6th Dec 2024
ভ্রমণ
কমলেন্দু সরকার
একটা সময় ছিল দিপুদা। দিঘা, পুরী, দার্জিলিং। এখন বাঙালির বেড়ানোর সীমা অপরিসীম। বহু বাঙালি বরাবরই ভ্রমণপ্রেমী। দু চারদিনের ছুটি মিললেই পিঠে রুকস্যাক আর পকেটে ট্রেনের টিকিট। সে রিজার্ভেশন থাক আর না-ই থাক। আগে অবশ্য এসব ব্যাগট্যাগ ছিল না, ছিল হোল্ডঅল। তার মধ্যে বিছানাপত্তর, রান্নার সাজসরঞ্জাম, এমনকী থাকত পাম্প দেওয়া কেরোসিন স্টোভও। বাড়ির কর্তা পরিবারকে নিয়ে চলতেন পশ্চিম ভ্রমণে। পরবর্তী সময়ে বেড়ানোর সীমা বেড়ে হল দার্জিলিং। পরে যোগ হল দিঘা। পুরী অবশ্য বহু যুগ ধরে বাঙালি যাচ্ছেন। সেই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যর আমল থেকে। ধান ভাঙতে শিবের গীত গেয়ে লাভ নেই।
বর্তমানে দার্জিলিং বাঙালির পছন্দের জায়গা হলেও, আশপাশে ভিড় করছেন বেশি। এখন হোমস্টের যুগ। তাই হোটেলের পরোয়া না করে ঢুকে যাচ্ছেন স্থানীয় মানুষদের বাড়িতে। তাঁরাও অতিথিদের আপ্যায়নে সদা ব্যস্ত। কিছু অর্থের বিনিময়ে ভ্রমণপিপাসুদের পিপাসা মিটিয়ে থাকেন। চেনা ছকের বাইরে এমনই এক জায়গা চটকপুর। চটকপুরের রূপের চটক নয়, রূপ-মাধুর্যের মায়াবী সৌন্দর্য! ভাল না বেসে পারবেন না!
দার্জিলিং থেকে মাত্র ২২ কিমি। সেঞ্চল ওয়াইল্ড লাইফ স্যানচুয়ারির ভিতর ছোট্ট একটি ইকো ভিলেজ চটকপুর। এখানে সবকিছুই পরিবেশবান্ধব। প্রায় আট হাজার ফুট উঁচুতে ছোট্ট মায়াবী গ্রামটিতে বসে উপভোগ করতে পারবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপসৌন্দর্য আর অরণ্য পাহাড়ের মাদকতা! মাতাল করে দেয় চটকপুরের প্রকৃতি! সত্তর দশকের মাঝামাঝি সেঞ্চল অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পাইন, ওক, বার্চ, জুনিপার আর বিভিন্ন রকমের ফার্ন দেখা দেখা যায় অরণ্যে। আর অরণ্যে লেপার্ড, ভালুক, বিভিন্ন জাতের বাঁদর ইত্যাদি দেখা যায়। আর আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এছাড়াও এই গ্রামে আছে একটি নজরমিনার বা ওয়াচটাওয়ার। যেখানে আপনাকে নিয়ে যাবেন স্থানীয় গাইড। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত এককথায় অপূর্ব!
আর নিয়ে যাবেন কালা পোখরি। অরণ্যের ভিতর একটি লেক। এই গ্রামে লোকজন খুব বেশি নেই। তাই খুবই নিরিবিলি নির্জন। তাই কানে আসে বাতাস আর পাতা খসার শব্দ! পাহাড় আর অরণ্য ঘেরা ছোট্ট এই গ্রামের মনমাতানো প্রাকৃতিক পরিবেশ নিমেষেই হৃদয় মন দুইই হরন করে নেয় চটকপুরে আগত অতিথিদের! চটকপুর একবার এলে তাঁরা কেউই কখনও ভুলতে পারবেন না। চটকপুরের রূপমাধুরী এমনই রূপকথার পাহাড়ি গ্রাম! চটকপুরের প্রধান আকর্ষণ পর্বতমালার অসাধারণ দৃশ্য। গ্রামটির চারপাশে শুধুই সবুজ আর সবুজ। আর তারই ফাঁকে উঁকি দেয় বরফাচ্ছাদিত দিগন্ত জোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা। এমন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় আকাশ পরিষ্কার থাকলে। গভীর অরণ্য নৈঃশব্দ্যময়। নৈঃশব্দ্য ভাঙে পাখির ডাকে, পাখির গানে। পাহাড়ের ধাপে ধাপে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা সুন্দর কাঠের বাড়িগুলো লাগে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো! আর তারই মাঝে বিশাল বিশাল গাছগুলোর নীচে পায়ে চলা পথ অপেক্ষায় আছে পর্যটকদের।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা বা হাওড়া স্টেশন থেকে এনজেপি। এখান থেকে চটকপুর ৮৫ কিমি। ঘণ্টা তিনেক লাগে। জ্যাম থাকলে চার ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন: কুলুং হোমস্টে, প্রতিদিন মাথাপিছু খাওয়াদাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৫০০ টাকা। যোগাযোগ: বিনোদ রাই, মোবাইল- 07602299041. বিনোদকে আগে থেকে বললে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে এনজেপি স্টেশনে। ভাড়া- ৩৫০০টাকা। স্থানীয় গাইডের পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা।