10th Dec 2024
ভ্রমণ
কমলেন্দু সরকার
এমন সমুদ্রসৈকত আছে নাকি যেখানে কোনও হইহট্টগোল নেই! আছে, কাছেপিঠেই। সেই সমুদ্রসৈকতে নিস্তব্ধতা ভাঙে কেবল সমুদ্রের ঢেউয়ে। আর ফিসফাস করে কথা ঝাউ আর ইউক্যালিপটাস স্পর্শ বাতাস। সে বাতাস মন মাতাল করে দেয়, মন উতলা হয়ে যায়! রূপকথার সোনা আর রুপোর দুই কাঠিই এই বালিয়াড়িতে মজুত! যে-জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় নিত্যদিনের হাঁপ-ধরানো জীবনে প্রাণ ফিরে আসে। একঝলক সমুদ্রগভীর ছুঁয়ে আসা বাতাস যখন চোখ-মুখ স্পর্শ করে তখন মন আচমকাই মেতে ওঠে আনন্দে! স্ফূর্তিতে প্রাণ তখন গড়ের মাঠ।
সমুদ্রস্নানে সারা শরীরে অপার আনন্দ। ঝাউবনের অন্তরালে বাঁকিপুট সমুদ্রসৈকত এক অনন্ত আনন্দের ভাণ্ডার! এখানকার নয়নাভিরাম রূপ-মাধুর্য মুগ্ধতা বয়ে আনে সৈকতে ঢেউ ভাঙা বাতাসে! বাঁকিপুট বেলাভূমির লাল কাঁকড়া ভাললাগার এক অনন্য আকর্ষণ! সারা সৈকতে এমনভাবে ছড়িয়ে থাকে দূর থেকে মনে হবে সমুদ্র যেন লাল গালিচা পেতে রেখেছে পর্যটকের অপেক্ষায়! এতটুকু পায়ের শব্দে উধাও লাল কাঁকড়ার দল।
সমুদ্রপ্রেমী পর্যটকদের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয় বাঁকিপুটের কুমারী তট। তাই বাঁকিপুটের সমুদ্রসৈকত এখনও কিছুটা নির্জন, নিরিবিলি। ঝাউয়ের অরণ্য বেষ্টিত সৈকত। এই বেলাভূমি থেকে সূর্যোদয় এবং অন্তের মোহিনী রূপ ভীষণভাবে হৃদয় উদ্বেলিত করবে! জোয়ারে ফুলেফেঁপে ওঠে সমুদ্র! বেলাভূমি ধরে হাঁটলে পদচুম্বন দিয়ে সমুদ্রের নীল জল! তখন বেশ রোম্যান্টিক লাগে নিজেকে এবং পরিবেশ। সবমিলিয়ে আত্মার আরাম বাঁকিপুট! প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে ইতিহাস।
কমবেশি হাঁটাপথ আধ কিমি দূরে দরিয়াপুরে ব্রিটিশ আমলের বাতিঘর। ৯৬ ফুট উঁচু! বাতিঘরের ওপর থেকে পাখির চোখে বাঁকিপুট লাগে অপূর্ব! সামান্য অর্থের বিনিময়ে অনুমতি পাওয়া যায় বাতিঘরের ওপরে ওঠার। সময়টা মনে রাখবেন বাতিঘরে উঠতে হবে বেলা তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে। কিছুটা এগোলেই দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল ফিশিং হারবার। এখান থেকেও চোখে পড়ে আশপাশের চমৎকার সব দৃশ্য! আছে ক্ষীণকায় রসুলপুর নদী। কপালকুণ্ডলার নদী। কিছুটা দূরেই বগুড়ান জলপাই। এখানকার সমুদ্রের বেলাভূমি ভীষণই মনোরম। পাঁচ কিমি দূরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মৃতিবিজড়িত কপালকুণ্ডলা মন্দির। এই মন্দির কেন্দ্র করেই সাহিত্যসম্রাটের কপালকুণ্ডলা উপন্যাস।
কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে দিঘার ট্রেন কিংবা এবং সাঁতরাগাছি থেকে দিঘার ট্রেনে কাঁথি স্টেশনে নামতে হবে। কাঁথি আসতে সময় লাগে কমবেশি ঘণ্টা তিনেক। কাঁথি স্টেশন থেকে বাঁকিপুট প্রায় ১৬ কিমি। গাড়ি বা জুনপুট হয়ে শেয়ার জিপে আসা যায়। কলকাতা, হাওড়া থেকে কাঁথি আসবার প্রচুর বাস আছে। কলকাতা থেকে গাড়িতে হুগলি সেতু পেরিয়ে ছনম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সোজা মেচেদা। তারপর হলদিয়ার রাস্তা ধরে নন্দকুমার। সেখান থেকে দিঘার পথে কাঁথি। এরপর জুনপুট হয়ে বাঁকিপুট। ট্রেন বা বাসে গেলে কাঁথি নামতে হবে। আগাম বলে রাখলে হোটেল থেকে পিকআপের ব্যবস্থা আছে। পড়বে ৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন: ঝিনুক রেসিডেন্সি। ভাড়া- নন এসি ১১০০-১২০০টাকা, এসি ১৭৫০টাকা। চার শয্যার ঘর নন এসি ১৮০০টাকা, এসি ২৪০০টাকা। সারাদিনের মাথাপিছু খাওয়াদাওয়া ৭০০টাকা প্যাকেজ। আশপাশে ঘোরাঘুরির জন্য লাগে ৫০০-৭০০টাকা।
যোগাযোগ: 09932677258.