1st Oct 2024
বাড়িঘর
নিজস্ব প্রতিনিধি
৩৯ তম বর্ষে এবারের নিবেদন বান নয় প্রানের পক্ষে মুক্তধারা। সৃজনে রয়েছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস।
আমাকে যে বাঁধবে ধরে এই হবে যার সাধন,
সে কি অমনি হবে?
আমার কাছে পড়লে বাঁধা সেই হবে মোর বাঁধন,
সে কি অমনি হবে?
মুক্তধারা নাটকে বৈরাগী ধনঞ্জয়ের মুখে এই গান দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বেজেছিল ভৈরব-এর তাণ্ডবধ্বনি। যে তাণ্ডবের সামনে যন্ত্ররাজ বিভূতির বাঁধ বিকল হয়ে পড়ে।
রূপকের আড়ালে মুক্তধারা নাটক অনেক কথাই বলে যায়। তবে নদীবাঁধের যে সংকট, তা কি শুধুই রূপক? অন্তত গত একশো বছরের পৃথিবীর দিকে তাকালে সংশয় জাগে বৈকি! একের পর এক বাঁধ যখন বিকল হয়ে পড়ছে, ভেঙে পড়ছে নদীর স্রোতের সামনে – তখন সেই তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই নেই কারোরই। এক একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের। কোথাও আবার সংখ্যাটা কয়েক লক্ষ। তবে দুর্ঘটনা বললেই কি সবটুকু বলা হয়? নাকি প্রকৃতিকে বাঁধতে চাওয়ার অনিবার্য পরিণতি এমনই? কিছু বছর আগেই বিশ্বভ্রমণে জাপান, জার্মানি, ইতালিতে নগরসভ্যতার সেই অনিবার্য পরিণতিকেই হয়তো প্রত্যক্ষ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
একাকী, অখণ্ড সম্পূর্ণ, নিশ্চিন্ত, নিরুদ্বিঘ্ন’ প্রকৃতি, যার অসীমনীল ললাটে বুদ্ধির রেখামাত্র নাই, কেবল প্রতিভার জ্যোতি চিরদীপ্যমান। তারই সৃষ্টি রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে আছে মানুষের অস্তিত্বও। পঞ্চভূতেই সৃষ্টি, পঞ্চভূতেই সমস্তকিছুর লয়। মুক্তধারা-র যুবরাজকেও তাই আমরা পাই ঝর্ণাতলে পরিত্যক্ত এক শিশুর রূপে। সেই ঝর্ণার স্রোতেই আবার মিলিয়ে যান তিনি। সেই অক্ষিত, অচ্যুত প্রকৃতিকে বেঁধে রাখার সাধ্য কার আছে? রবি ঠাকুরের কথায়, ভাঙনের যিনি দেবতা… তাঁর জন্য যেসব ছিদ্রপথ থাকে সে কারও চোখে পড়ে না।
ভাঙনের যে দেবতা, তিনিই তো সকল মুক্তির আধার। ভৈরবের তাণ্ডবের ধ্বনিতেই তাই বেজে ওঠে স্রোতের মুক্তির গান। বিস্মিত হন রাজা। প্রশ্ন করেন, এ কী কাণ্ড! বৈরাগী ধনজয় জানান,বাঁধ ভাঙার উৎসবে ডাক পড়েছে। ধ্বংসলীলার মধ্যেও উৎসবের ডাক আসে, প্রকৃতির পথে সামিল হন প্রতিটা মানুষও।