14th Oct 2024

Highlights :

www.rojkarananya.com news

সন্তোষপুর লেক পল্লী

1st Oct 2024

বাড়িঘর

নিজস্ব প্রতিনিধি


৬৭ তম বর্ষে এবারের সন্তোষপুর লেক পল্লীর দুর্গাপুজো। নিজেদের থিমের নাম তাঁরা রেখেছেন চালচিত্র।

পুজো কমিটির ভাবনা অনুযায়ী, ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে অজন্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে প্রায় ৪৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, দুটি আলাদা পর্যায়, প্রায় ৩০ টি বৌদ্ধ গুহা সাক্ষী হয়ে ওঠে এক বিশাল শৈল্পিক কর্মকান্ডের। অজন্তার ভিত্তিচিত্রগুলি বিশেষ করে ভারতীয় চিত্রশিল্পের ইতিহাসের প্রথম পরিণত নিদর্শন, যা যুগ যুগ ধরে ভারতীয় শিল্পভাবনা এবং শৈলীকে সমৃদ্ধ করে গেছে। ভারতীয় শিল্পের আঙ্গিনায়, অজন্তা যেন এক বিশালকার চালচিত্র। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক চেতনা ও নন্দনতত্ত্বর ভিত্তিপ্রস্তর বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। কালের চক্রে জনস্মৃতি থেকে প্রায় ১২০০ বছরের বেশি অজন্তা আড়ালে চলে যায়। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে, এক জনৈক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জন স্মিথ, মৃগয়া করতে গিয়ে পুনরায় আবিষ্কার করেন এই শিল্পের স্বর্ণখনি। তার পরবর্তী সময় থেকেই শুরু হয় অজন্তার নুতন সময়ে মূল্যায়ন। ১৯ শতকের তৎকালীন সুবুদ্ধি সম্পন্ন কিছু ব্রিটিশ আমলা এবং প্রাচ্যবিদদের উদ্যোগে শুরু করা হয় প্রথম সংরক্ষণের কাজ। অজন্তা শিল্পের জগৎ এ নুতন আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৪৪-১৮৬৩ সাল অব্ধি শিল্পী রবার্ট গিল বড়ো ক্যানভাসে প্রায় ২৭ টি ছবি নকল করেন, কিন্তু সেগুলি এক দুর্ঘটনায় নষ্ট হওয়ায় ১৮৭২ সালে জে জে কলেজ এর অধ্যক্ষ জন গ্রিফিথ নুতন ভাবে ভিত্তিচিত্র গুলি নকল করিতে উদ্যোগী হন। প্রায় দীর্ঘ ১৩ বছরে প্রায় ৩০০ টির উপরে কাজ তৈরী হলেও, লন্ডন এর জাদুঘরে আগুন লেগে আবার অনেক ছবি নষ্ট হয়। এর মধ্যে সংরক্ষণ করতে গিয়ে অনেক ছবি নষ্ট হয়ে খসে যায়। 

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, যখন শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় আধুনিক শিল্পে এক নিজস্ব ভাষা তৈরী হচ্ছে, সেই সময় সিস্টার নিবেদিতার উদ্যোগে ১৯০৯ সালে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু ও অসিত কুমার হালদার পৌঁছে যান অজন্তায়, ব্রিটিশ শিল্পী খ্রীষ্টানা হেররিণঘাম এর সহকারী হিসেবে। এই অভিজ্ঞতা এক বিশাল শিল্পের রত্নের সমুদ্রে তাদের ভাসিয়ে দেয়। এর পর ১৯১০ সালে আবার অসিত কুমার হালদার ও সুরেন্দ্রনাথ কর পৌঁছে যান অজন্তায়। এছাড়া মাধ্যপ্রদেশের বাঘ গুহা চিত্র গুলোর সংরক্ষণের তাগিদেও নন্দলাল ও অসিত কুমার হালদার, ভিত্তিচিত্র নকলের জন্য পরবর্তী সময়ে পৌঁছান। এই ১৯০৯ সালের পর থেকেই ভারতীয় আধুনিক শিল্পে অজন্তার যে প্রভাব ও চেতনার জোয়ার আসে, তাই নিয়েই এই বারের মণ্ডপ ভাবনা। অজন্তা র প্রভাব এতটাই সুদুরপ্রসারি ছিল, যে অভিভক্ত ভারতবর্ষের মানচিত্রের প্রায় সকল কোনা তেই তার নুতন করে জয়গান শুরু হয়। অজন্তা হয়ে উঠে শিল্পীদের একান্ত তীর্থক্ষেত্র, যা আজও সমান ভাবে এক বিস্ময় সৃষ্টি করে। প্রাক স্বাধীনতার শিল্পে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বীজ অবনীন্দ্রনাথ ও তার শিষ্যরা রোপন করেছিলেন, তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল অজন্তা। বাংলার শিল্পে বিশেষ ভাবে এর প্রভাব আজও বহমান। বাংলার আল্পনা থেকে গহনা, প্রতিমা থেকে ফ্যাশন, জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই অজন্তা আমাদের অজান্তেই এখনো বর্তমান। 

অজন্তার শিল্প সর্বস্তরের মানুষের কথা বলে। জীবন বোধের কথা বলে। শান্তির ও সাম্যর বার্তা বহন করে। আজকের এই চারিদিকের অশান্ত পরিবেশে তাই অজন্তার শিল্পের মাধ্যমে আমরাও নুতন এক সাম্যর বার্তা পৌঁছাতে চাই মানুষের কাছে। এছাড়া বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় শিল্পীদের অজন্তা অনুপ্রাণিত কাজের মাধ্যম দিয়ে আরেকটা শিল্পের স্বর্ণযুগ কে ছোঁয়ার চেষ্টা আমরা করছি, যাতে আগামী প্রজন্ম এই শিল্প ও চেতনার সুযোগ্য ধারক ও বাহক হয়ে ওঠে। 

ভাবনা ও নির্দেশনা: শিল্পী অভিজিৎ ঘটক

গবেষণা : ড: সৌজিৎ দাস

আবহ: অনির্বান ব্যানার্জী

Archive

Most Popular