30th Oct 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
দীপাবলির এক দিন আগে এবং ধনতেরসের একদিন পরে উদযাপিত হয় নরক চতুর্দশী। এটি ছোট দিওয়ালি, রূপ চৌদাস, নরকা চৌদাস, রূপ চতুর্দশী বা নরকা পূজা নামেও পরিচিত। এই দিনে মৃত্যুর দেবতা যমরাজ ও শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার বিধান রয়েছে। রূপ চৌদ্দের দিন সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে চারপাশ আলোকিত করা হয়।
কেন জ্বালা হয় ১৪ প্রদীপ ?
মানুষের বিশ্বাস, কোনোরকম অশুভ শক্তি বা ভূত-প্রেত আলো দেখলে ভয় পায়। তাই এই দিনে ভূত-প্রেতদের নিজেদের বাড়ি থেকে দূরে রাখার জন্য বাড়িতে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি প্রচলিত আছে। আবার অনেকেই মতে, ১৪ পুরুষ এবং যমরাজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই চতুর্দশীতে বাড়িতে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়।এছাড়াও অনেকে মনে করেন, এই ভূত চতুর্দশী আসলে বিশেষ এক পার্বণ। ঠিক মহালয়ার মতো। মহালয়ার ভোরে যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়, এই তিথিতেও পরলোকগত চৌদ্দপুরুষ এর উদ্দেশ্যেই ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় বাড়িতে বাড়িতে।
কেন খাওয়া হয় ১৪ শাক ?
আসলে মৃত্যুর পর আত্মারা নাকি প্রকৃতির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। একে বলা পঞ্চভূত। এদিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর আগে ১৪ শাক খেয়ে ১৪ পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। মূলত ১৪ ধরণের শাক একসঙ্গে রান্না করে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে, এই এই শাক খাওয়ার পিছনে কিন্তু একটি বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। আসলে আশ্বিন ও কার্তিক মাসকে যমদষ্টা কাল বলা হয়। এই সময় শীতের মরসুম শুরু হয়। আর মরশুম বদল মানেই নানা রকম রোগে ভোগার আশঙ্কা থাকে। তাই রোগভোগ থেকে রক্ষা পেতে এই ১৪ শাক খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।
১৪ শাকের মধ্যে থাকে ওল শাক ও বেতো শাক। ওল গাছের পাতা, ডাল আর ওলের অর্শ। এই শাক লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। রক্ত আমাশা সাড়াতে কার্যকরী।
বেতো শাকে আছে আট ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ভিটামিন। অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ত্বকের রোগে খুব উপকারী এই শাক।
এর মধ্যে থাকে কেঁউ শাক। এই শাকের রস বাতের রোগ ও কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে লড়তে বেশ কার্যকরী। শরীররে হজম শক্তিও বাড়ায়।
সর্ষে শাকের নাম কিন্তু আছে এই তালিকায়। সর্ষে শাক ভিটামিন, লোহা ও ম্যাগনেশিয়ামের ভাল উৎস।
তালিকায় রয়েছে নিম পাতাও। বহু স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর নিমপাতা ভেষজ হিসাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ ত্বকের যত্ন নিতে এবং সুগার রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
শালিঞ্চ শাক খেতে হয় এই দিন। ত্বক, চোখ, চুল ও ডায়ারিয়ার রোগীদের জন্য এই শাক বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
থাকে পলতা পাতা বা পটল পাতা খাওয়ার চল রয়েছে। এই শাক শরীরে রক্ত বাড়াতে ও শোধন করতে বেশ উপযোগী। হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কাটা জায়গায় এই পাতার রস লাগালে প্রতিষেধকের কাজ করে।
১৪ শাকের একটি হল গুলঞ্চ শাক। সুগার, যক্ষ্মা, বাত, গানোরিয়ার মতো একাধিক দুরারোগ্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বেশ উপকারী এই শাক।
শ্বেতির রোগের চিকিৎসা করতে ব্যবহার করা হয় জয়ন্তী শাক। ভূত চতুর্দশীর দিন এই শাক খেতে হয়।
হিঞ্চে শাক বা হেলেঞ্চা শাক খাওয়ার চল রয়েছে। প্রধানত জলে জন্মায় এই শাক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর হিঞ্চে শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
শুষনি শাক, মাথার যন্ত্রণা কমাতে অব্যর্থ এই শাক। রক্তের চাপ বা মানসিক চাপ খুব বেড়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি পেতে এই শাক খেতেই পারেন।
বাত, জ্বর, চুল পড়া, হাঁপানি, সর্দিকাশি, লিভারের অসুখে বেশ উপকারী ঘেঁটু শাক। তালিকায় কিন্ত আছে এই নামও।
শিশুদের পেটের রোগ হতেই থাকে। আর সেই রোগ সারাতে মোক্ষম দাওয়াই শেলুকা বা শতপুষ্প শাক। এছাড়াও জ্বর সারাতে বেশ কার্যকরী এই শাক।
শেষ এবং চোদ্দতম শাকটি হল কালকাসুন্দে শাক। এই শাকের রস অ্যালার্জি, জ্বর, ক্ষত নিরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করতে বেশ সাহায্য করে।