19th Nov 2024
প্রতিবেদন
সুস্মিতা মিত্র
মালদহ জেলার নামকরণ এই জেলার আদি বাসিন্দা মলদ কৌমগোষ্ঠীর নাম থেকে। ভিন্নমতে ফারসি শব্দ মাল অর্থাৎ ধনসম্পদ ও বাংলা দহ শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে এই জেলার নামটির উৎপত্তি। বিশিষ্ট দার্শনিক ও বৈয়াকরণ পানিনি তার লেখায় গৌরপুরা বলে একটি প্রাচীন জনপদের উল্লেখ করেন। যার বিস্তৃতি গৌর ও পান্ডুয়া (পুন্ড্রবর্ধন) পর্যন্ত। মহানন্দা এবং কালিন্দী নদীর সঙ্গমের ঠিক পূর্বে রয়েছে ইংলিশ বাজার। যা এককালে সমগ্র বাংলার রাজধানী ছিল। প্রাথমিকভাবে তার নাম ছিল ENGELZAVAD।
মৌর্য থেকে পাল রাজত্বকালের ইতিহাসে মোড়া শহরের খাবার দাবার যে তেমনি সমৃদ্ধ হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আমের পাশাপাশি রসকদম্ব এবং কলাই এর রুটি এখানকার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে অন্যতম।
রসকদম্ব
কথিত আছে আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে গৌর মালদার রামকেলিতে এসেছিলেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেব। বিশ্রাম নিয়েছিলেন এক ফুলে ভর্তি কদম গাছের নিচে। শোনা যায় এই ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে, মালদার কারিগরেরেরা তৈরি করেন রসকদম্ব বা রস কদম।
কী কী লাগবে
দুধ ১ লিটার, ভিনেগার দেড় টেবিল চামচ, চিনি ১ কাপ + ২ টেবিল চামচ, গুঁড়ো দুধ ১ কাপ + ১/৪ কাপ, ময়দা ১ চা চামচ, সুজি ১ চা চামচ, গুঁড়ো চিনি, ১ চা চামচ, কেশর ১ চিমটি, রোস্টেড গোটা পোস্ত দানা।
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে ১ কাপ দুধ রেখে বাকি দুধে ভিনেগার দিয়ে ছানা কেটে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। এবার সুজি, গুঁড়ো চিনি, ময়দা দিয়ে ছানা ভালো করে মেখে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিতে হবে। ১ কাপ চিনি, কেশর ও চার কাপ জলে ফুটিয়ে নিন। ওর মধ্যে ছানার বল দিয়ে ২০ মিনিট ফুটিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন। ১ ঘন্টা পর রসগোল্লা ছাঁকনিতে রেখে দিন ৩০ মিনিট। এবার ১ কাপ দুধ ও ১ কাপ গুঁড়ো দুধ গুলে কম আঁচে জ্বাল দিন। ঘন হলে ২ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে মিশিয়ে শুকনো হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। এবার হাতে অল্প ঘি লাগিয়ে অল্প অল্প মন্ড নিয়ে তার মধ্যে রসগোল্লা ভরে ভালো করে মুড়িয়ে নিন। রোস্ট করা গোটা পোস্ত দানা মাখিয়ে নিলেই তৈরি রস কদম্ব।
কলাইয়ের রুটি
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চলে প্রথম কলাইয়ের রুটির প্রচলন শুরু হয়। প্রতিবছর বন্যায় ভেসে আসা পলি মাটির চর শীতে জেগে উঠলে প্রায় পরিচর্যা ছাড়াই প্রচুর মাষকলাই ফলতো। চালের সঙ্গে এই মাসকলাই পিষে তার রুটি বানিয়ে নিয়ে কৃষকেরা কাজে যেতেন। ছয় থেকে সাত ঘন্টা পেটে থাকার কারণে সাধারণত প্রান্তিক এবং শ্রমিক শ্রেণীর খাবার হিসেবে জনপ্রিয় হয় এই রুটি। সঙ্গে থাকতো সর্ষের তেল, লবণ, পেঁয়াজ কুচি আর মরিচ ভর্তা। এক সময় পর মালদহতেও প্রবলভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই রুটি। বর্তমানে মালদহের বিভিন্ন রেস্তোরায় বেগুন পোড়া আর ধনেপাতা চাটনি সহ পাওয়া যায়।
কী কী লাগবে
মাষকলাই আটা ১ কাপ, চালের গুঁড়ো ১ কাপ, নুন স্বাদ মতো, সাদা তেল ১ চামচ, গরম জল পরিমাণ মতো
কীভাবে বানাবেন
জলে নুন আর সাদা তেল মিশিয়ে ফুটে উঠলে অল্প অল্প করে মাষকলাই আটা আর চালের গুঁড়ো মিশিয়ে সমানে নাড়তে থাকুন। ডো মতো হলে ঢেকে ঠাণ্ডা হতে দিন। হাতে তেল মেখে আবার ও ভালো করে মেখে নিন। এবার ছোট ছোট বলের মতো লেচি কেটে, হাতের তালুর সাহায্যে চেপে চেপে রুটি গুলো বানিয়ে নিন। মাটির সরাতে সেঁকে এই রুটি বানানো হয়। না থাকলে লোহার চাটুতেও বানাতে পারেন। সরষের তেল আর নুন মাখিয়ে, কাঁচা পেঁয়াজ আর পছন্দ মতো ভর্তাসহ পরিবেশন করুন।