1st Oct 2024
বাড়িঘর
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রাক রজত জয়ন্তী বর্ষে এবারের থিমের নাম কোহিনুর অতীতের দিকে যাত্রা।
শিল্পীর ভাবনায়, যে প্রদীপ যত আলো ছড়ায়, তার নীচে নাকি তত বেশি অন্ধকার জমাট বাঁধে। যে হীরক খন্ডের নাম কোহ ই নুর বা আলোর পর্বত তাকে ঘিরে যে অনেক অন্ধকার জমবেই তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
একটি হীরক খন্ডের প্রায় আটশত বছরের যাত্রাপথ কে কেন্দ্র করে কত শত রক্তক্ষয়, কত গুপ্তহত্যা, কত যুদ্ধ, কত লুঠতরাজ এর কাহিনী সৃষ্টি হয়েছে তা ইতিহাস ও লিপিবদ্ধ করতে পারেনি। মানুষের লোভ লালসার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে ওই এক টুকরো হীরক খন্ড- কোহিনুর। যাকে অভিশপ্ত হীরক বলে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। যে এই কোহিনুর কে অধিকার করতে পারবে সেই নাকি হবে সমগ্র জগতের অধীশ্বর। এই ধারনার বশবর্তি হয়ে যুগের যুগের পর যুগ ধরে চলেছে বহু রক্ত পাত। কোহিনুর বার বার পার করেছে দেশ, মহাদেশ, সাম্রাজ্য আর ধর্মের সীমানা। বার বার বদলে গেছে তার অধীশ্বরের নাম।
কথিত আছে কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের এক হিন্দু দেবীর মন্দিরে দেবী মুর্তির ত্রিনয়ন থেকে এই হীরে প্রথম বার হরন করেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি। এর পর বহু হাত ঘুরে কোহিনুর এসে পৌঁছায় মোগল সম্রাট বাবরের হাতে। তার নাম হয় বাবর কা হীরা। এরপর বাবর পুত্র হুমায়ুনের হাত ধরেই এই হীরা যাত্রা করে পারস্য দেশের উদ্দেশ্যে ও অনেক যুগ প রে তা ফিরে আসে ভারত উপমহাদেশের দাক্ষিনাত্য অঞ্চলে ও তার পর প্রায় একশো বছর এই হীরার কোনো সন্ধান মেলেনি।
ইতিহাস বলে ১৭৪৮ সালে মীর জুমলা বলে একজনের বণিকের হাত ধরে এই হীরা ফিরে আসে মোগল সম্রাট শাহজাহানের কাছে যা পরে শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসনে স্থান করে নেয়। বহুকাল পরে নাদির শাহ দিল্লী থেকে এই হীরা হরন করে নিয়ে যান পারস্য দেশে। নাদির শাহ ই এর নাম দেন কোহ ই নুর বা আলোর পর্বত।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পূজারীদের মতে এই কোহিনুর নাকি আসলে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সামন্তক মণি। এর পর কাশ্মীরের পথ ধরে এই অভিশপ্ত হীরা এসে পৌঁছায় পাঞ্জাবের রঞ্জিত সিং এর কাছে। পরে এই কোহিনূর হীরা তদানীন্তন বড় লাট লর্ড ডালহৌসি তঞ্চকতা করে পাঞ্জাবের নাবালক রাজা দিলীপ সিং এর কাছ থেকে অধিগ্রহন করেন। ব্রিটিশ জাহাজে চেপে কোহিনুর যাত্রা করে লন্ডনে ও সেখানে কোহিনূর কে কেটে বাড়িয়ে তোলা হয় তার ঔজ্জ্বল্য। কমে যায় তার আয়তন।
মহারানী ভিক্টোরিয়া ও পরবর্তি কালে মহারানী এলিজাবেথ এর মুকুটে স্থান পাওয়া এই কোহিনুর আজ ও টাওয়ার অফ লন্ডনের শোভা বর্ধন করে চলেছে। কোহিনুর কে আবার ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচেস্টা আজ ও সরকারী স্তরে জারি আছে। আশা করা যায় ভারত বর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করা এই হীরক খন্ড একদিন আবার তার উৎস ভূমিতেই ফিরে আসবে। সম্পূর্ন হবে তার বৃত্তাকার পথ।বেলেঘাটা ৩৩ পল্লী দুর্গা পুজো প্রাঙ্গণে এইবার আমাদের আয়জন কোহিনুর অতীতের দিকে যাত্রা। কোহিনুরের এই দীর্ঘ যাত্রাপথ ধরেই আমরা এইবার যাত্রা করবো ইতিহাসের গন্ধ মাখা অতীতে। আসুন যাত্রা শুরু করা যাক।