14th Oct 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসতে থাকে ক্রাইম

1st Oct 2024

সাহিত্য

শুক্লা ঘোষাল


স্নেহ অতি বিষম বস্তু। রুপু অত মাখন খেয়ো না। না। না মাসিমা- রুপু আধ আঙুল মে জিভ বের করে ফেলে। বিয়ের আগে রুপু রণর মাকে মাসিমা বলত। খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লে এখনও মাঝে মাঝে মাসিমা বেরিয়ে যায়। সামলে নিয়ে বলল না বিপামা খুব কম এই দেখো আধ চামচ নিয়েছি মাখন। বিপাশাকে রুপু বিপামা বলে। আসলে শুধু মা শব্দটি নিজের মায়ের বেলায় যত স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ হয় শাশুড়ির বেলায় কোথায় যেন একটু বাধা আসে। তবে রুপুর সঙ্গে বিপাশার খুবই বন্ধুত্ব। তুলনায় স্বামী-বন্ধু রণর সঙ্গে কথা আর হয় কোথায়!

রণর সেক্টর ফাইভের চাকরি এখন ঘরবন্দি। চব্বিশ ঘণ্টার আইসোলেশন, সামনে কম্পিউটার, পাশে ছোট টেবিলে ল্যাপটপ আর হাতে মোবাইল। এই নিয়ে তার সর্বক্ষণের অফিস। কখনও বিপাশা কখনও রুপু খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। আর রুপুর প্রাইমারি বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাস কম মজাদার নয়।সংসার সামলান বিপাশা। বিপাশার স্বামী মহাদেব সদৃশ। বাজার আর গল্পের বইয়ে তাঁর জীবন সীমাবদ্ধ। সংসারের আর কিছু নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। এ হেন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে কোথা থেকে যে নারদ এসে হাজির হল কে জানে! একদিন রুপুর ফোনে ই-মেল এল। ক্লাস চলতে চলতে রুপু একঝলক মেল খুলে দেখে আবার ক্লাস নিল। কিন্তু মাথা তো ঝিমঝিম করছে। কান লাল হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর ক্লাস শেষ করে মোবাইল নিয়ে রণর ঘরে হাজির। এই রণ শিল্পিরি দেখ না আমাকে ফোনে হুমকি দিচ্ছে। কী ব্যাপার দে দেখি। ওরা একই ক্লাসের বন্ধুর সুবাদে এখনও তুই-তোকারি। তুমিতে আর উত্তীর্ণ হতে পারেনি। যাইহোক, রণও দেখে অবাক। আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে বিট কয়েনে ১৫.৫০ ইউএস ডলারে দিতে হবে। নইলে...। রণ গভীরভাবে একটি সমস্যার জট ছাড়াচ্ছিল তার মধ্যে একি হ্যাপা। কিন্তু রুপু শুধু বন্ধু নয়, এখন তার বউ। অতএব, তোর বাবার কাছে চলে যা চট করে বলা যায় না। স্বামী হিসাবে তার কিছু কর্তব্য আছে। যতই হোক রুপুকে ও ভালোও বাসে। রুপুর তো প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা। বিপাশা ছেলেকে কফি দিতে এসে সব শুনে হতবাক। তবুও বিপাশা বুদ্ধিমতী এবং যেহেতু সংসারের হাল সেই কলেজজীবনের পর থেকে ধরে রেখেছে, সেই কারণে বড় বড় বিপদ বা সমস্যায় খুব ভেঙে পড়ে না। বিপাশার মাথায় চট করে করে এল- হ্যাঁরে রণ তোর সেই বাবুমামাকে মনে আছে? রণ বলল, হ্যাঁ তোমার সেই মামাতো ভাই। ও লালবাজারের ক্রাইম ব্রাঞ্চে ছিল না? রণ এবার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। হ্যাঁ মা। প্লিজ, তুমি রুপুকে নিয়ে যাও।

দাঁড়া, দাঁড়া। অত জলদি করে হবে না। আগে একটা ফোন করি। রণই ফোন করল ১০০ ডায়াল করে সব ঘটনা বলল। লালবাজার সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে রেফার করল। ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে এক ভদ্রলোক বললেন, কী ব্যাপার? রণ বলল, আমার স্ত্রীকে মোবাইলে বিট কয়েন ১৫.৫০ ডলার দাবি করেছে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে। সাইবার ক্রাইমের ডিউটিরত ভদ্রলোক উত্তরে বললেন, আপনার স্ত্রীকে অবশ্যই আমাদের এখানে আসতে হবে। বিকেলের পর এসে দেখা করুন। আর আসবার সময় মোবাইলের মেসেজের প্রিন্ট কপি এবং অভিযোগপত্র লিখে আনতে বলবেন। ফোন কেটে গেল। রণ মায়ের শরণাপন্ন হল।

মা আমার পক্ষে সত্যি যাওয়া অসম্ভব লালবাজারে। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তুমি রুপুকে নিয়ে চলে যাও। প্লিজ মা। বিপাশা কী আর করেন। এদিকে বাবুর কথা মাথায় ঘুরছে। কিন্তু বাবুর ভালো নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। বিপাশা চলে গেলেন বেডরুমে। মোবাইল নিয়ে ফোন করলেন দাদাকে। হ্যাঁরে, বাবুর ভাল নামটা কি যেন! দাদা বিপাশাকে জিজ্ঞেস করল কেন রে কী হয়েছে। বিপাশা যতটা সংক্ষেপে বলা যায় বলল। দাদা বললেন, বাবুর নাম জগৎ বল্লভ। জেবি বলেই লালবাজারে পরিচিত। তুই একটা ফোন কর। আমিও বলে দিচ্ছি। রুপুকে পোশাক পাল্টে তৈরি হতে বলে নিজেও আলমারি খুলে শাড়ি বের করলেন। নাঃ, ওসব জায়গায় সিল্ক চলবে না। বারোয়ারি জায়গা তারপর করোনার সময়। একটা খাদির সুতি শাড়ি আর ফুলহাতা গলাবন্ধ ব্লাউজ পরলেন।

আভিজাত্য যাতে ভালো করে ফুটে ওঠে। কপালে বড় একটা সোয়েটার মেরুন টিপ পরলেন। এদিকে রুপু একটা ফুলহাতা কামিজ আর প্লাজো পরে তৈরি। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গাড়িতে বসল দুজন। গাড়ি রওনা দিল লালবাজারের উদ্দেশে। লালবাজারে নামিয়ে গাড়ি চলে গেল পার্কিং লটে। ইতিমধ্যে বাবু ওরফে জগৎ বল্লভের ফোন বেজে উঠল। আমি গেটে একজন পুলিশকে পাঠাচ্ছি। তোমাদের পোশাকের রং বলো। বিপাশা নিজের ও রুপুর পোশাকের রং বলে দিল। বেশ খাতির করে ওদের ভেতরে নিয়ে গেল। অবশ্য যাওয়ার আগে নিময় অনুযায়ী ওদের ছবি তোলা হল। গেট পাস করিয়ে নেওয়া হল। জগৎ বল্লভ তার নিজের লোক বলে আইনের ব্যত্যয় ঘটতে দেবেন না।

ঘরে চা আনালেন দু কাপ। ব্যস্ততার তুঙ্গে বসে থেকেও ওদের কথা মন দিয়ে শুনলেন। অভিযোগপত্র জমা নেবার বিভাগে এক পিয়নকে পাঠিয়ে জমা করালেন। রুপু আর বিপাশা উঠে বেরোবে মুখোমুখি দেখা ওদের ফ্ল্যাটেরই এক কেউকেটার সঙ্গে। অসম্ভব দাম্ভিক। ধনবান। দাঁত বের করে বেশ কৌতুকের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে আপনারা? বিপাশার একেবারেই ইচ্ছে ছিল না কিছু বলে। কিন্তু এমন এক স্থানে দেখা হল এড়ানোর উপায় নেই। বাধ্য হয়েই বললেন, একটা অভিযোগপত্র জমা দিতে। রুপুকে বিরক্ত করছিল। ভদ্রলোক মনে হল খুশি হলেন। ওঃ, তাই। এতো মেয়েদের জীবনের অলংকার বলে খি-খি করে হাসলেন। পরের ঘটনা আরও তাজ্জব। হাউসিংয়ের গেটের সিকিওরিটি থেকে আশপাশের সমস্ত ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের অবাক চোখে দেখছে। গাড়ি থেকে নামতে নামতে রুপু তো অবাক। বিপাশা ঝট করে বুঝে গেলেন এত দ্রুত এই কাজ কার হতে পারে। সকলেই কৌতূহলী। মিসেস সেন যে কিনা ওদের অত্যন্ত কাছের জন, তিনিও বলে উঠলেন, যাও রুপু বিশ্রাম করো। অনেক ধকল হল। রুপু তো বুঝতেই পারছে না কিসের ধকল। কিন্তু অন্তরে এও বুঝল প্রায় প্রতিটি বারান্দার কৌতূহলী চোখের গল্প। বিপাশা থমথমে মুখে ঘরে ঢুকেই হাউসকোট নিয়ে বাথরুমে চলে গেলেন। চায়ের কাপে তিনজনের আলোচনা। রণ পরিষ্কার বলল, লোকটা নিজে একটা দুনম্বরি। ওকে তো নানা জায়গায় সারাদিন ঘোরাঘুরি করতেই হবে। এখানে লোকটার কোনও সম্মান নেই দেখো না। ও তো চাইবেই আমাদের পরিবারের সম্মানহানি করতে। ওই লোকটাই ফোন করে দুএকজনকে খবর দিয়েছে তোমাদের লালবাজারে দেখা গেছে। কী কারণে তা তো আর বলবে না। হয়তো জানেও না। কিংবা বানিয়ে গল্প বলেছে। এবার মানুষের যা স্বভাব গল্প গিলেছে। আর নিষ্কর্মা গৃহবধূরা সিরিয়ালের দর্শক যতটুকু শুনবে উর্বর মস্তিষ্ক খেলিয়ে দশগুণ বানিয়ে বানিয়ে ফ্ল্যাট মাতাবে। ছাড়ো তো ওসব, ফালতু টেনশন নিয়ো না মা, চিল মা চিল।

রুপু বলে ওঠে চিল মা চিল- ঠন্ডা হও মা ঠান্ডা হও। এদিকে আমার তো চিলচিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মহামুশকিল কী করা। বিপাশার স্বামী গল্পের বই হাত থেকে নামিয়ে এতক্ষণের নাটকীয় পরিবেশের সবকিছু মন দিয়ে শুনছিলেন। ধীরপায়ে চটি গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে ফোন বাজতে থাকে বিপাশার। চায়ের কাপ রেখে উঠে ফোন ধরলেন। সামনের ফেজ টু-এর মিসেস মুখার্জির গলা- বিপাশা এত বড় ঘটনা তুমি আমাকে বললে না। লেডিস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জানবে না মহিলাদের হ্যারাসমেন্টের কথা। তাহলে আমরা সমাজে মুখ দেখাব কী করে। এখানে লেডিস ক্লাবের অনেক ভূমিকা ছিল। আমরা পুরো সদস্যরা লালবাজারে মুভ করতাম। টিভি চ্যানেলে খবর পাঠাতাম। ইস্, তুমি যে কেন চেপে গেলে বুঝতেই পারছি না। বিপাশাকে কথাই বলতে দিচ্ছেন না। বিপাশা নিরুপায় হয়ে বললেন, যাক যাক মিটে গেছে। ছেড়ে দাও। পরে তোমাকে সব ঘটনাই খুলে বলব। ফোন কেটে দেওয়ার সঙ্গেসঙ্গে আবার রিং। ফেজ ফোর-এর মিঃ মাইতি। আরে বিপ্ ম্যাডাম আমাকে জানাবেন তো। অত লাখ লাখ টাকা গচ্চা দিলেন। তা কত লাখ গেল? বিশাপা কিছু বলার চেষ্টা করতেই তাঁকে থামিয়ে মিঃ মাইতি কলরব করে উঠলেন, আরে ম্যাডাম আমাদের রুলিং গভমেন্ট। একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়তাম। তাছাড়া ম্যাডাম আপনারও জানা আমাদের ফেজ ফোর-এই স্বয়ং এমপি, চার হাজার স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন। মাঝে মাঝে আসেনও। যাক্ গে, দীর্ঘশ্বাসের স্পষ্ট শব্দ শুনলেন বিপাশা। বিশ্রাম করুন- শুধু শুধু টাকা গচ্চা... ফোন। কেটে গেল।

দরজায় বেল বাজল। বিপাশাই দরজা খুলতে এগোলো। একঝাঁক গিন্নি উঠে এসেছেন বিপাশার অ্যাপার্টমেন্টে। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কেউ কেউ রুপুকে খোঁজার চেষ্টা করলেন। একজন তো বলেই দিলেন সরাসরি- রুপু কোথায়? ঘুমোচ্ছে নাকি! আর একজন বললেন- ওকে স্লিপিং ট্যাবলেট দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখো। ব্রেন রেস্ট পাক। যা অবস্থা গেল। বাব্বা, আমাদের তো শুনেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া। আর একজন বললেন, যাক বাবা টাকার ওপর দিয়ে গেছে। তোমার রুপু ঘরে সুস্থ শরীরে ফিরেছে এই না কত!

এদিকে বিপাশার কথা কেউ ভাবছেও না, শুনছেও না। রুপু রণর ঘরে মেঝেতে টানটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। রণ দরজা লক্ করে দিয়েছে। বিপাশার এই আজব কলকলানির মধ্যে কোনও কথাই বলতে ইচ্ছে করছে না। রণর বাবাও ঠিক সময়ে বেরিয়ে গেলেন। তিনি যে কিছু সামলাবেন তার উপায় নেই। একের পর এক ফোনে অজস্র জ্ঞানবাণী আর দরজার বেল-এ কেউ না কেউ আসছে। শেষে সোফায় আর বসার জায়গা নেই। দু একজন তো দাঁড়িয়েই রইলেন। এত বিরক্তি আর ক্লান্তির মধ্যেও বিপাশার মনে হল বলে দিতে তোমরা ইচ্ছে ডানার পাখি হয়ে উড়ে চলে যাও এ-ঘর থেকে। কিন্তু পরিশীলিত মন ও ভদ্রতাবোধে পারলেন না। এদিকে সোফায় কলকল ভলভল বেড়ে চলেছে। সকলে তাদের গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছে। একজনের একটি বাক্য বিপাশার কানে ধাক্কা দিয়ে বিপাশাকে জাগিয়ে দিল- আরে কিডন্যাপ করে শুধু টাকা আদায়ে ক্ষান্ত হয়নি, মেয়েটাকে ধর্ষণও করেছে। মোক্ষম শব্দ যার ব্যাপ্তি সুদূর প্রসারিত। বিপাশা ভাবছে- এরাই আমার প্রতিবেশী? অণু থেকে বিস্ফোরণ সত্যি সম্ভব করতে পারত বঙ্গ ললনারা যদি বিজ্ঞানের অনুশীলন থাকত। চোখ বন্ধ করে বসে পড়ে মেঝেতে। সোফায় পিঠ ঠেকিয়ে রাখে।

এর মধ্যে বেল বাজে। কেউ একজন দরজা খুলে দেয়। রণর বাবা হাসি হাসি মুখে প্রবেশ করেন। এ যে দেখছি সুন্দরীদের চাঁদের হাট। বলেই টিভির সামনে এগিয়ে যান। টিভির সুইচ চালু করে রিমোটে জনপ্রিয় চ্যানেলের মানে টিআরপি বেশি আর কি সেইরকম একটি চালু করেন। সংবাদ পাঠিকা প্যান্ট কোট পরে স্মার্ট ভঙ্গিতে ঠিক ঠিক সেই সময়ই উচ্চকিত কন্ঠে বলতে থাকেন- লালবাজার সূত্রের খবর: দক্ষিণ কলকাতার কসবা অঞ্চলের একটি আবাসনের এক প্রাথমিক শিক্ষিকা, টলিপাড়ার এক অভিনেত্রী এবং আরও দুতিন জন মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইলে বিট কয়েনে ১৫.৫০ ডলারের দাবির হুমকির বিষয়টি সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ খতিয়ে দেখছে। সংবাদ পাঠিকা এরপর খেলার খবরে যেতেই এতক্ষণের রুদ্ধশ্বাস বিস্ফারিত চোখের আবাসনের নারীরা মুখে আর রা কাটতে পারে না। যে যার নানা অজুহাতে এই যেমন কারওর ছেলের টিউশন, কারওর স্বামীর কফি পানের সময়, কারওর শাশুড়িকে ছানা আর ফল দিতে হবে। এইরকমই নানা জরুরি কাজ হঠাৎই মাথায় আসায় একে একে চলে যেতে থাকে। সকলে চলে গেলে, রণ ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের মোবাইলের সুইচ অফ করে, ঘরের ডোর বেলের সুইচ, টিভির সুইচ অফ করে দেয়। বিপাশা ঘরের আলোর সুইচও বন্ধ করে দিতে বলেন।

আধো ঘুমে আধো জাগরণে সে রাত রুপু আর বিপাশার কাটে। পরদিন সকালে- কাজের মেয়েরা যে যার ফ্ল্যাটে কাজে ঢুকছে। সিকিওরিটির সঙ্গে খানিক রসিকতা খানিক খুনসুটি চলছে। বিপাশার কাজের মেয়েটি, অষ্টমী জোরে জোরে দরজা ধাক্কাদেয়। বিপাশা তাড়াতাড়ি দরজা খোলে। মনে পড়ে ডোর বেলের সুইচ রণ অফ করে দিয়েছিল। আয়, আয় বলে ভেতরে ডেকে নেন। অষ্টমী বাসি বাসনে হাত লাগায়। বিপাশা চায়ের জল গরম করতে করতে অষ্টমীকে জিজ্ঞেস করেন, হ্যাঁরে, আমাদের বাড়ির রুপুকে নিয়ে তোকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেছে? অষ্টমী বলে, সব্বাই সব জানে বৌদি, টিভি দেখেচে না। আর এও জানে তোমাদের ফেলাটের ওই যণ্ডা প্রোমোটার সক্কলের মুবাইলে সবকিছু বইলেচে। এখন সক্কলে ওডারে ছিঃ ছিঃ কত্তেছে। দাঁড়াও না ওডার মজা দেখাচ্চি। আমাদের মালতীরে ঘাড় ধাক্কা দে বের করে দেছেন। মালতী তো ফুঁসচে। দেকে নেবে বলেচে। আজ তার শোদ তুলবে। কী শোধ তুলবি তোরা? বিপাশা অবাক হন। দেকো না! এগারোটার সময় ব্যালকনিতে দাঁইড়ে থেকো। সব দেখতে পাবে।

প্রায় ছ সাত জনের মেয়েদের দল প্রায় সকলেই এই আবাসনের ঘরের কাজের জন্য নিয়োজিত। গেটের বাইরে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকে। হাতে প্রত্যেকের কালো প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট। আপাতভাবে মনে হয় বাড়ির ময়লা বোধহয় ডাস্টবিনে ফেলতে নিয়ে গেছে। সাবি মালতীকে বলে, আমার কেমন লাগচে। যদি আমাদের পুলিশে ধরে নে যায়? মালতী বলে ভালো করে মাস্ক পরে নে আর মাথায় ঘোমটা দে নে। চিনতে পারবেনি আমরা দৌড় লাগাব, আর গেটের বাইরে, ভেতরে হলে বুজতে পারত। কে না কে করেচে তার আমরা কি জানি।

বিপাশার হঠাৎ মনে পড়ে অষ্টমী এগারোটার সময় বারান্দায় দাঁড়াতে বলে মুখার্জির বাড়ি কাজে চলে গেল না। কটা বাজে? আরে এগারোটাই তো, তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। রুপুকেও ডেকে নেন। রুপু বাচ্চাদের টিফিন ব্রেক দিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। নীচে গ্যারেজে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে প্রোমোটার লোকটি ঢোকে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আওয়াজ হয়। গাড়ি বেরোতে থাকে। সিকিওরিটি হাট করে পুরো দরজা খুলে দাঁড়ায়। স্লো মোশনে গাড়ি বেরোতে থাকে। গাড়ির কাচ নামানো। গেট থেকে গাড়ি পুরো বেরোতেই দুদিক থেকে কালো প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট প্রোমোটারের মাথায় মুখে গায়ে কোলে স্টিয়ারিং-এ পড়তে থাকে। আমের খোসা, কলার খোসা, পটলের খোসা, বাসি ভাত, মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় আরও নানা দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস। প্রোমোটার কিছু বোঝার ও দেখার আগেই বিপাশা দেখতে পায় একদল মেয়ে ঘোমটা দেওয়া, মুখে মাস্ক দৌড়ে পালাচ্ছে।

আরও বিস্ফারিত হবার পালা! নীচে তাকাতেই চোখে পড়ে তারই স্বামী হাস্য মুখে বিপাশার দিকে তাকিয়ে। রুপুর দিতে তাকালেন স্নেহপূর্ণ দৃষ্টিতে।

Archive

Most Popular