাসপূর্ণিমাকে কার্তিক পূর্ণিমাও বলা হয়।
রাস এসেছে রস; থেকে। রস মানে আনন্দ, দিব্য অনুভূতি, দিব্য প্রেম। লীলা অর্থ নৃত্য। শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে লীলা করবেন। চীরহরণের পর গোপীদের সঙ্গে তাঁর এই লীলা। গোপীরা অধীর অপেক্ষা করছে কবে তাদের ডাক আসবে তাদের প্রাণপ্রিয়সখা শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে। হর্ষচরিতের টীকাকার শঙ্করের মতে, রাস হল এক ধরনের বৃত্তাকার নাচ যা আট, ষোলো বা বত্রিশ জনে সম্মিলিতভাবে উপস্থাপনা করা যায়। আজ, রাসপূর্ণিমা।
অনেকে মনে করেন, ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মহামিলনই রাস। পুরাণে শারদ রাস ও বসন্ত রাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেটি সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। বাংলায় যুগ যুগ ধরে শ্রীচৈতন্যদেবের রাস উৎসব পালনের কথা শোনা যায়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং গিরিশচন্দ্রের পরবর্তী সময়কালে বাংলায় রাস উৎসবের বহুল প্রচলন ঘটে।
রাস শব্দের আরেক অর্থ ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, কোলাহল, বিলাস, ক্রীড়া এবং অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে আনন্দঘন নৃত্যবিশেষ। শ্রীকৃষ্ণের জীবনী প্রধানত শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণেই বর্ণিত রয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতের একটি বিশেষ অংশ হল রাসলীলা। শ্রীমদ্ভাগবতের বর্ণনা এবং প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনেই বৃন্দাবনে গোপিনীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীরাধার সঙ্গে রাস উৎসবে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। নদিয়ার শান্তিপুর ও নবদ্বীপে শুধু রাধা-কৃষ্ণ নয়, পূজিত হন অন্যান্য দেব দেবীও। প্রায় টানা তিন থেকে চারদিন মহাসমারোহে পালিত হয় এই উৎসব। এমনকি উৎসবের শেষ দিন বের হয় শোভাযাত্রা।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের মথুরা ও বৃন্দাবনে, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া-সহ জায়গায়, ওড়িশা, আসাম ও মণিপুরে রাসযাত্রার উৎসব বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। রাস যাত্রা সনাতন সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক উৎসব। রাস মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণ কার্তিক মাসের এই পূর্ণিমাতেই বৃন্দাবনে রাধা-সহ সখীদের মেতেছিলেন রাসলীলা। শ্রীশ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু পরবর্তীকালে এই উৎসব মহোৎসবে পরিণত করেন।
চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন নবদ্বীপে। একথা যদি সত্যি হয় তাহলে স্বীকার করে নিতে হয় যে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই রাসের সূচনা হয়েছিল। তবে চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর নবদ্বীপের বৈষ্ণব আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। গৌরাঙ্গ-পরিজনেরা বাধ্য হয়ে নবদ্বীপ ত্যাগ করে স্থানান্তরে গমন করেন। ফলে বৈষ্ণবীয় উৎসব অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নবদ্বীপে যে রাস উৎসবের সূচনা হয় তা অভিনব এবং বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে তা অদ্বিতীয়।
রাস পূর্ণিমা কবে?
এই বছর রাস পূর্ণিমা পড়েছে ১৫ নভেম্বর, শুক্রবার।
পূর্ণিমার সময় - ১৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার শেষ রাত ৫/১৩/৩১ মিনিট থেকে ১৫ নভেম্বর, শুক্রবার রাত ৩/২/৩৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে পূর্ণিমা।
অমৃতকাল - দিবা ঘ ৬।৫২ মধ্যে ও ৭।৩৫ গতে ৯।৪২ মধ্যে ও ১১।৫৩ গতে ২।৪৩ মধ্যে ও ৩।২৩ গতে ৪।৫০ মধ্যে এবং রাত্রি ৫।৪২ গতে ৯।১৫ মধ্যে ও ১১।৫৬ গতে ৩।২৯ মধ্যে ও ৪.২৩ গতে ৫.৫৫ মধ্যে।