20th Nov 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
মাসানাম মার্গশীর্ষ আয়াম গীতায় উল্লেখিত শ্রীকৃষ্ণের এই উবাচের অর্থ আমিই মার্গশিরা, এই আমার রূপ। সংস্কৃতে অগ্রহায়ণ মাসকে মার্গশিরাও বলা হয়। দ্বাপর যুগে সত্য যুগ সম্পর্কে বিশেষ উক্তি করেছিলেন বিষ্ণুর নবম অবতার কৃষ্ণ। অঘ্রাণ মাসে শুরু হওয়া পৃথিবীর এই প্রথম যুগ আজও রহস্যে ঘেরা।
অগ্রহায়ণ মাসের মাহাত্ম্য:
পুরাণ অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসেই মৎস্য অবতার রূপ ধারণ করেন বিষ্ণু। সত্যযুগে চারবার অবতার রূপ নিয়েছিলেন বিষ্ণু। এই চার অবতার হল মৎস্য, কূর্ম, বরাহ ও নরসিংহ। বিষ্ণুর প্রথম অবতার হলেন মৎস্য। হায়াগ্রীব নামে একটি জলরাক্ষসের হাত থেকে চার বেদকে রক্ষা করতে এই অবতার রূপ নিয়েছিলেন বিষ্ণু। এছাড়া সৃষ্টি প্রথম মহাপ্রলংকর বন্যা থেকে মনুকে রক্ষা করেছিলেন মৎস্য অবতার। একটি বিশাল নৌকা তৈরি করে সেখানে সব ধরনের প্রাণী, গাছের বীজ ও সাত ঋষিকে নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন। সৃষ্টিতে সব ধ্বংস হয়ে গেলে মনুর সাহায্যেই নতুন করে শুরু হয় সৃষ্টিচক্র।
বাংলার ব্রত ইতুপুজো:
কার্তিক সংক্রান্তির দিন এই ব্রতর শুরু আর অগ্রহায়ণ সংক্রান্তির দিন এই পুজোর নিবৃত্তি। ইতু মূলত সূর্যদেবের পুজো। তাই অঘ্রাণ মাসের প্রতি রবিবার এই ব্রত করা নিয়ম। রবি অর্থাৎ সূর্য। ফসলের মাসে সূর্যদেবকে তুষ্ট রাখতেই এই পুজো। অঘ্রাণের নবান্নে প্রবল সূর্যালোকে ফসল উৎপাদন যাতে বেশি হয় তাই ইতু পুজো করে সূর্য দেবতাকে তুষ্ট করার রীতি। পরবর্তীকালে ইতু পুজো লক্ষ্মী দেবীর আরাধনাতে রূপান্তরিত হয়েছে। ইতু লক্ষ্মী যার নাম। এদেশীয় দের মধ্যে এই পুজোর প্রচলন রয়েছে।
ঘটে সিঁদুর দিয়ে পুতুল আঁকা হয়। ঘটের কানায় জড়ানো হয় হলুদ, মানকচু, আখ, কলমি আর শুষনি। বাড়ির গিন্নিরা স্নান সেরে ইতুর পুজোর জন্য প্রস্তুত হন। ইতু পুজোয় কোন ব্রাহ্মণ পুরোহিত লাগেনা। বাড়ির মেয়েরাই করতে পারেন এ ব্রত। পুজোর শেষে গোল হয়ে শুনতে বসা ব্রতকথা। চাল কলা আর সিধে নিয়ে গিন্নী সুর করে বলবে ইতুব্রতকথা। সেদিন হবে সেদ্ধ নিরামিষাহার। নবান্নের নতুন চাল আর খেজুর গুড়ে ইতুর পায়েসও অপরিহার্য এই ব্রতের আহার। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ব্রাহ্মণ দিয়ে নৈবেদ্য সহযোগে পুজো করাতে হয় এবং ইতুর ব্রত কথা শুনতে হয়। পুরো অগ্রহায়ণ মাস ধরে পুজোর পর অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে পুকুর বা নদীতে ইতুর বিসর্জন দিতে হয়।
কৃষিজ সভ্যতার প্রতীক এই পার্বণ৷ মনে করা হয়, নিষ্ঠা ভরে ইতু পুজো পালন করলে সংসারে অর্থ, সুখ সমৃদ্ধি, শ্রী ভরে থাকে।