9th Dec 2024
স্বাস্থ্য
সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
বাড়ির আশেপাশে অবহেলায় গজিয়ে ওঠা জঙ্গল কিংবা বাগানের আগাছা মনে করে উপড়ে ফেলে দেবেন না, সজনা পাতা থেকে শুরু করে বাসক, নিম , তুলসী, পলতা মায় ঘেঁটু কিংবা হিঞ্চে সবই আমাদের নানান উপকারে লাগে। নানান শাকপাতা, লতা গুল্মের ওষধি গুণ সম্পর্কে সবিস্তারে জানালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের -RBSK-দে পাড়া (চাঁদড়া) ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা সুমিত সুর।
(স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার)
সজনা –
শহর কলকাতাতে তো বটেই মফঃস্বলেও সজনা গাছের অভাব নেই। এগাছের ডাঁটা থেকে শুরু করে গাছের পাতা, ফুল এসবই অত্যন্ত উপকারি। প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালশিয়াম, আয়রন, জিংক, ভিটামিন – এ, ভিটামিন – বি_১, বি_২, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম কী নেই সজনে ডাঁটা, ফুল আর পাতায়। এক কাপ সজনা পাতা ও দুধের তুলনা করলে দুধের ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং দ্বিগুণ বেশি প্রোটিন পাবেন এই হেলাফেলায় বেড়ে ওঠা গাছের পাতায়। গাজরের থেকে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন-এ আছে এই পাতায়, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খেলে ভাল থাকা যায়। সজনা ডাঁটা ও পাতায় কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম থাকে। এক চামচ শুকনো সজনা পাতার গুঁড়ো থেকে ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রন ও ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। সজনা ফুল ও পাতায় থাকা আইসোথিয়ো কাইনেটস নামক এক অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি হজমের সমস্যার সমাধান করতে পারে। রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় নেয় সজনা ফুল, ডাঁটা ও পাতা। সপ্তাহেও দু তিন দিন খেতে পারলে অনেক সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন। আয়ুর্বেদ মতে অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে যতদিন পাওয়া যায় সজনা ফুল সেদ্ধ করে খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সজনা পাতা ভাল করে পরিষ্কার করে মিক্সিতে বেটে অল্প সৈন্ধব নুন মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা ও হজম সংক্রান্ত গোলমালের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
বাসক –
ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি কাশি ঘরে ঘরে। বাড়ির পাশের জঙ্গলে হয়ে থাকা বাসক পাতা ফুটিয়ে মধু সহযোগে গরম গরম খেলে সর্দিকাশি কাছে ঘেঁষবে না। যাঁদের ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি, হাঁপানি আছে তাঁরা সকালে খালি পেটে বাসক পাতার রস মধু দিয়ে খেলে জমা কফ বেরিয়ে আসবে এবং সর্দি কাশির বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরি হয়। বাসক পাতায় ভ্যাসিসিন নামে বিশেষ এক উপাদান থাকে। এটিই সর্দি কাশির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রনিক হাঁপানি সারাতে সাহায্য করে। নিয়মিত বাসক পাতার রস খেলে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে, একই সঙ্গে যাঁদের রক্তাল্পতা আছে তাঁদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। যাঁদের ব্রণ হয়, তাঁদের জন্যেও বাসক পাতা খুব উপকারি, কাশির সঙ্গে সঙ্গে ব্রণও কমে যায়। বাতের ব্যথা নিরাময় করতেও বাসকের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। হাঁটুর ব্যথা হোক কিংবা অন্যান্য গেঁটে বাত বাসক পাতা বাটার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে গরম করে লাগালে ব্যথার কষ্ট কমে।
তুলসী –
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশের মানুষ তুলসী গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতন। তাই বাড়িতে বাড়িতে তুলসী মঞ্চ। পুজো পাঠে তো লাগেই রোজকার জীবনের নানান ঘাত প্রতিঘাত সামলাতে পারে তুলসী। এতে আছে ফ্ল্যাভনয়েড , পলিফেনল , ভিটামিন এ , সি সহ অজস্র অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। যে কোনও ক্রনিক রোগের বাড়বাড়ন্ত আটকে দিতে এর জুড়ি মেলা ভার । রোজ সকালে তুলসী পাতা ও মধু একত্রে দু চার দানা গোলমরিচের সঙ্গে চিবিয়ে খেলে ক্রনিক কাশি, হাঁপানি ,শ্বাসকষ্টের উপশম হয়। এই পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সর্দিকাশি জনিত সমস্যার মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । তুলসী পাতা ফুটিয়ে চায়ের মত করে খেলে সিজিনাল জ্বর সর্দির ঝুঁকি কমে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্যেও এই পাতা অত্যন্ত ভাল। সান বার্ন কাটিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তবে ডায়বিটিসের মত অসুখে চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে তুলসী ব্যবহার করুন। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলে বিপদে পড়বেন।
থানকুনি –
বাঙালির পেটরোগা বদনাম চিরকালের। এদিকে জিব সব সময় নতুন স্বাদের খোঁজ করে চলেছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন পৃথিবীর নানান দেশের মুখোরোচক খাবারের স্বাদে মজেছে আম বাঙালি। তবে হ্যাঁ, হজম ক্ষমতা বাড়াতে বা অ্যাসিডিটি কমাতে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় অ্যান্টাসিডের তুলনায় থানকুনি পাতা অনেক এগিয়ে। হজমের গোলমাল হোক বা পেটখারাপ থানকুনি পাতা বেটে কড়ায় নেড়ে নিয়ে গরম ভাতে মেখে খেলেই বদহজম পালাতে পথ পাবে না। এই পাতাতেও আছে প্রচুর ভিটামিন সি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মুখের বা জিবের ঘা হলে থানকুনি পাতার ঝোল খেলে নিরাময় হবে। গলা ব্যথা থেকে সর্দি সবেরই যম থানকুনি।
এবারে আসা যাক ১৪ শাকের প্রসঙ্গে। সবে কালিপুজো শেষ হল। এই সময়ে ১৪ শাক খাওয়া আমাদের ট্রাডিশন। ১৪ শাকের মধ্যে অনেকগুলিই আমাদের বাড়ির আশেপাশে মিলবে। একে একে জেনে নেওয়া যাক এঁদের উপকারিতার কথা।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নানান গ্রন্থ যেমন চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা,অষ্টাঙ্গ হৃদয় , ভাবপ্রকাশ ইত্যাদিতে রয়েছে এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা।
যেমন:
ওলং কেমুকবাস্তূকং, সার্ষপং নিম্বং জয়াং।
শালিঞ্চীং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ূচীন্তথা।
ভণ্টাকীং সুনিষন্নকং শিবদিনে খাদন্তি যে মানবাঃ,
প্রেতত্বং ন চ যান্তি কার্ত্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।
এই চোদ্দো শাকগুলি হল ওল, কেঁউ, বেথো বা বেথুয়া, কালকাসুন্দা, সরষে, নিম, জয়ন্তি, শালিঞ্চা, হিংচে, পলতা, শুলকা, গুলঞ্চ, ঘেঁটু বা ভাট ও শুষনি। সবগুলোই বহুমুখী ভেষজগুণ সম্পন্ন এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে কার্যকর। অন্যদিকে এই সময়ের পর্যাপ্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে আয়ুর্বেদের শারঙ্গধর সংহিতা মতে,
কার্তিকস্য দিনান্যষ্টাবষ্টাবাগ্ৰহনস্য চ।
যমদংষ্ট্রা সমাখ্যাতা অল্পাহারী স জীবতি।।
(শারঙ্গধর সংহিতা-২/২৫)
অর্থাৎ এই শ্লোকের অন্তর্নিহিত অর্থ হলো, কার্তিকমাসের শেষ আটদিন এবং অঘ্রায়ন মাসের প্রথম আটদিন যমদংষ্ট্রা নামে পরিচিত।
এই ১৪প্রকার শাকের উল্লেখ যেগুলি অতি সংক্ষিপ্ত রূপে নিম্নবর্ণিত হলো:--
১. ওল-
বিজ্ঞানসম্মত নামঃ Amorphophallus paeoniifolius, গুরুত্বপূর্ণ কন্দজাতীয় উদ্ভিদ টির কচি পাতা, এবং কন্দ হিসাবে ওল সবার প্রিয়। মাটির নিচে থাকা কন্দ থেকেই পাতা জন্মায়। ওলের কন্দ অর্শ, প্লিহার বৃদ্ধির রোগ ও রক্ত আমাশার চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়।
২. কেঁউ-
এই শাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাওয়া যায় । ভারতে রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে কেঁউ যথেষ্ট দেখা যায়। মাটির নিচে এর কন্দ জন্মায়। অসাধারণ ভেষজগুণের জন্য এই উদ্ভিদটি প্রাচীনকাল থেকে ভারতে সমাদৃত নরম পাতা। কেঁউ পাতার রস ভালো হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, কৃমি, চুলকানি, ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়।
৩. বেতো বা বেথুয়া
বিজ্ঞানসম্মত নামঃ Chenopodium album গ্রাম বাংলার খুব পরিচিত শাক হল বেথুয়া বা বেতো। আপনা-আপনি জন্মায় আগাছার মতো, পাতার রঙ ফ্যাকাশে সবুজ। বেথুয়া শাকে প্রচুর ভিটামিন–এ, ভিটামিন–সি, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ৮ টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি, মুখে ঘা, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী।
৪.কালকাসুন্দে-
এই শাক আসলে ক্রান্তীয় আমেরিকা থেকে এসেছে। এই গুল্ম জাতীয় গাছটি এখন সারা ভারতে রাস্তার দু’ধারে, সর্বত্র দেখা যায়। ভোজ্য অংশ হিসেবে নরম পাতা , অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, জ্বর, ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
৫. সরিষা -
বিজ্ঞানসম্মত নামঃ Brassica juncea , সারা ভারতে বহুদিন ধরেই রবি শস্য হিসেবে এর চাষ হয়ে আসছে। গ্রিন স্যালাড হিসেবেও সরষে শাক কাঁচা খাওয়া হয়। আর মশলা হিসেবে সরষের ব্যবহার তো সারা ভারতেই প্রচলিত। ভিটামিন K, C ও E এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক।
৬. নিম
নিম গাছের গুণের কথা বলে শেষ করা যায় না। কচি নিমপাতা বেগুন দিয়ে ভাজা খেতে যেমন স্বাদু তেমনই এর গুণাগুণ। নিমের বিজ্ঞানসম্মত নাম Azadirachta indica এই বহুবর্ষজীবী বৃক্ষটিকে আমরা সবাই চিনি। ভোজ্য অংশ হিসেবে কচি পাতা ও ফুল অধিক ব্যবহৃত । নিম পাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমুত্র এর অন্যতম ঔষধ। এমনকি নিমের বাতাসও শরীরের জন্য খুব ভাল।
৭. জয়ন্তী-
সংস্কৃত ‘জয়ন্তিকা’ শব্দ থেকে জয়ন্তী নামের উদ্ভব। কচি সবুজ টাটকা পাতা, উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, কৃমিনাশ, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজ করে।
৮.শালিঞ্চ বা শিঞ্চে-
বিজ্ঞানসম্মত নামঃ Alternanthera sessilis অনেকে এই শাককে সাঁচিশাকও বলে। নিচু জমিতে সামান্য আর্দ্রতা থাকলেই সেখানে শালিঞ্চা জন্মায়। সাধারণ মানুষ একে আগাছা বলেই মনে করে। পাতাসহ ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ন, চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে।
৯. গুড়ুচী-
বিজ্ঞানসম্মত নামঃ Tinospora cordifolia হৃৎপিন্ড আকৃতির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় আয়ুশ মন্ত্রক একটি বছর ধরে অভিযান চালিয়ে ছিল এই গাছের গুণাবলী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে । ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায়।
১০. পলতা পাতা
সবজি হিসেবে পটল যতটা জনপ্রিয় শাক হিসেবে পটল পাতা বা পলতা ততটাই অপরিচিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহুল রোগে ব্যবহৃত পাতা ও ফল রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসেবে এবং লিভার ও চর্ম রোগ সারাতে পটল পাতা খুব কার্যকর। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে ব্যবহার হয়। পটল পাতা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পটল পাতা ক্ষিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। ক্ষতস্থানে পটল পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
১১. শেলুকা –
বিজ্ঞানসম্মত নামঃ Anethum graveolens কাঁচা গাছ ও বীজ মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। আর শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাতাসহ ডগা। সংস্কৃতে শুলফাকে বলে শতপুষ্প। ফুলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ। পুরো গাছটারই একটা তীব্র সুগন্ধ আছে। বীজ সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত ও স্বাদে তেতো। পাতাসহ ডগা এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর, ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর।
১২. হিঞ্চে –
হেলেঞ্চা বা হিংচে হল জলজ লতানে গাছ। এর মূল জলাশয়ের পাড়ে কাদা-মাটির মধ্যে থাকে, আর আগা ছড়িয়ে পড়ে জলে বা কাদা মাটির উপর। পাতাসহ ডগা। আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে তাই রোগপ্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।
১৩. ঘেঁটু /ঘন্টাকর্ণ –
ঘেঁটু হল ভেষজগুণসম্পন্ন বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পাতাতে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে এছাড়া চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
১৪. শুষনি -
ভারতসহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, চিন, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে শাক ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে শুষনি খুব পরিচিত। ভোজ্য অংশ পাতা, নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়।