1st Oct 2024
বাড়িঘর
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রতিবার মণ্ডপ সজ্জায় বিশেষ ভাবনার সাক্ষর রাখে এই পুজো কমিটি। গত বছর এই পুজোর থিম ছিল ভ্রান্তি। শিল্পী অদিতি চক্রবর্তীর পরিকল্পনায় এই পুজো কমিটির এবারের থিমের নাম উড়ান।
পুজোর বিষয়বস্তু সম্পর্কে পুজো কমিটির তরফে জানানো হলো, কিশোরগঞ্জের তাঁতিপাড়ার গলিগুলো এখন গুমরে মরে। আজ থেকে তিনশো সাড়ে তিনশো বছর আগে এখানেই জমে উঠতো রোজকার জামদানি বোনার গল্প। আগমন ঘটতো রাজা, বাদশার। কিশোরগঞ্জের তাঁতিদের নকশাকাটা জামদানি কাপড় উঠতো দিল্লির নবাব, বিলেতের সাহেব- সুবোদের অঙ্গে। কিন্তু সেইদিন হারিয়ে গেল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেল। পরাধীন দেশে দেশীয় মানুষ তাঁতিদের দাম দিতো না। ধীরে ধীরে জামদানি হারিয়ে গেল কালের গহ্বরে।
দিন বদলেছে। বর্তমানে জামদানি তার হৃত গৌরব ফিরে পাচ্ছে। বর্তমান বাজারে জামদানির উচ্চমূল্য ও বিপুল চাহিদার কারণে বাংলাদেশের এই শিল্পে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের সীমা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও জামদানি বুনন উঠছে তাঁতে। বর্ধমান, ফুলিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে। আবার সেই গঞ্জের হাট থেকে বিশ্বের বাজারে জামদানি ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। তাঁতিদের আজ শিরদাঁড়া শক্ত হয়েছে। সেই শিরদাঁড়ায় ভর দিয়ে তারা আজ স্বপ্নের উড়ান ভরছে তাদের ডানায়।
তাঁতিরা মনে করে এমন আনন্দের দিন তারা ফিরে পেয়েছে একমাত্র মায়ের আশীর্বাদের গুনে। সব মায়ের মধ্যেই তো মা দুর্গা বিরাজ করেন। তিনিই তাদের এই দুর্গতি নাশ করেছেন। মা যেমন সন্তানের কষ্ট দেখতে পারেনা তেমনি মা দূর্গা তাঁর সন্তানের অন্তরের কান্না, অন্তরের ডাক শুনতে পান। তাই তো আজ তিনি তাঁতিদের সুখের দিন ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাদের শিরদাঁড়ায় পুরে দিয়েছেন অটল বিশ্বাস, নিজের প্রতি আস্থা। সেই জোরেই আজ তারা শক্ত ডানায় ভর করে উড়ান ভরতে তৈরি। তাঁতিদের কাছে আজ জামদানি শাড়ী মায়ের মাঝে বিরাজিত মা দুর্গার দেওয়া আশীর্বাদ বা মায়ের আঁচল। যার নিচে নিশ্চিন্তে আশ্রয় পাওয়া যায়। মায়ের ওই বরাভয় মুদ্রায় তাঁতিরা খুঁজে পাচ্ছে তাদের নির্ভরতা। সেই নির্ভরতাই তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে।