8th Feb 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

রংছবি জলছবি ..

21st Oct 2024

সাহিত্য

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়


আকাশের নীলের বুকে রোজই কিছু ছবি এঁকে যায় অলস মেঘের দল, সেই ছবি প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে দেখা তন্ময়ের ছোটোবেলার অভ্যাস। খণ্ড-খণ্ড সাদা মেঘ জমে থাকে এখানে-ওখানে। কোনওটা দেখতে একটা ভোঁদড় জলহস্তীর মতো, কোনওটা বিশাল চেহারার একটা পেঙ্গুয়িন, কোনওটা কাঁকরি-কাটা পেন্টাগন। তন্ময় রোজ, মেঘের আনাগোনা আর তাদের কারিকুরি দেখে ঘরের জানলা দিয়ে। প্রতিদিনই নানা নামকরণে ভূষিত করে তাদের। তার মনে পড়ে অনেকদিন আগে একটা ঢাউস চেহারার সাদা ধবধবে মেঘ দেখে তার মনে হয়েছিল এই মেঘটা নিশ্চয় ভগবান। মেঘটার ভোঁতা নাক আর পুরু ঠোঁটে কীরকম একটা বোকা-বোকা ভাব।

মফস্বল থেকে কলকাতায় এসে প্রথম-প্রথম মেঘ দেখতে বেশ অসুবিধে হত তার। কলকাতার একটি প্রান্তিক এলাকায় তার বসবাস, গা ঘেঁসাঘেসি করে দাঁড়িয়ে থাকা বড়ো বড়ো বাড়ির আড়ালে যে একফালি আকাশ দেখা যায় তাতে তেমন ছবি ফোটাতে পারে না বেচারি মেঘগুলো। কোনও ছবির আধখানা দেখা যায়, কোনওটার সিকি। গাঁ-দেশ ছেড়ে হঠাৎ কলকাতায় কলেজ পড়তে আসা তন্ময়ের শুধু যে মেঘের ছবি দেখায় ছেদ ঘটল তা নয়, রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টারের যেরকম দশা হয়েছিল, তন্ময়েরও তদ্রূপ। জলের মাছ ডাঙায় তোলা সেরকমই নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম।

ইটের দেওয়ালের উপর টিন দিয়ে ছাওয়া বাড়ি ছেড়ে প্রান্তিক কলকাতার এক লোকালয়ে ডেরায় বাঁধায় তন্ময়ের মগজে আর ভিড় জমাতে পারে না মেঘের দল। সেখানে সে না পারে কারও সঙ্গে ভাব জমাতে, না পারে একা-একা থাকতে। তার উপর এমন গরিব জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়ার লজ্জাও দুমড়ে ভেঙেচুরে দিচ্ছিল তার আত্মমর্যাদা নামক দামি বস্তুটি। কলকাতা এসে অতএব নিজেকে বারবার মনে হয় নিতান্ত বেমানান, আটপৌরে ফিটফাট, এটিকে জানা মানুষজন দেখলে নিজের গ্রাম্য ম্যানার্স নিয়ে কুঁকড়ে থাকে লজ্জায়। বেশি দেমাকঅলা মানুষজন দেখলে মুখ নিচু করে পাশ কাটিয়ে যায়, যাতে মুখোমুখি না হতে হয়, উঁচুদরের কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে আত্মবিশ্বাস একদম তলানিতে। ধনীবাড়িতে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। উঁচু-উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দারা যেন নাগালের বাইরের মানুষজন। পঁয়ত্রিশতলা স্কাই স্ক্র্যাপারের মানুষজন তো রূপকথার দেশের মানুষ। যারা দামি দামি মোটরগাড়ি চড়ে ধুলো কি কাদা ছিটিয়ে পাশ দিয়ে চলে যায়, তাদের দাপটে কুঁকড়ে যায় তার স্বাভাবিক বেঁচে থাকা। তন্ময়ের এতটাই নার্ভাস লাগত প্রথম-প্রথম কলকাতাবাসী হওয়ার পর।

কিন্তু এরকম একটি দিনে জানলার পাশে বসে একবার পড়ার বইয়ে মন দিচ্ছে একবার জানলা পেরিয়ে খুঁজছে তার প্রিয় মেঘদের ঠিকানা। একচিলতে আকাশে তখনদু-টুকরো মেঘ জোড়া লেগে চেষ্টা করছে একটা জিরাফের ছবির আঁকার। জিরাফের লম্বা গলাটাই শুধু দেখা যাচ্ছে একরত্তি জানলাটা দিয়ে। জিরাফটা হয়তো চাইছে আকাশের নীলটা তার হাঁ-এর মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে। হঠাৎ রাস্তার দিকে নজর পড়তে কেন যেন মনটা চইচই করে উঠল তার। বলাগড়ের ছোটোপিসিমা তেমন কলকাতামুখী হন বলে তন্ময়ের জানা ছিল না, তাকে দরজা খুলতে দেখে একগাল হেসে বললেন, তুই এখন কলকাতায় থাকিস নাকি? তন্ময় কিছু বলার আগে ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন জ্যাটামশাই। হঠাৎ ছোটো বোন আসতে দেখে অবাক, তুই? ছোটোপিসিমিার বয়স এখন মধ্যতিরিশে। অল্পবয়সে বিধবা হয়েছিলেন বলে তিনি আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেন না এটুকুই জানে তন্ময়। তাঁর একটিমাত্র মেয়ে, সেই মেয়েও নাকি পোলিওতে পঙ্গু। দেশের বাড়িতে যা জমিজমা আছে তাতেই তাঁদের সংসার চলে যায় বলে আত্মীয়স্বজনকে বিরক্ত করেন না কখনও। সেই ছোটোপিসিমা কলকাতার ডেরায় আসতে একটুকরো বিস্ময় জমছিল সবার মনে। কিন্তু আসার কারণ না ভেঙে হঠাৎ তন্ময়কে বললেন, তুই নিশ্চয় কলকাতার পথ চিনে ফেলেছিস একটু একটু।

একটু একটু কথাটা শুনে তন্ময়ের অহঙ্কারে ছোট্ট ছোবল, বলে, একটু একটু মানে? ভালোই চিনি কলকাতার পথঘাট। -তা হলে তো ভালোই। আমাকে কাল একবার ভবানীপুরে নিয়ে যাবি?

কলকাতায় ক-মাস থাকার সুবাদে ভবানীপুর এলাকাটা কোথায় তা তার কাছে জলের মতো সরল। কিন্তু ভবানীপুর তো আর একটুখানি জায়গা নয়, লতাপাতায় অনেকখানি। জিজ্ঞাসা করে, ভবানীপুরের কোথায়? -ওই যে, যেখানে একটা পেট্রল পাম্প আছে, তার পাশের গলি ভবানীপুরে কত-কত পেট্রলপাম্প আছে, তার মধ্যে কোথায় ছোটোপিসিমার গন্তব্য তা খুঁজে বার করা খুবই দুরূহ তা বোঝাতে চেষ্টা করে তন্ময়। কিছুক্ষণ পর ছোটোপিসিমা আবার একটুকরো ছবি আঁকলেন, ওদের বাড়ির সামনে একটা মস্ত কাঠটগর গাছ আছে। তন্ময় বুঝতে পারছে কলকাতা সম্পর্কে ছোটোপিসিমার জ্ঞান এত সূক্ষ্ম যে নাই বলিলেই চলে। তবু ছোটোপিসিমা যখন বলছেন, খড়ের গাদা থেকে একটি সেফটিপিন খুঁজে বার করতে, হবে যা হোক করে। নইলে তার কলকাতা চেনার অহঙ্কার রইবে কেন!

-কিন্তু কার বাড়ি যাবে তা এখনও বলো নি কিন্তু! ছোটপিসিমা তাতে যা বললেন, তাতে ভবানীপুরের সেই ঠিকানাবিহীন বাড়ি খোঁজায় তেমন উৎসাহ আর রইল না তন্ময়ের। তাঁর বড়ো ভাসুর পেশায় ব্যারিস্টার, বিশাল বড়লোক, ভবানীপুরে মস্ত চারতলা বাড়ি, তাঁদের বাড়িতে কী যেন কাজ আছে ছোটোপিসিমার। তিনি আগে এক-দুবার গিয়ে থাকলেও এখন একা চিনে উঠতে পারবেন না বলেই তন্ময়কে যষ্ঠি হয়ে সহযোগী হিসেবে যেতে হবে কাল।

বিশাল বড়োলোক শুনেই তন্ময়ের সামনে এক অদৃশ্য ক্যানভাসে কিছুক্ষণ হিজিবিজি ছবির উদ্রেক। ভবানীপুরের কথায় এতক্ষণ বুকের ভিতর দুরু দুরু কৌতূহল ছিল, তার পরিবর্তে মুখের ভিতরটা তিতকুটে। তন্ময় কলকাতায় এসেছে তা বছরখানেক হতে চলল, কখনও ভবানীপুর এলাকার কোনও ধনী ব্যক্তির বাড়ি যেতে হবে তা ছিল অনুমানের বাইরে। তার উপর ব্যক্তিটি ব্যারিস্টার। তন্ময়ের দিকে তাকাবেন হয়তো কীটপতঙ্গ দেখার মতো চোখ করে। তবু ছোটোপিসিমার কী জরুরি কাজ আছে, যেতে তো হবেই।

দিনটা মঙ্গলবার, প্রথম দুটো পিরিয়ড অফ এই যা বাঁচোয়া, অতএব সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ছোটোপিসিমাকে বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়ল উদ্দেশ্য সাধনে। হঠাৎ তার স্মরণে উদিত হল তার মা কথায় কথায় ছোটোপিসিমার এমন এক ভাসুরের কথা ইতিপূর্বে বলেছিলেন তাকে। এন্ড বলেছিলেন তাদের নীচের তলায় তিন-চারটি ঘরে শুধু আইনের বইয়ে ঠাসা, তার প্রতিটি চামড়া দিয়ে বাঁধিয়ে সোনার জলে নাম লেখা। তন্ময় চিরকালের বইপাগল বলেই বাড়িটি সম্পর্কে সেই কৈশোরথেকে কৌতূহল। সেই স্মৃতি উথলে উঠতে ভবানীপুরের বাড়ির উপর অনীহা উবে গিয়ে হঠাৎ বেড়ে গেল আগ্রহ।

ভবানীপুর সত্যিই এক বিশাল এলাকা, শুধু পেট্রল পাম্প আর কাঠটগর গাছে! অস্তিত্ব দিয়ে কোনও বাড়ি খুঁজে বার করা অতীব দুরূহ। কিন্তু তন্ময়ের কাছে একটি অতিরিক্ত তথ্য আছে যা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে হয়তো অসাধ্য সাধন হতে পারে। ছোটোপিসিমার ভাসুর ব্যারিস্টার, অতএব বকুলবাগান স্টপেজে নেমে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায় কে সলিসিটারের নেমপ্লেট। সেই বাড়ির ড্রয়িংরুমে অপেক্ষারত কয়েকজন মক্কেলকে জিজ্ঞাসা করতেই একজন বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, চারতলা বাড়ি তো, সে তো এখান থেকে অনেকটা দূর, হেঁটে গেলে মিনিট দশেক লাগবে। অতএব আরও দশমিনিট এলোমেলো হেঁটে, এক পাড় থেকে আর এক পাড়ায় পাড়ি দিয়ে হঠাৎ সেই কাঠটগর গাছটি আবিষ্কার করে ছোটোপিসিমা বলে উঠলে, ওই তো- বাড়ি খোঁজার সেই দুরূহ কর্মটি অতি দ্রুত সম্পন্ন করে তন্ময় মনে মনে বলল, যা হোক প্রেস্টিজ বাঁচল ছোটোপিসিমার কাছে।

অট্টালিকাটি তো পাওয়া গেল, কিন্তু তার পাঁচিলের দরজা খুলে দিলে একজন যুববয়সী কাজের লোক, তার পিছু বাড়ির ভিতরে ঢুকতে গিয়ে তন্ময়ে বুকের ভিতর ধকধক শব্দ। এ সব বড়লোক বাড়িতে সাধারণত একটা অ্যালসেশিয়ান থাকে পাহারার দায়িত্বে। শঙ্কিত হয়ে বলল, তুমি ভিতরে যাও, ছোটোপিসিমা। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।

-কেন, বাইরে কেন? ভিতরে আয়। আমি তো সঙ্গে আছি। হয়তো অ্যালসেশিয়ান-সম্পর্কিত কোনও শঙ্কা নেই বলে তন্ময়ের হাত ধরে ছোটোপিসিমিা নিয়ে গেলেন ভিতরে। অমনি কিছু আশ্চর্য চিত্রকল্প উথলে ওঠে তার চোখের সামনে। ধবধবে সাদা ইটালিয়ান টাইলস-ঢাকা উঠোন, তার চেয়েও দামি আর সাদা দুধের মতো পাথর দিয়ে সাজানো বারান্দায় ওঠার সিঁড়ি থেকে বাইরের ঘরের মেঝে পর্যন্ত। বাড়ির ভিতরটা আরও নানা রঙে রঙিন। সোফাসেট থেকেসেন্টার টেবিল, দেওয়াল থেকে মেঝে সবই টিপটপ, সাজানো-গোছানো। সেই বাড়ির বাইরের ঘরের একটি সোফায় তাকে বসতে বলে কাজের লোকটির পিছু পিছু ছোটোপিসিমা আমি উপরে যাচ্ছি, পরে তোকে খবর দিচ্ছি। বলে ভারি ও নকশা-কাটা দামি পর্দা সরিয়ে উধাও হয়ে গেলেন চকিতে। তন্ময় বসে থাকে ভিতর থেকে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায়। নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের তন্ময়ের কাছে এ বাড়ি একটি রাজপ্রাসাদই, শুধু কলকাতায় রাজা নামের কোনও পদ নেই এই যা।

কিন্তু তন্ময় বসে আছে তো বসেই আছে। কেউ না-ডাকায় তার সামনে কিছু দৃশ্যের সৃষ্টি হয় অভিমানের মেঘ পুঞ্জীভূত হয়ে। বাইরের ঘর, যাকে বড়োলোকের ড্রয়িংরুম বলে থাকে, তার খুঁটিনাটি দেখে অতিক্রান্ত করে সময়।

যে-দৃশ্যটি বারবার চোখ আটকে দেয়, অথচ সরিয়ে নিতে চায় তার অবাধ্য চোখ তা একটি মাঝারি আকারের অয়েল পেইন্টিং। অয়েল পেইন্টিং তো ভালো কথা, কিন্তু বাইরের ঘরে একটি নগ্ন রমণীর ছবি টাঙিয়ে রাখলে একটি তরুণের পক্ষে ভারী মুশকিল। চোখ চলে যাবেই, অথচ সারাক্ষণ আশঙ্কা এখন কেউ কেউ না কেউ ঘরে ঢুকে তাকে ডাকতে আসবে, আর সে সময় তার যদি নজর পড়ে তন্ময় হ্যাংলার মতো গিলছে ছবিটা, নির্ঘাৎ ধারণা করবে, ভারী অসভ্য তো ছেলেটা।

অতএব সে চোখ ফেলতে থাকে ড্রইংরুমের অন্য আসবাবপত্রে। তার ভিতরের মেঘে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে দেখতে থাকে দেওয়ালে টাঙানো মহিষের স্টাফড মুন্ডুর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা। কাচে-ঢাকা দেওয়াল আলমারির মধ্যে নানা কেতার পুতুল, জলভরা কাচের হরিণ, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদি নানান সংগ্রহ। আধঘণ্টার মধ্যে ড্রয়িংরুমের যাবতীয় দর্শনীয় তার খুঁটিনাটি মুখস্থ। কিন্তু ছোটোপিসিমা সেই যে ভিতরে গেলেন তো গেলেন, আর বেরোনোর নাম নেই, তাকে খবর দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। হয়তো বড়োলোক বাড়ির ভিতরে ঢুকে ছোটেপিসিমাও বড়োলোক হয়ে গিয়ে ভুলে গেছেন ভিতরে উথল দিচ্ছিল এক অদ্ভুত অস্বস্তি। এও ভাবছিল হয়তো এখনই কাজ মিটে যাবে ছোটোপিসিমার তাই তাকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া কথা আর ভাবেননি। পরক্ষণে এও মনে হল তাকে এ ঘরে না বসিয়ে, যে-তিন-চারটি ঘর বইয়ে ভর্তি সেই ঘরে বসালে তবু বই দেখে পার করা যেত অস্থির সময়টা। হোক না আইনের বই, তবু বই তো, বইয়ের একটা আলাদা গন্ধ আছে। আইনের বইয়ের কিছু বোঝে না বোঝে সোনার জলে এই বইযের নাম পড়তে একটা আলাদা মজা! জানা যেত কত রকমের আইনের বই হওয়া সম্ভব, তারা গায়ে গতরে কে কীরকম ভারী!

আর্য বহুক্ষণ মন খিঁচড়ে যাওয়া সময় কাটানোর পর হটাৎ ভিতরের পর্দা চকিতে সরিযে এক মধ্যবয়সী অতীব সুন্দরী মহিলার চোখ তার দিকে একবার পলক ফেলেই টেনে দিল পর্দাটা। তন্ময় কিছুক্ষণ বাকরহিত কেন না এরকম নারীমূর্তিই তো রূপকথার গল্পে পড়েছে বহুবার। তাকে আরএকবার দেখার লোভে বারবার তাকাচ্ছে পর্দার নড়ে ওঠা শরীরটার দিকে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে পর্দা সরিয়ে যার আবির্ভাব সে একটা কাজের মেয়ে, তার এক হাতে একটি কড়ির রেকাবে দুটি মিষ্টি ও অন্য হাতের কাচের গেলাস ভর্তি জল।

রেকাবি ও গেলাস তন্ময়ের সামনে সেন্টার টেবিলে রেখেই তার মুহূর্তে উধাও হওয়ার দৃশ্যটি তার কাছে বিস্ময়কর। মফস্বলের ছেলে কলকাতায় এক বড়োলোক বাড়ির কেতা দেখে প্রথমে হতভম্ব ও পরে যার-পর-নাই ক্ষুব্ধ। কাজের মেয়ে অতিথিকে খাবার দিয়ে যাবে এ দৃশ্য তার কাছে চিন্তার বাইরে।

কড়ির রেকাবে রাখা মিষ্টির দৃশ্যটি দেখতে যতখানি নয়নাভিরাম, সে গলাধঃকরণ করা সেদিন সকালে তার চেয়ে ঢের বেশি অপমানকর। মনে হচ্ছিল বড়োলোক বাড়ির দুটি মিষ্টি দু-ঘা বেত্রাঘাতের সমান। হয়তো সে সাধারণ ঘরের ছেলে বলেই ওঁরা এত উপেক্ষা দেখাতে পারলেন অনায়াসে। রাগে, ক্ষোভে বোধহয় তৃষ্ণার প্রকোপ বেড়ে যায়, তাই গেলাসের জলটা একঢোকে গিলে অপেক্ষা করতে থাকে ছোটো পিসিমার ফেরার জন্য।

বড়োলোক বাড়ি সম্পর্কে তার ভিতরে যে বিবমিষা ছিল তা বহুগুণ বেড়ে গেল আজ। আরও তিরিশ ইন্টু ষাট সেকেন্ড ভিতরে কাটিয়ে ছোটোপিসিমা বেরোলেন বাইরে, তারপর যেন কিছুই ঘটেনি এমন স্বরে বললেন, ওদের বাড়ি এলে ওরা খুব যত্নআত্তি করে, তাই না? মিষ্টিটা খেয়েছিলি তো?

তন্ময় স্তম্বিত হয়ে তাকায় ছোটোপিসিমার মুখের দিকে।

তন্ময় মুক ও বধির হয়ে হাঁটছে দেখে ছোটোপিসিমা পরক্ষণে বললেন, গায়ত্রী জানতে চাইছিল তুই আমার কে হোস? গায়ত্রী মানে নিশ্চয় ওই অহঙ্কারী মহিলা। অট্টালিকা থেকে বেরিযে ফেরার সময় একটি কথাও আর বলেনি ছোটোপিসিমার সঙ্গে। বারবার মনে হচ্ছিল তার কালই উচিত ছিল এক বড়োলোকের বাড়ি যেতে হবে শুনে প্রস্তাবটি তদ্দণ্ডে না করে দেওয়া। তা হলে এতখানি অপমানিত হতে হত না আজ। সে নিশ্চিত হল বড়োলোকরা এমনই নিষ্ঠুর আর অবিবেচক হয়। এমনই অমানবিক। এমনই যাচ্ছে তাই। তন্ময় ঠিকই অনুমান করেছে যারা দেওয়ালে এমন নগ্ন নারীর ছবি টাঙিয়ে রাখে তারা নিজেরাও অসভ্য। জীবন সম্পর্কে তার ধারণাগুলো বদলে যাচ্ছিল শহরে বসবাস করতে এসে, সেই ধারণায় আরও বদল ঘটে। তার অভিধানে বদলে যায় অনেক শব্দের অর্থ।

গ্রামবাংলা ছেড়ে কলকাতায় আসার সময় খুবই ভাবনায় ছিল এখানকার মানুষজনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে কি না! স্কুলে পড়াপড়ির দিনগুলিতে তার অভ্যাস ছিল কবিতা লেখার। হয়তো সে কারণে তার সামান্য অহঙ্কারও ছিল ভিতরে। কলকাতায় এসে বুঝল বিত্তের কাছে কবিতার অহঙ্কার সাজে না।

তন্ময়ের ভিতরে উথল দিচ্ছিল বিত্তহীনতার হীনম্মন্যতা। তার ইচ্ছে হচ্ছিল কোনওভাবে এর উচিত জবাব দিতে! কিন্তু কীভাবেই বা মোকাবিলা করবে এক বিত্তবানের অহংকারের! একটি নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের তরুণের হাতে তো কোনও অস্ত্র থাকে না বিত্তবানদের সঙ্গে লড়াই করার। হঠাৎ তার মনে পড়ল এক তরুণ কবি একবার শুধু কবিতা পড়েই বিশ্বজয় করা যায়। তন্ময়ের দরিদ্র ঝুলিতেও একটিই মাত্র সম্পদ আছে তা ডায়েরি ভর্তি কিছু কবিতা। তারও ইচ্ছে হয় একদিন কবিতা লিখে পৌঁছে যাবে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার শিকরে। লিখেছিলেন সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষায় কয়েক কোশা ঘৃতাহুতি দিয়ে তার জেদ আরও বাড়িয়ে দিলেন সেই দেমাকী গায়ত্রী। ফলে কলেজীয় লেখাপড়ার সঙ্গে প্রতিদিন একটি-একটি করে পঙক্তি লিবে জুনে কবিতা নির্মাণ করে ফেলেছে তন্ময়। কবিতা লিখে কি একদিন সত্যি টক্কর দিতে পারবে এক বিত্তবানের অহংকারের সঙ্গে। তন্ময় জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকে হয়তো কোনও একদিন এমন হল, ছোটোপিসিমা পরে কোনও একদিন কলকাতায় এলেন, তাকে বললেন ভবানীপুরে নিয়ে যেতে, তার আগেই তন্ময়ের খুব নাম হয়ে গেছে কবি হিসেবে, তার ছবি বেরোচ্ছে নানা সংবাদপত্রে, সেই সংবাদপত্র পৌঁছে গেছে ব্যারিস্টারসাহেবের ড্রয়িংরুমে, তাঁরা অবাক হয়ে দেখছেন এই সেই ছেলেটা যে কিনা একটি তুচ্ছ হয়ে বসেছিল তাদের বাইরের ঘরে।

এমন ইচ্ছেপূরণের গল্প হয়তো সত্যি, কোনও দিন ঘটবে না, তবু স্বপ্নটা দেখার কোনও ব্যত্যয় ঘটে না তন্ময়ের। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল ছোটোপিসিমা কলকাতা অভিযান আর ঘটেনি তারপর, তন্ময়েরও কবিতা লিখে বিখ্যাত হওয়া হয়নি একটুও। তবু কবিতাই সে লিখে চলল লেখাপড়ার ফুরসতে, কবিতায়-কবিতায় ফুলেফেঁপে ভরে উঠল একের পর এক ডায়েরি। দু-একটি কবিতা ছাপাও হয়ে গেল লিটল ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠায়।

তন্ময় তখন কলেজের পড়া শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে। গা-ঘেঁসাঘেঁসি করে ঘুরচে অনেক বড়োলোক বন্ধুর সঙ্গে, রূপকথার মতো দেখতে কিছু বান্ধবীরদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় উড়িয়ে দিচ্ছে চপ-কাটলেটের তরতাজা দেহ। এত সব রূপকথার মধ্যে গায়ত্রী নামের সেই অহঙ্কারী মহিলা কিন্তু হারিয়ে গেলেন না তার ক্যানভাস থেকে। হয়তো তিনি ছিলেন সাদা মেঘ দিয়ে আঁকা, সাদা মেঘ একসময় পেঁজা তুলোর মতো ছড়িয়ে গিয়েছে তার সারা মনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ ডিঙিয়ে একসময় তন্ময়ের চাকরিলাভ। হয়তো অন্য সব তরুণের মতো চাকরিলাভ তার মোক্ষলাভও হতে পারত, কিন্তু কবিতা লিখে একদিন বিশ্বজয় করবে সেই পাগলামিটা রইেই গেল কেন যেন। দু-একটি বড়ো কাগজে কবিতা মুদ্রিত হতে অনেকেই বলতে শুরু করে, বাহ, বেশ লিখছ তো আজকাল!

তন্ময় যে চাকরিটা পেয়েছে তা বেশ উঁচুতলার, একটা মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিঙের এগারোতলায় বসতে হয় তাকে। জানলা দিয়ে কলকাতার যে-দৃশ্য দেখতে পায় তা রীতিমতো উচ্চবিত্তদের কলকাতা। অফিসের চেয়ারে বসে কাজের ফাঁকে চোখ তুললেই মনে হয় এই কলকাতায় কোনও দারিদ্র নেই, অভাব-অভিযোগ নেই, ফলে প্রতিদিন অফিসে আসার পর সে নিজেও এখন বসবাস করে বিত্তবানদের পৃথিবীতে। সেই ঐশ্বর্যময় পৃথিবীতে তখন তার হাতে বেশ খেলতে শুরু করেছে রকমারি সাদা মেঘের পুঞ্জ। মেঘের তুলি দিয়ে সে এঁকে তুলতে থাকে রকমারি চিত্রকল্প, সাজায় একটার পর একটা কোলাজ। হঠাৎ সেই মেঘ খুলিয়ে উঠে একদিন কী করে যেন তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল একটি গল্প। সেই গল্প রাজ করল কিছু রকমারকম মেঘ, তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল পক্ষীরাজ ঘোড়া, তাতে বসে রাজপুত্র তলোয়ার উঁচিয়ে বেরিয়ে পড়ল বিশ্বজয়ে।

একজন প্রবীণ লেখক একদিন তাকে বললেন, গল্পটাও বেশ লিখেছ কিন্তু।

তন্ময় গম্ভীর হয়ে বলল, হ্যাঁ, বিশ্বজয় করতে হবে তো।

প্রবীণ লেখক ভাবলেন তন্ময়ের খুব অহংকার হয়েছে। তিনি তো জানেন না গায়ত্রী নামের এক বিত্তবান ঘরের মহিলার কথা।

ক্রমে তন্ময়ে হাত থেকে বেরিয়ে আসে আরও বহু পক্ষীরাজ ঘোড়া। তারা বিচরণ করতে থাকে বাংলা সাহিত্যের লেনে বাইলেনে। কবিতা থেকে গল্পে উত্তরণ মানে আরও একটু বড়ো জায়গা পাওয়া। তারপর কখন যে একটা-একটা করে পক্ষীরাজ ঘোড়াগুলো কলকাতার বহু কাগজে ভর্তি হতে শুরু করে তা মনেও পড়ে না আর।

গরীব তরুণদের লেখক হওয়া গল্প এক-একজনের এক-একরকম। তন্ময়ের পক্ষীরাজ ঘোড়াও একসময় নিশ্চয় পৌঁছে গেল কিছু ধনীব্যক্তির ড্রয়িংরুমে। ঘটনাটা সে অবশ্য জানতেও পারত না ছোটোপিসিমার কলকাতায় পুনাবির্ভাব না ঘটলে।

ছোটোপিসিমা আরও অনেকগুলো বছর পার করে আধা- রুপুলি চুলে আরও রুপোর টুকরো মেঘে হঠাৎ একদিন হাজির হয়ে তন্ময়কে ধরলেন, কাল একটু নিয়ে যাবি ভাসুরঠাকুরের বাড়ি?

তন্ময়ের তুলির মেঘে হঠাৎ ঘেঁটে গিয়ে কিছু পুরোনো ছবির উদয় হয়, তৎক্ষণাৎ বড়োপিসিমার প্রস্তাব খারিজ করতে। যাচ্ছিল, হঠাৎ শুনল, ভাসুরঠাকুরের খুব বাড়াবাড়ি ব্যামো।

ভাসুরঠাকুরের অসুখ বললে তো আর না করা যায় না, তা ছাড়া এতকাল পরে প্রথম যৌবনের সেই রাগ-রাগ ভাবটা থাকার কথা নয়, বলল, ঠিক আছে, অসুখ যখন তো যেতেই হবে। কিন্তু একটা শর্তে। ছোটোপিসিমা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কী শর্ত? -তোমার ভাসুরঠাকুরের বাড়ির ভিতরে যাব না। আমি বাইরে অপেক্ষা করব, তোমার কাজ শেষ হয়ে গেলে চলে এসো।

ছোটোপিসিমা কোনও কথা না বাড়িয়ে বললেন, তাই করিস।

আমার বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।

অতএব কথার নড়চড় করেনি তন্ময়, ছোটোপিসিমাকে নিয়ে গিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কাছেই সেই কাঠটগর গাছে। ছায়ায়। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, দীর্ঘদিন ফুল ফুটিয়ে কাঠটগর গাছটার এখন কী বিবর্ণ চেহারা! ডালগুলোয় পাতা নেই, ফুল তো নেইই। পরক্ষণে চোখ পড়ল ব্যারিস্টারের বিশাল অট্টালিকাটির উপর। লক্ষ করে দেখছিল একদা ঐশ্বর্যবান বাড়িটির শরীর থেকে হারিয়ে গেছে সেদিনের রঙিন ছবিটা।

বাইশ-তেইশ বছর পরে সেই পুরোনো অপমান মনে রাখার কোনও কারণ নেই, তবু কী আশ্চর্য, তারুণ্যের ক্রোধ বোধহয় সহজে যাওয়ার নয়।

আধঘণ্টা পরে বেরিয়ে এলেন ছোটোপিসিমা, মুখ থমথমে, বললেন, অবস্থা খুব সিরিয়াস, হয়তো আজ বা কাল হসপিটালাইজ করতে হবে।

কখনও না-দেখা সেই ভাসুরঠাকুরের অসুখের বাড়াবাড়ি শুনে খুব বেশি আলোড়ন হওয়ার কথা নয়, তবু তন্ময়ের মনে হচ্ছিল খুব, সামান্য কারণে এতদিন ক্ষোভ পুষে রেখেছিল তার ভিতরে।

বাড়ি ফেরার পথে ছোটোপিসিমা হঠাৎ বললেন, এত মন খারাপের মধ্যেও গায়ত্রী জিজ্ঞাসা করছিল তোর কথা। তন্ময় বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে, আমার কথা হঠাৎ?

-গায়ত্রী মাঝেমধ্যে পত্রিকায় লেখালিখি করে। বলছিল, তোর গল্প কাগজে পড়েছে। ওর বেশ লাগে তোর লেখা পড়তে। গায়ত্রী মানে বাইস-তেইশ বছর আগে দেখা সেই অহঙ্কারী মধ্যবয়সী যুবতী। এক ঝলক দেখা সেই মুখখানি আজও আঁকা রয়েছে তার ক্যানভাসে। উনি যে লেখেন তা জানত না কখনও। গায়ত্রী নামের কত মহিলাই তো লেখেন পত্রপত্রিকায়। কিন্তু-

তন্ময়ের ঘোর ভাঙে হঠাৎ, ভাবল ছোটোপিসিমার জা গায়ত্রী যখন একজন লেখিকা, তিনি তো তা হলে তন্ময়েরই সমগোত্রীয়।

তন্ময় জানতে চায়, কী লেখেন? কী নামে লেখেন?

-বলছিল গল্প লেখে। গায়ত্রী ভট্টাচার্য নামেই লেখে। ইদানীং লিখছে একটা জীবনীগ্রন্থ। ওর বাবা এককালে বড়ো সমাজসেবী ছিলেন। অনেক দান-ধ্যানও ছিল তাঁর। তাঁর জীবনী নিয়ে একটা বই লিখছে অনেকদিন ধরে। বই হয়ে বেরোবে শিগগির।

জীবনীগ্রন্থ লেখা খুব সহজ কাজ, তা নয়। বেশ এলেম লাগে গুছিয়ে লিখতে। তন্ময় অবাক হচ্ছিল সেই এক ঝলক দেখা মহিলার উৎসাহের কথা ভেবে। এক কন্যা তার পিতার জীবনী লিখছে তা খুবই আশ্চর্যের কথা। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল এতক্ষণ গেটের বাইরে অপেক্ষা না করে ভিতরে গিয়ে আলাপ করে এলেই তো ভালো হত!

তন্ময় আফসোস করছিল মনে মনে। ইতিমধ্যে গায়ত্রীর জীবনেও পার হয়ে গেল অনেকগুলো বছর। তাঁর হয়তো মনেও নেই অত বছর আগে একটি তরুণকে বাড়ির কাজের মেয়ের মাধ্যমে মিষ্টি পাঠিয়েছিলেন কি না। এখন তিনি একজন প্রৌঢ়ই।

ছোটোপিসিমা পুনর্বার তাঁর বাড়ি ফিরে গেলে তন্ময়ের ভাবনার ওখানেই ইতি হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু জীবনের কিছু কিছু পাওনা থাকে যা অনিবার্যভাবে এসে যায় না-চাইতে। তন্ময় কোথায় চাকরি করে, কোথায় পোস্টিং তা নিশ্চয়ই জেনে নিয়েছিলেন ছোটোপিসিমার সেই গায়ত্রী, হঠাৎ একদিন অফিসে কাজে শশব্যস্ত, সেসময় একটি প্যাকেট এসে তার কাছে পৌঁছয় ক্যুরিয়ার মারফত। প্যাকেটটি খুলে দেখে একজন গায়ত্রী ভট্টাচার্যের লেখা একটি মোটাসোটা বই। সোনার জলে লেখা তার নামপত্র। ভিতরের ছাপাও ঝকঝকে। লেখার ভাষাও চমৎকার। বইটি তাঁর বাবার জীবনীগ্রন্থ। বহু আলোকচিত্র সহযোগে দিব্যি সুদৃশ্য একটি আস্ত গ্রন্থ। বইয়ের প্রচ্ছদ খুলেই দেখল তার নাম খুব যত্ন করে লিখেছেন গায়ত্রী ভট্টাচার্য, তার উপরে লেখা, যে অভিমানী তরুণ কবি ও লেখক একদা আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আলাপ করা হয়ে ওঠেনি, তাকে আমার প্রীতি উপহার।

Archive

Most Popular

ভ্যালেন্টাইন উইক স্পেশাল ফ্যাশন স্টাইলিং

8th Feb 2025

প্রতিবেদন

অন্তরা ব্যানার্জি

Read More