1st Oct 2024
বাড়িঘর
নিজস্ব প্রতিনিধি
শিল্পী কৃশানু পালের পরিকল্পনায় এবারের থিমের নাম আকার।
শিল্পীর ভাবনায় পুজো পুজো রব আসতেই হঠাৎ কেমন জেগে উঠলো আপাত হতাশ মানুষ গুলো। চারিদিকে দৈনন্দিন হাজারো লড়াই, কখনো স্বজন বিয়োগের যন্ত্রনা, কখনো কর্মজীবনে হঠাৎ এসে পড়া দুঃসময়। রাজা-রাষ্ট্র-রাজনীতির এক দুর্বিসহ সময়ে দাঁড়িয়ে ভোটের হার জিতের পর আস্তে আস্তে পুরো শহরটা এবার আচ্ছন্ন হবে পুজোর উৎসবে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর তো শুধু এটাই আছে। সাধ আর সামর্থ্যের লড়াইয়ের রোজনামচায় মোবাইল খুললেই সেলিব্রিটিদের বাড়াত নাচ ধনকুবেরের বিয়ের আসরে আর ঠিক তখনই মধ্যবিত্তের আসরে নামেন স্বয়ং দেবী দুর্গা।
দুর্গা আসলে দেবী নয়, সে তো আমাদেরই পরম আত্মীয়, তাই তো মা আসছে জানার পরেই মনটা অজান্তেই একটা খুশির আবেশে ভরে যায়। পুজো নিয়ে জরুরি মিটিং ডাকে কমিটি, সদস্যদের উপস্থিতিতে শিল্পী আসে, ঠাকুরের বায়না হয়। এবছরের ভাবনাও তৈরী, কিন্তু গোল টেবিলে না বসেও বাইরে রাস্তায় থেকেও সেই ভাবনার অংশ হয়ে গেলো আরো কিছু মানুষ। না না, ওরা পুজোর কেউ না, কারুর হয়তো ডিম সেদ্ধ আর রুটি বিক্রি হয় প্যান্ডেলের ঠিক গেটের জায়গাতেই। কারোর লন্ড্রি তো কারোর মুদির দোকান। কেউ বাজার নিয়ে বসে তো কোথাও চা এর দোকান। কারোর গাড়ির গ্যারেজ, আবার কারোর বাড়ির সামনেই প্যান্ডেলটা হবে। আগামী দুই মাসের জন্য বন্ধ থাকবে সামনের দিকের জানলা গুলো, নিজের সাধের গাড়িটা ও পার্ক করতে হবে দূরে কোথাও। কেউ কিছুদিন আগেই ফিরেছে হাসপাতাল থেকে, জোরে আওয়াজ হলে বুকের ব্যাথাটা বাড়ে, কারোর আবার পুজোর পরেই পরীক্ষা, এরকম অনেক গল্প দাড়িয়ে আছে পাড়ার দেওয়ালে দেওয়ালে। পাড়ার পুজো কি এই দেওয়াল ছাড়া হয়? পুজো কমিটিতে না থেকেও পুজোর প্রতি এদের সবার অকৃত্রিম ভালোবাসতেই তো বেরিয়ে পরে স্বগোতক্তি, ধুত্তর দূর্গা থেকে দুন্না দুয়া।
এবারের পুজো তাই এই মানুষগুলোকে নিয়ে, যেখানে দুর্গাপুজো ধর্মের বেড়া টপকে হয়ে ওঠে আপামর মানুষের মুক্তির উৎসব। আসলে দুর্গা মানেই তো লড়াই, দশ হাতের শক্তি ছড়িয়ে পরে সবার মন থেকে মননে, শুধু কমিটির নয়, এই পুজো পাড়ার, এই পুজো অঞ্চলের, এই পুজো গর্বের, আশিতিপর বৃদ্ধ বিকেলবেলা হাঁটতে বেরিয়ে বলে যায় পাড়ার পুজোর ইতিহাস, তখন এত থিম ছিল না বাবা, আমরাই করতাম অফিস থেকে ফিরে বলার সময় চিকচিক করা চোখ জানান দেয় হৃৎগৌরবের কথা, এই পুজো পল্লীর পুজো, আবেগের পুজো, পাড়ার প্রতিটা মানুষের সংযুক্তির পুজো, যোগদানের পুজো, এতগুলো মানুষের, বাড়ির, কাঠামোর, বৃত্তান্তের যোগদানে গড়ে ওঠে এক বৃহত্তর উদভাবনা, পুজোর রূপ আর শব্দের মিশ্রনে গড়ে ওঠে এলাকার এক নতুন আকার মুহূর্তেরা ফ্রেমবন্দি হয়, অনেকগুলো ফ্রেমের নিখুঁত বুননে আকারপ্রাপ্ত হয় সামগ্রিক অঞ্চল, এই গড়ে ওঠা আকারের মধ্যেই গথিত থাকে এলাকার ছোটোবড়ো দিনলিপির গল্পগুলো, পল্লীর সব মানুষের সমন্বয় আর যোগদান ছাড়া কখনোই গড়ে তোলা সম্ভব নয় উৎসবের এই আকার, কালের গতিতে যা সার্বজনীন প্রয়াসে বিশ্বজনীনের বৃহৎ আকার ধারণ করেছে।
প্রতিমা নির্মাণ: জয়ন্ত পাল
মন্ডপ নির্মাণ: সুজয় সাহা
আলোকচিত্র : অর্ণব মিত্র ও সোমনাথ নাইয়া
সহযোগিতা: অরিন্দম বেরা প্রচ্ছদ: প্রণয় ঘোষ
আলোক নির্মাণ: কাদের হুসেন
আবহ: আশু চক্রবর্তী