3rd Dec 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই বিশ্বনাথের মন্দির। মনে করা হয়, এটিই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম লিঙ্গ। পুরাণে কথিত আছে, স্বয়ং মহাদেব একবার ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে কলহ থামাতে একটি আলোর শিখায় স্বর্গ, মর্ত্য এবং পৃথিবীকে বিদ্ধ করেছিলেন। সেই আলোর শিখা থেকেই এই জ্যোতির্লিঙ্গের সৃষ্টি।
মন্দিরটির গঠনশৈলীও অসাধারণ। এর চূড়াটি ১৫.৫ মিটার পুরু সোনার পাত দিয়ে বাঁধানো। সেই কারণে এটি স্বর্ণ মন্দির নামেও পরিচিত। গর্ভগৃহে রয়েছে শিবলিঙ্গ। এই মন্দিরের কাছে রয়েছে মণিকর্ণিকা ঘাট, যা শাক্তদের পবিত্র তীর্থ এবং অন্যতম শক্তিপীঠ। শৈব সাহিত্যে দক্ষযজ্ঞের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা শক্তিপীঠের উৎস সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক আখ্যান। কথিত আছে, শিব পার্বতির বিবাহ হয়েছিল বারাণসী ধামেই। এছাড়া সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন। শিবরাত্রির মহাপুজোতে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় মিছরি, শুকনো ফল এবং নানারূপ মিষ্টি। এছাড়াও বেনারসি পান ভক্তদেরকে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।
শিবপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে রত হন। তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে ভেদ করে জ্যোতির্লিঙ্গ নামে এক বিশাল অন্তহীন আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা এই লিঙ্গের উৎস অনুসন্ধান করতে যান। ব্রহ্মা যান উপর দিকে এবং বিষ্ণু নামেন নিচের দিকে। কিন্তু তারা কেউই এই লিঙ্গের উৎস খুঁজে পাননা। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি উৎসটি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব তখন একটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে অনুষ্ঠানে তার কোনো স্থান হবে না। অন্যদিকে সত্য কথা বলার জন্য তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ করে বলেন যে সৃষ্টির অন্তিমকাল পর্যন্ত তিনি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সেই অখণ্ড সর্বোচ্চ সত্যের প্রতীক, যার অংশ শিব নিজে।
বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব। পরবর্তীকালে ইন্দোরের রানি অহল্যা বাই হোলকার নতুন করে তৈরি করেন ওই মন্দির। দেবালয়ের চূড়া সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেন পঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিং সিং।