5th Sep 2024
স্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
অসংখ্য পেটরোগা বাঙালি কখনও ডায়ারিয়া, কখনও বা গ্যাস কিংবা অ্যাসিডিটি, মাঝে মধ্যে গা-গুলিয়ে বমি নিয়ে জেরবার। এঁদের একমাত্র চিন্তা, যা খাবার খাচ্ছেন তা হজম হবে? নাকি বদ হজম আর ডায়ারিয়া কিংবা অ্যাসিডিটি নিয়ে ভুগতে হবে! মূলত ডিসপেপসিয়ার জন্য এমনটি হয়, বলছেন চিকিৎসকগন। হজম সংক্রান্ত ও পেটের নানা সমস্যাকে একসঙ্গে ডিসপেপসিয়া বলা হয়। অনেকের ধারণা, অ্যাসিডিটি মানেই ডিসপেপসিয়া। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। গা-বমি ভাব, অম্বল, পেট গুড়গুড় করা, খিদে পেলে বা অন্য সময় পেট ব্যথা, গলা জ্বালা, কখনও কখনও পেটের মধ্যে গ্যাসহয়ে পেট ফুলে যাওয়া, আবার পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়ারিয়া হওয়া সব একসঙ্গে হলে তাকে ডিসপেপসিয়া বলা হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া দেখা যায়। অর্থাৎ শরীরের বিশেষ কোনও গুরুতর সমস্যা নেই। সঠিক ডায়েট না করার জন্য ও সামান্য কিছু সমস্যার কারণে এই ধরনের পেট সংক্রান্ত গোলমাল দেখা দেয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০% মানুষ ফাংশনাল ডিসপেপসিয়ায় ভোগেন। এই ধরনের সমস্যা মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ততা থাকলে সমস্যা বাড়ে।
ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া থাকলে প্রায়শই পেটে ব্যথা করে। পর্যায়ক্রমে ডায়ারিয়া আর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রায় ৭০-৭৫% মানুষের সাধারণ ডিসপেপসিয়া থাকে। বাকিদের ডিসপেপসিয়ার পিছনে থাকতে পারে অন্যকোনও জটিল শারীরিক সমস্যা। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে অরগ্যানিক কারণ। পেটের অসুখ অথবা লাগাতার গ্যাস ও অ্যাসিডিটি হলে নিজেরা ডাক্তারি না করে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, লাগাতার পেটের সমস্যা হতেই থাকলে এবং মলের সঙ্গে রক্তপাত হলে বা কালো মলত্যাগ করলে কিছু টেস্ট করানো প্রয়োজন। রোগীর বয়স যদি ৫০-এর উপরে হয় ও রক্তাল্পতা থাকে, তখন গুরুতর অসুখের সম্ভাবনার কথা ভাবতে হয়। এই সব লক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় খাবার গিলতে অসুবিধে হলে এবং পেটে হাত দিয়ে কোনও লাম্প বোঝা গেলে ম্যালিগন্যান্সির আশঙ্কা করা হয়। এক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করতে হতে পারে। তবে বেশির ভাগ সমস্যাই বিনাইন, অর্থাৎ সাধারণ সমস্যা, যা ওষুধ ও ডায়েটের সাহায্যে দূর করা যায় সহজেই।
ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া থাকলে কিছু কিছু খাবারের কারণে সমস্যা বাড়ে, বললেন নিউট্রিশনিস্ট ইন্দ্রাণী ঘোষ। যাঁদের গ্যাস, অম্বল আর কনস্টিপেশন অথবা ডায়ারিয়ার সমস্যা আছে, মাঝে মাঝে পেটের ব্যথায় কষ্ট হয়, দেখা গিয়েছে বেশ কিছু খাবার খেলে কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। সেই সব খাবার একেবারেই খাবেন না। দুধ, শাক, গমের প্রোডাক্ট, যেমন রুটি, বিস্কুট, ডিপ ফ্রাই অর্থাৎ তেলেভাজা খাবার, মিষ্টি, কফি, ফাস্টফুড যেমন রোল, চাউমিন ইত্যাদি রোজকার খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। বাড়িতে রান্না খাবার খেতে হবে, নুন খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতেহবে। বেশি নুন খেলে অ্যাসিডিটি বাড়ে। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে পেটে ব্যথা ও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে। ডিসপেপসিয়া হলে সাময়িকভাবে ওষুধ খেতে হতে পারে।
ফাংশনাল ডিসপেপসিয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই একবার ডাক্তার দেখিয়ে আজীবন গ্যাস, অম্বল ও হজমের সহায়ক ওষুধ খেয়ে যান। এর কোনও প্রয়োজন নেই। ওষুধের পরিবর্তে পর্যাপ্ত জল পান, হালকা খাবার ও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন। মন ভাল রাখতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও প্রাণায়াম করতে হবে। খালি পেটে থাকবেন না আর অযথা বিস্কুট খাবেন না। এতে সমস্যা বেড়ে যায়। বিদায় জানান ডিসপেপসিয়াকে, ভাল থাকুন।
চিকিৎসাশাস্ত্রে গ্যাস্ট্রিক বলে কিছু নেই কিন্তু। তবে.... গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কখনও ভোগেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। পেট ফাঁপা, পেট চিনচিন করা বা সমস্যার কারণে অনেকে দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে থাকেন। কিন্তু সেরে ওঠেন না। কেন জানেন? আসলে গ্যাস্ট্রিক বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে কিছু নেই। পেটের যেকোনও সমস্যাকেই সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক মনে করে থাকে। তবে পেপটিক আলসার এবং নন-আলসার ডিসপেপসিয়া নামে দুটি সমস্যা আছে। যেগুলোকেও অনেকেই গ্যাস্ট্রিক বলে অভিহিত করে থাকে। এগুলো কেন হয় আর এ থেকে রেহাই কীভাবে পেতে হয়, তা না জানলে কেবল মুড়ি-মুড়কির মতো গ্যাসের ওষুধ খেলে চলবে না। মনে রাখবেন, দীর্ঘ মেয়াদে টানা গ্যাস্ট্রিকের বড়ি খাওয়ার নানা জটিলতা আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। পেপটিক আলসার মানে পাকস্থলীতে বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে ঘা বা আলসার। এর কারণ দুটি। একটি হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি বা এইচ পাইলোরি নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যটি হচ্ছে এনএসএআইডি-জাতীয় ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া। যদি পাকস্থলীতে এই বিশেষ জীবাণু হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির সংক্রমণ থাকে, তবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধে সেটা পুরোপুরি সেরে যাবে না। আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও মিটবে না। এক্ষেত্রে ভালো হওয়ার জন্য এইচ পাইলোরি কমাতে পারে, এমন অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হবে। এইচ পাইলোরি সাধারণত ছোটবেলায় জল ও খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তারপর পাকস্থলী ও এর ঘনিষ্ঠ অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। কখনও আলসার বা হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা বছর পেটের নানা সমস্যা, ফাঁপা, ব্যথা, জ্বলা ইত্যাদি উপসর্গ লেগেই থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে বয়সভেদে শতকর ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ এইচ পাইলোরি সংক্রমণে আক্রান্ত। আশার কথা, যারা এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাদের বেশির ভাগেরই পেপটিক আলসার হয় না। এর জন্য অন্য আরও কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি আছে।