16th Dec 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
অষ্টচাল অষ্টদূর্বা কলসপত্র ধরে।
ইতুকথা একমনে শুন প্রাণ ভরে।।
ইতু দেন বর,
ধনে জনে বাড়ুক ঘর।।….
এই হল ইতু পুজোর মন্ত্র। মূলত শস্যবৃদ্ধির কামনার প্রতি অঘ্রাণ মাসের রবিবার এই পুজো করা হয়। এবং সংক্রান্তিতে হয় সাধভক্ষন ও বিসর্জন। এই মাসে বাংলার ঘরে ঘরে ওঠে নতুন ফসল। পালিত হয় নবান্ন। ইতুপুজোর রীতিনীতিও জড়িয়ে আছে কৃষিসভ্যতার সঙ্গে। ইতুপুজো মূলত সূর্যদেবের পুজো। সূর্যদেবের আর এক নাম সবিতা বা মিত্র। সেই নামের অপভ্রংশই হল ইতু। তার সঙ্গে শস্যশ্যামলার দিকটি জড়িয়ে গিয়েছে বলে অনেকে ইতুলক্ষ্মীর পুজোও বলে থাকেন। এবছর অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তি পড়েছে ১৬ ডিসেম্বর, সোমবার। সেদিনই পালিত হবে ইতুপুজোর সাধ ও বিসর্জন।
ইতুর ঘটের গায়ে পুতুলি আঁকা এবং ভেতরে দেওয়া হয় শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ। খড়ের বিঁড়ের উপরেই ইতুর সরাকে বসানো হয়। এর পর ওই সরাতে দেওয়া হয় মাটি। মাটি পূর্ণ সরার মাঝে ঘট স্থাপন করতে হয়। আর বাকী অংশে থাকে কলমী, সরষে, শুষনীর মূলসহ শাক। এ ছাড়া ধানের বীজ, মানকচুর মূল লাগানো হয়। আর ছোলা মটর মুগ তিল যব সহ আট রকমের শস্যের বীজও ছড়ানো হয়ে থাকে।
ইতুকে সাধভক্ষণের প্রথাও রয়েছে কোথাও কোথাও। সেদিন নতুন গুড় ও চাল দুধ দিয়ে পরমান্ন তৈরি করে নিবেদন করা হয়। ঘটে দই, দুধ, মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করা হয়। তারপর সেই ঘটের মধ্যে আমপাতা, বেলপাতা, দূর্বা ইত্যাদি দেওয়া হয়। এই সাধ দেওয়ার সময় নানা মন্ত্র উচ্চারণ করেন ব্রতীরা। তার মধ্যে অন্যতম হল,
চালকটা দিয়ে রাঁধল সখী
ভাতকটা দিই খাই
কড়ির চুপড়ি মাথায় করে
গয়লা বাড়ি যাই
গয়লাভাই, গয়লাভাই
ঘরে আছো ভাই?
আমার ইতু সাধ খাবে
ভালো দুধ চাই।
মানুষের বিশ্বাস ইতুপুজোর মাধ্যমে সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করা যায়।
নবান্ন কি এবং কেন পালন করা হয়?
নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন বা নব অন্ন। নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড় সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে কাকবলী। অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতা কে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন।
শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। একদা অত্যন্ত সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব উদ্যাপন হত, সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নবান্ন উৎসব বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব পালন করা হয়।