30th Jan 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

যব দীপ জ্বলে..

19th Jan 2025

সাহিত্য

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়


খানিকটা ডিমেনশিয়া হয়েছে মায়ের, কালকের কথা ভুলে যায় আবার পঞ্চাশ বছরের কথা গড়গড় করে বলে যায়, সময়-সময়... সেদিন গুনগুন করছিল একটা গান সুরটা চেনা ঠেকতে কাছে গিয়ে কান পেতেছি দেখি, যব দীপ জ্বলে আনা/ যব শাম ঢলে আনা

গাইছে মা

এমনই আস্তে যে একটু সরে দাঁড়ালেই শোনা যাবে না আর কিন্তু আমি তো সরে থাকতে চাইছিলাম না, চাইছিলাম দ্বীপপুঞ্জের ভিতরে ঢুকে রবিনসন ক্রুসো কতটা নোনা জল খেতে পারে, আবিষ্কার করতে...

চিতচোর দেখতে নিয়ে গিয়েছিল বাবা তোমায়?

তোর বাবার সিনেমা দেখতে নিয়ে যাওয়ার তাগিদও ছিল না, সময়ও নয়।

তাহলে, জিজ্ঞেস করতে গিয়ে খেয়াল পড়ল রবীন্দ্র জৈন তো আমার কাকুর অন্তরঙ্গ বন্ধু,

সাতের দশকের একদম গোড়ায়

আমাদের বাড়িতে মাঝেমাঝেই এসে থাকতেন, অখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী কমল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার গভীর সখ্য হারমোনিয়ামের রিড থেকে ছড়িয়ে পড়ত, শহরতলীর আকাশে-বাতাসে।

কাকু অচেনা হয়েই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে জানি না কোন মেহফিলে বসার জায়গা পেয়েছে কিন্তু

রবীন্দ্র জৈন তো নিজের সৃষ্টিতে বেঁচে আছেন, থাকবেন।

অন্ধ গান করে, সুর বসায়, লেখেও,

কিন্তু শৈশব থেকে দৃষ্টিহীন একজন অবাঙালি কীভাবে বাংলা ভাষা শিখে নিয়ে লিরিক লিখতে পারে,

ভাবলে কাঁটা দিত গায়ে।

এখন প্রশংসা করার আগেও অনেক হিসেব করতে হয় শুনি কিন্তু বেহিসেবী রবীন্দ্র আমাদের ভাড়াবাড়ির মেঝেয় পাতা তোষকে বসে যত সুর বানিয়েছেন, সবকটাই বেহিসেবী সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও, তাই আমার মায়ের গলায়...

হতে পারে, এই সুরটা নাকতলাতেই বানিয়েছিলেন, ব্যবহার করেছেন বম্বে গিয়ে হয়তো বা টিভি কিংবা রেডিওয় শোনা সুরটাই নিজের ঘরে শুনেছে বলে মনে হচ্ছে মায়ের; যার যেরকম ইচ্ছে, বিশ্বাস করায় কোনও বাধা নেই তো!

মা বলছিল, রবিনের একটা আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। ও হয়তো মেঝেয় বসে সুর তুলছে হারমোনিয়ামে আর আমি ঘরের অন্যপ্রান্তে বসে বঁটিতে আনাজ কাটছি, রবিন বলে দিত পারত, বেগুন কাটলাম না পটল...

কথাটা মানতে চায় না আমার মন। মাকে খোঁচাতেই থাকি।

মা আপনমনে বলতেই থাকে... এক-একদিন আমি একটু দুষ্টুমি করতাম। সবজির নাম মিলিয়ে দিলে পরেও ভুল প্রমাণ করতে চাইতাম রবিনকে। ও সজনেডাঁটা বললে বলতাম, বরবটি, লাউ

বললে বললতাম, কুমড়ো.. উনি মেনে নিতেন?

না মেনে উপায় কী? আমার তো দু-দুটো চোখ আছে। তবে গুম হয়ে যেত; বিড়বিড় করত,

খাবার থালায় ফেলে উঠে যেত; তারপর একদিন তোর বাবাকে ব্যাপারটা বলে খুব বকা খেয়েছিলাম। তোর বাবাই রবিনের সামনে গিয়ে ফাঁস করে দিয়েছিল আমার গুলতান্তি।

রবিনকাকুর রিয়‍্যাকশন কী ছিল? রেগে গিয়েছিল? আমি কখনও মুখোমুখি না দেখা একটা লোককে কাকু ডেকে ফেলি ইতিহাসের জোরে।

মা চুপ করে যায়। আবার গুনগুন করতে শুরু করে আর আচমকা থেমে গিয়ে বলে, রেগে যায়নি। সুর ভাঁজছিল। তারপর হঠাৎ মুচকি হেসে বলল, অন্ধের বিশ্বাস ভাঙবেন না বউদি, অন্ধের বিশ্বাস ভাঙতে নেই...

মায়ের সামনে আর দাঁড়াতে না পেরে সরে আসি আমি।

বৃষ্টির ছাঁট আসছিল বলে বন্ধ করে রাখা আমার ঘরের জানলাটা খুলে দিতে দিতে টের পাই, পৃথিবীর সব স্মৃতি শিল্প হয়ে উঠছে, অন্ধের বিশ্বাস ভাঙতে ভাঙতে.....

Archive

Most Popular

ছোটোখাটো চেঞ্জ এর বড় ইমপ্যাক্ট!

30th Jan 2025

প্রতিবেদন

এলিজা

Read More
বালিকার বড়ো হয়ে ওঠা

30th Jan 2025

সাহিত্য

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

Read More