1st Aug 2024
ভ্রমণ
কমলেন্দু সরকার
শুধু শাল পিয়াল নয়, সেগুন, পলাশ, অর্জুন, মহুয়া, আমলকী, আকাশমণিও আছে। এমনই এক অরণ্যের কাছে যাওয়া। নিবিড় অরণ্য। জঙ্গলের গভীরে হরিণ, খরগোশ, বুনো শুয়োর, বাঁদর, হনুমান আছে। ভালুকও নাকি আছে। পৌষ সংক্রান্তিতে টুসু পরবে সবাই ওঠে মেতে। প্রকৃতি জেগে ওঠে, মাদলের তালে তালে তাল মেলায় অরণ্যও! ধামসা-মাদলের সুরের তালে তালে দুলে ওঠে শাল পিয়ালের বন। তখন তো মন না-হারিয়ে উপায় কী!
জায়গাটি ঝিলিমিলি। নামেই লুকিয়ে আছে ছন্দ। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে শালের জঙ্গলের আলো-ছায়ার খেলায় গাছ বাড়ি! ইংরেজিতে যাকে বলে tree house, ট্রি হাউস বা গাছ বাড়ির বারান্দা সম্ভবত দিন কাটানোর সেরা জায়গা। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়। না-দিয়ে আর কী করা যায়! গাছগাছালির পাতার ফাঁকফোকরে কতশত পাখির ডাক, গাছে গাছে কাঠবিড়ালির খুনসুটি আর সবুজের মধ্যে অবগাহন নিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে। যে-স্বপ্নের ভাগীদার কেবল নিজেই। পূর্ণিমার রাতে জ্যোৎস্না স্নাত জঙ্গল হয়ে ওঠে আরও বেশি মোহময়ী! কানে আসে ঝিঁঝির ডাক। থেকে থেকে ডেকে যায় রাতচরা পাখি। তখন মনে হয়, ঝিলিমিলি বুঝি মোহিনীবিদ্যায় পারদর্শী!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'যোগাযোগ'-এ লিখেছিলেন, '... আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যাবেলায় দীপ জ্বালার আগে সকালবেলায় সলতে পাকানো'। ঠিক তেমনই ঝিলিমিলির রূপমাধুরীতে ডুবে যাওয়ার আগেই ঝাড়গ্রাম থেকে রওনা দেওয়ার সময় থেকেই প্রকৃতি তার সৌন্দর্য নিয়ে প্রকাশিত। টানা ৬৫-৭০ কিমি পথই বলতে গেলে জঙ্গলময়। স্বপ্ন দেখায় আরও এক অরণ্যের। একঢাল পিচ রাস্তার সঙ্গে চলে জঙ্গল ও আদিবাসী গ্রামের নিকানো মাটির বাড়ি। এরপর ঝিলিমিলি পৌঁছলেই পাওয়া যায় জীবনের অন্য মানে। ঝিলিমিলি রিমলি লজ থেকেই আশপাশে ঘোরাঘুরির ব্যবস্থা করে দেয়। সেই তালিকায় সুতানের জঙ্গল, তালবেড়িয়া, বারো মাইল জঙ্গলের ভিউ পয়েন্ট আছে। বিশাল এলাকা নিয়ে সুতানে শালের নিঝুম অরণ্য। শাল আর অন্যান্য গাছগাছালি নৈঃশব্দের সবুজ মেখে অভ্যর্থনা জানায় আগত অতিথিদের। অরণ্যের মৌনতা ভেঙে যায় বাতাসে। সে-বাতাস উত্তুরে হোক দক্ষিণের। শাল পিয়ালের ছায়া-মাখানো সবুজ সুন্দর এক জঙ্গল, গ্রামও! সুতানের জঙ্গলে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত তৈরি হয়, কখনও কখনও রহস্যও! হঠাৎই কানে আসবে নূপুরের ঝুম ঝুম শব্দ। না, এ কোনও ভৌতিক কাণ্ড নয়, এ-ঝোরার শব্দ! সুতানের অরণ্যে পাওয়া যায় আদিমতা!
ঝিলিমিলি থেকে আট কিমি তালবেরিয়া ড্যাম। নদী পেরিয়ে গ্রাম। গ্রামের পরেই জঙ্গল। কিছুটা গেলেই তালবেড়িয়া ড্যাম। অরণ্যময় সবুজের মাঝে নীল জলের বিশাল জলাধার। টলটলে জল। এককথায় অপূর্ব! স্বচ্ছ, টলটলে জল। দৃষ্টি মেললেই নজরে আসে শুধুই অরণ্য। সবমিলিয়ে সিনেমার লোকেশনের মতো। বারো মাইল ভিউ পয়েন্ট-এর পথের ধারে দু'টি নজরমিনার। নজরমিনারের ওপর থেকে চোখে পড়ে অরণ্যে ঢাকা বিশাল এলাকা। তারই মাঝে আছে দূরে দু'একটি গ্রামও। কংসাবতী নদী আর মুকুটমণিপুর ড্যামের দারুণ ছবিও চোখে পড়ে।
কোথায় থাকবেন: রিমিল গেস্ট হাউস, ভাড়া ২০০০, গাছবাড়ি বা tree house ৩৫০০, টেন্ট কটেজ ৩০০০, টেন্ট কটেজ চারজনের ৪০০০ টাকা। গাড়িতে আশপাশে ঘোরানোর ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে থাকবে- সুতানের জঙ্গল, তালবেড়িয়া ড্যাম, বারো মাইল জঙ্গলের ভিউ পয়েন্ট। যোগাযোগ: মোবাইল- 085388 34031.
কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনে ঝাড়গ্রাম বা ঘাটশিলা। ঝাড়গ্রাম থেকে ঝিলিমিলি ৭০ কিমি। গাড়ি ভাড়া কমবেশি ১৫০০ টাকা। এছাড়া কলকাতা থেকে সরাসরি রাতের বাস আছে ঝিলিমিলির। দূরত্ব কমবেশি ২৪০ কিমি। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর থেকেও বাস আছে ঝিলিমিলির।