13th Nov 2024
ভ্রমণ
কমলেন্দু সরকার
প্রকৃতিপ্রেমিকদের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা ঢেঙ্কানল। পাহাড় আর অরণ্য ঘেরা ঢেঙ্কানলের শোভা পরম মনোরম। শুধু প্রকৃতি নয়, ঢেঙ্কানল মন্দিরশহরও বটে। মন্দির আর রোমাঞ্চকর জায়গার মিলমিশে ঢেঙ্কানল লা জবাব। ঢেঙ্কানলের মন্দিরগুলো প্রাচীন ভারতের স্থাপত্যের উজ্জ্বল নির্দশন।
কনকেশ্বর মন্দির: ঢেঙ্কানল থেকে ৭০ কিমি দূরে এই মন্দির। এই মন্দিরে পূজিত হন কনকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, পশ্চিমেশ্বর এবং কপিলেশ্বর। মন্দির স্থাপত্যে পুরনো কালের ছাপ বিদ্যমান।
জোরান্দা: মহিমা গোঁসাইয়ের সমাধি এখানে বিশেষ আকর্ষণ। শূন্য, গদি এবং ধুনি মন্দির অপূর্ব। এখানে মাঘ মাসের পূর্ণিমায় মেলা বসে।
কপিলাস মন্দির: প্রায় তেইশো ফুট উঁচুতে পাহাড়-মাথায় কপিলাস মন্দির। এর পরিচিতি ওডিশার দ্বিতীয় কৈলাস নামে। মন্দিরে যাওয়ার হাঁটাপথটি বেশ রোমাঞ্চকর! হেঁটে গেলে দুকিমি পথে সাড়ে তেরোশো সিঁড়ি ভাঙতে হয়। পাহাড়ের ওপর থেকে চারিপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য বড়ই নয়নাভিরাম। শোনা যায়, রাজা নরসিংহদেবের কালে মন্দির নির্মিত। এখানে রয়েছে পয়ামৃত কুণ্ড এবং মারীচি কুণ্ড। এখানেই নাকি প্রথমে কপিল মুনির আশ্রম ছিল।
ঐতিহাসিকদের মতে, পরে জায়গাটি জনপ্রিয় হয় দ্বিতীয় কৈলাস হিসেবে। তাই কপিল মুনি এবং কৈলাসের সঙ্গে মিলিয়ে নামকরণ হয়েছে কপিলাস। কিংবদন্তি এখানে তপস্যা করেছিলেন গণেশ, কার্তিক, গঙ্গা এবং জগন্নাথ।
সপ্তশয্যা: চেম্বানল থেকে আধঘন্টা দূরত্বে পাহাড়ের ওপর সপ্তশয্যা গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শান্তি, নিরিবিলিতে অবসরযাপনের চমৎকার জায়গা। মানুষের বিশ্বাস, অজ্ঞাতবাসের সময় পঞ্চপাণ্ডব এখানে বাস করেছিলেন। রামচন্দ্রও বনবাস পর্বে সীতা এবং লক্ষ্মণকে নিয়ে এসেছিলেন এখানে। সপ্তশয্যা জলপ্রপাত এবং টিকউড গার্ডেন অপূর্ব। দেড় কিমি অরণ্যময় পাহাড়ি পথ হেঁটে পৌঁছনো যায় শ্রীরঘুনাথ মন্দিরে।
ঢেঙ্কানলের বিখ্যাত বৈষ্ণব পীঠস্থান। মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন রানি রত্নপ্রভাদেবী। অসাধারণ মন্দির স্থাপত্য। আরও এক কিমি ওপরের দিকে হাঁটলে দেখা যায় সপ্ত ঋষির সাতটি তপস্যার স্থান এবং সাতটি গুহা। এখানে থাকতেন পঞ্চপাণ্ডব। এখানকার প্রাকৃতিক রূপ-সৌন্দর্য চমৎকার! সময় করে দেখবেন ডোকরাগ্রাম সদৈবেরিনী। ঢেঙ্কানল রাজবাড়িটিও দেখার তালিকায় রাখতে হবে।
অষ্টশম্ভু মন্দির: গোদাবরী নদীর তীরে আটটি স্থানে রয়েছে আলাদা শিবমন্দির। তাই বলা হয় অষ্টশন্তু মন্দির। দশ শতকে তৈরি এইসব মন্দির কলিঙ্গ স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ঢেঙ্কানলের দূরত্ব ৪৫১ কিমি। ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৬ ধরে যেতে হবে। হাওড়া স্টেশন থেকে জনশতাব্দী ছাড়ে দুপুরের দিকে। খোঁজ নিন। কটক স্টেশনে নেমে বাদামবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢেঙ্কানলের বাস ধরুন। ভাড়ার গাড়িও আছে।
কোথায় থাকবেন: ঢেঙ্কানল শহরে প্রচুর হোটেল আছে। হোটেল নিরুপমা, ভাড়া- ১৮০০-৩০০০ টাকা। ফোন: 9437169917. ঢেঙ্কানল প্যালেস, ভাড়া- ৯০০০ টাকা। দুজনের জন্য থাকা-খাওয়াসহ। ফোন: 9437292448