31st Jan 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

সন্তানের মঙ্গল কামনায় পৌষের শুক্লাষষ্ঠীতে পাটাইষষ্ঠী ব্রত

6th Jan 2025

প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি


পাটাইষষ্ঠী ব্রত বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি সধবা ব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের মহিলারা সন্তানের আয়ুবৃদ্ধির কামনায় এই ব্রত পালন করেন। এটি পৌষ মাসের শুক্লাষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী দেবীর পূজা হিসাবে পালন করা হয়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

আতপ চালের ৫ খানি নৈবেদ্য, ফল ও মিষ্টান্ন। নৈবেদ্য এর মধ্যে একখানি বাড়ির ধোপা বউয়ের জন্য, একখানা বাড়ির জন্য আর তিনখানা তিনজন এয়োর জন্য। পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন , বাড়ির উঠোনে একটা ছোট পুকুর কাটিয়ে তাতে বেনা গাছের পাঠাই পুঁতে পুজোর জায়গা করা হয়। পুরোহিতকে দিয়ে পূজা করার নিয়ম। পুজোর পর ছেলে মেয়েদের মায়েদের চিঁড়ে দই ফলার করে দিতে হয় ।

ব্রতকথা:

এক বিধবা ব্রাহ্মণীর একটি বউ; বউটির বড়ো নোলা, ঠাকুর-দেবতা মানে না, বার-ব্রত কিছুই করে না। ঠাকুরঘরে নৈবেদ্য করা থাকলেও সে নৈবেদ্যের কলা-সন্দেশ চুরি করে খেত। সেই পাপে বউটির যত ছেলে হয় সব মরে যায়, তবুও তার নোলার দোষ গেল না। শাশুড়ি মনে করলেন, বউমাকে এবার পাটাই ব্রত করাতে হবে; এ মনে করে পৌষ মাসে শুক্লা চতুর্দশীর দিন সকালবেলা তিনি বউকে কতকগুলি কালো কাপড় দিয়ে বললেন, দেখ বউমা! এগুলি বেশ করে কেচে আন। বউ সেই কাপড়গুলি নিয়ে ঘাটে চলে গেল। শাশুড়ি পাটাই ব্রত্যের আয়োজন করলেন। উঠানে ছোটো একটি পুকুর কেটে বেনা গাছের পাটাই সেই পুকুর ধারে পুঁতলেন। তারপর পুরুতঠাকুরকে সেখানে আসনে বসিয়ে বউয়ের জন্য তিনি ঘর-বার করতে লাগলেন।

এমন সময়ে পাড়ায় পাড়ায় শাঁখ ঘণ্টা বেজে উঠল, ঝি বউয়েরা সব উলুধ্বনি দিতে লাগল। ওখানে বউ কাপড় কাচতে কাচতে তাই শুনতে পেয়ে ভাবলে, ওমা! আজ যে পাটাই ব্রত, ঘরে কত কী খাবার তৈরি হয়েছে, আর আমি কিছুই খেতে পেলুম না। বউ তাড়াতাড়ি কাপড় ফেলে রেখে খাবার জন্য বাড়ির দিকে ছুটল। একে বেলা হয়েছে, তাতে কিছু না খাওয়াতে বউয়ের মাথা ঘুরতে লাগল। পথে আসতে আসতে বেনা গাছের মূলে পা জড়িয়ে পড়ে গিয়ে পথের ধারে বউ মূর্ছা গেল। পাটাই ব্রতের যে কয়খানি নৈবেদ্য হয়, তার মধ্যে একখানি ধোপা বউ পায়, সে তাই নিতে আসছিল। বউয়ের দুর্দশা দেখে তাড়াতাড়ি গিন্নীকে এসে বললে, ও বামুন মা! তোমার বউ কেন ওখানে পড়ে গোঁ-গোঁ করছে গো! এই কথা শুনে ব্রাহ্মণী তাড়াতাড়ি গিয়ে বউয়ের মুখে-চোখে জল দিয়ে তুলে বসিয়ে বললেন, নানা কারণে বার বার নাটা-পাটা হচ্ছিস মা! আজ থেকে পাটাই ব্রত করো, ভালো হবে। গিন্নি বউকে নাইয়ে ধুইয়ে পাটাই ব্রতের কাছে এনে বসালেন। ব্রত শেষ হলে তিনি বউকে বললেন, পাটাই ঠাকুরকে প্রণাম করে বর চেয়ে নাও। বউ প্রণাম করে বর চেয়ে নিলে। সেই থেকে বউ প্রতি বৎসর পাটাই ব্রত করতে লাগল। ক্রমে তার অনেকগুলি ছেলে মেয়ে হল। এবার সব বেঁচে রইল। তাই দেখে পাড়ার সকলে পাটাই ব্রত আরম্ভ করলে। ক্রমে পাটাই ষষ্ঠীর মাহাত্ম্য চারিদিকে প্রচার হল।

Archive

Most Popular