21st Nov 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

হিট স্ট্রোক হতে চলেছে কী করে বুঝবেন

18th Jun 2024

স্বাস্থ্য

বিচিত্রভানু সরকার


কেউ বলেন সান স্ট্রোক, কেউ বলেন হিট স্ট্রোক আবার পুরনো দিনের মানুষরা বলেন সর্দিগর্মি। ভয়ানক গরমে শরীরে জলের অভাব ও নানান কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে সকলেই আতঙ্কিত হয় পড়েন। হিটস্ট্রোক আচমকা আসে না, জানান দেয় আগে থেকে, সবিস্তারে জানালেন ডিসান হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেন্সিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিচিত্রভানু সরকার।

বাচ্চাদের ঠান্ডা-গরম বোধের থেকে খেলার তাগিদ বেশি। বিশেষ করে আট-দশ বছর বয়স পর্যন্ত বেশিরভাগ শিশুর জীবনের লক্ষ্য দিনভর খেলা করা। স্কুল ছুটি থাকলেও বাচ্চারা ঘরের মধ্যে দৌড়দৌড়ি করে খেলা করে। অতিরিক্ত গরমে যদি লক্ষ করেন খেলতে খেলতে বাচ্চার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে, তবে হাঁটতে-চলতে, দম নিতে কষ্ট হচ্ছে, পায়ে ব্যথা করছে, বাচ্চার ঠোঁট, জিভ শুকিয়ে যাচ্ছে, শিশুটি বসে বা শুয়ে পড়ছে ক্লান্তিতে তখনই বুঝতে হবে যে বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। এই অবস্থায় বাচ্চাকে ওআরএস এর জল খাইয়ে ঠান্ডা জলে স্নান করানো উচিত। একটু বড় বাচ্চারা ফাঁক পেলেই বাইরে রোদ্দুরে দৌড়দৌড়ি করতে চায়। এই ব্যাপারটার দিকে নজর দেওয়া উচিত। আসলে গরমে রোদ্দুরে দৌড়দৌড়ি করলে খুব ঘাম হয়। ঘামের সঙ্গে অনেকটা জল, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম-সহ অনেক দরকারি মিনারেলস বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ হতে পারে না। আর এই কারণেই মাসল ক্র্যাম্প, মাথায় ব্যথা-সহ নানান কষ্ট হয়। গরমে আমাদের ঘাম হওয়ার কারণ হল শরীরকে খুব গরম হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে। ঘাম যখন শুকোয় তখন শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে। আমাদের ব্রেনের একটা অংশ আছে যেখানে গরমের সময় সিগন্যাল যায় যে

এবারে ঘাম হওয়া দরকার। তখনই আমরাঘামি। এবারে অরিতিক্ত গরমে শরীর থেকে মিনারেলস বেরিয়ে যাওয়ায় রক্তচলাচল কমে যায়। ফলে, ব্রেন আর সিগন্যাল পাঠাতে পারে না। ঘাম তো হয়ই না, শরীর গরম হয়ে যায়। তখন আমাদের শরীরের পুরো সিস্টেমটাই ওলটপালট হয়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এর ডাক্তারি নাম হিট স্ট্রোক। ঘাম হয়ে বা অন্য কারণে ডিহাইড্রেশন হলে পা-সহ শরীরের বিভিন্ন পেশিতে ক্র্যাম্প হয়। অল্প অল্প করে বারে বারে সরবত খেলে সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বাবা মায়েদের উচিত বাচ্চাদের দিকে নজর রাখার পাশাপাশি নিজেদেরও খেয়াল রাখা। বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রবল গরমে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। ফলত বেসাল মেটাবলিক রেট অর্থাৎ BMR বেড়ে গিয়ে নানারকম শারীরিক গোলোযোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হরমোন এবং এনজাইমগুলির স্বাভাবিক কাজ ব্যহত হয়। সরাসরি রোদ্দুর লাগলে চোখ এবং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাচ্চাদের ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহারের পাশাপাশি সানস্ক্রিন লাগান উচিত।

এবারের গরমে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। তাই সাবধান থাকতে হবে, রোদ্দুর এড়িয়ে চলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জলপান, ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে ওআরএস, ফলেররস-সহ জলীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। শরীরে অস্বস্তি হলে, মাথা ঝিমঝিম করলে ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে নুন-চিনির জল পান এবং প্রয়োজনে ঠান্ডা জলে স্নান করে নিতে হবে। এইবারের গরমে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম বলে অনেকে ভাবছেন ঘাম হয় না। কিন্তু ঘাম হয়েই শুকিয়ে যায় বলে অস্বস্তি কম হয়। শরীরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ঘাম হয়। অন্য সময় প্রতি কেজি দেহের ওজন পিছু পাঁচ থেকে দশ মিলি ঘাম নির্গত হয়। কিন্তু প্রখর দাবদাহের সময় এই পরমাণ বেড়ে দাঁড়ায় কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিলিতে। সুতরাং প্রচুর জল ও মিনারেল শরীর থেকে বেরিয়ে যায় বলে ছোট থেকে বড় সকলেই দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে, কিডনি-সহ শরীরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ কমতে শুরু করে। ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম পটাশিয়াম বেরিয়ে গেলে মাথা ঝিমঝিম করা ছাড়াও বাচ্চাদের মেজাজ খারাপ হতে পারে। গরমে জ্বর ও পেটের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। জ্বর হলে ঠান্ডা জলে স্নান মাস্ট। জ্বরেও ডিহাইড্রেশনের চান্স বাড়ে। তাই লিক্যুইড ডায়েটের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পেটের সমস্যা এড়াতে বাইরে খাওয়া এবং ভাজা ও মশলাদার খাবার একাবারেই বন্ধ। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখুন যাঁদের টপ ফ্লোরে থাকতে হয়, অর্থাৎ সরাসরি ঘরের ছাদের ওপর রোদ্দুর পড়ে তাঁদের ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করে রাখলে বদ্ধ ঘরের তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে গিয়ে ঘরের মধ্যেও হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গরমে বাচ্চারা নির্জীব হয়ে পড়লে, ভয়ানক ক্লান্ত দেখালে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত ওআরএস যুক্ত জল পান করান সঙ্গে ঠান্ডা জলে স্নান করিয়ে দিন। এরপরও সমস্যা থাকলে কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচডিইউ-তে রেখে বাচ্চাকে স্থিতিশীল করা হয়। হিট স্ট্রোক হতে চলেছে বুঝলে কোনও গড়িমসি না করে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

Archive

Most Popular

ঋতু পরিবর্তনে সুস্থ থাকুন, ঘরোয়া টোটকায় ..

21st Nov 2024

প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি

Read More