3rd Jan 2025
সাহিত্য
পল্লব বসু
ডাঃ সুস্মিতা সর্বেশ্বরের রায়ের ডান ক্রর ভিতরের দিকের কপালের অংশে চাপ দিয়ে পেইন রেসপন্স দেখলেন। কোন সাড় নেই, হাত বা পায়ের আঙুলে সামান্য ফ্লিকারও হল না।
ভাই কামেশ্বরের মৃত্যুর পর, রায় পরিবারের অকৃতদার বড়দা সর্বেশ্বরই এঁদের বর্তমান অভিভাবক। এমনিতে পারকিনসন্স রোগে রায়বাবু দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী, সঙ্গে অ্যালজহেইমার, স্নায়ু শুকিয়ে যাওয়া যোগ হয়েছে। ভাইপোরাই ব্যবসার হাল ধরেছেন। তবে, শেষ কয়েকদিনে অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটেছে, যে হাউজ ফিজিশিয়ান সুস্মিতাকে কল দিয়েছিলেন রায় পরিবার। বাড়িতেই, ক্যাথেটার পরিয়ে, শিরায় ডেক্সট্রোজ-স্যালাইন ফ্লুয়িড চালিয়ে সকাল বিকেল কিছু ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করে গেছিলেন সুস্মিতা। কিন্তু, আজ অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় সুস্মিতাকে আবার কল দিয়েছেন ওঁরা। ওষুধ স্যালাইনের যথাযত প্রয়োগ সত্ত্বেও সমস্ত ক্লিনিক্যাল স্কোরের অবনতিটা সুস্মিতার হিসেবে ঠিক মিলছে না। রোগীর বিছানার পাশে কিছুটা সময় থম মেরে বসে থাকেন। ইউরো ব্যাগে জমা ইউরিনের পরিমাণ স্বাভাবিক, কিন্তু, স্যালাইনের চ্যানেল পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখলেন সেটা এক্সট্রা হয়ে আছে, অর্থাৎ ব্লক হয়ে গেছে চ্যানেলটা। স্যালাইনের ফোঁটা পড়ার অবস্থা দেখেই ওঁর সন্দেহ হয়েছিল। বিছানার নিচে রাখা গামলা উঁকি মেরে দেখেন, ইঞ্জেকশানের অ্যাম্পেল বা ভায়াল, রায়বাবুর কফ, থুতু, তুলো, সিরিঞ্জ ইত্যাদি পড়ে আছে। পুতুর রং পরীক্ষা করেন সুস্মিতা। শিরায় নতুন চ্যানেল করে ঠিকমতো স্যালাইন চালান, নতুন করে একটা প্রেসক্রিপশানও করেন।
ম্যাডাম, জ্যাঠাকে কেমন দেখলেন? বড় পুত্র সোমেশ্বরের স্ত্রী বিশাখা সুস্মিতার বিশেষ পছন্দের ধূমায়িত ব্ল্যাক কফি আর কুকিস বিস্কিট নিয়ে ডাইনিং-এ সুস্মিতার সামনের টেবিলে রাখেন।
অবস্থা ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে কী করে বুঝতে পারছি না। রক্তে সোডিয়াম লেভেল ফল করছে বলে মনে হচ্ছে, অথচ স্যালাইন চালানো আছে। আমি সেভাবে কোন আশা দিতে পারছি না। কয়েকটা টেস্ট লিখেছি, কাল করিয়ে রিপোর্ট আমায় হোয়াটস অ্যাপ করে দেবেন। ওঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করে দিলে ভালো হয়...।
ম্যাডাম, এখন করোনা আবহে আমরা কেউ নার্সিং হোমে দেব না, এক রোগ নিয়ে গিয়ে অন্যটা বাধিয়ে আসবেন তখন... ওঁর ক্ষতি তো হবেই, সঙ্গে আমরাও বিপদে পড়ব। আপনি ওই বাড়িতেই যা পারেন করুন...। আপনার উপর অগাধ বিশ্বাস আমাদের।
এতদিন তো যতটা পেরেছি করেছি, কিন্তু, এবার কোনওভাবেই ওঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে না..." সুস্মিতা কফিতে চুমুক দেন অন্যমনস্ক হয়ে। সারাদিন হসপিটালে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। কিন্তু, গরম কফিতে কয়েক চুমুক দিয়ে অবসন্নতা কাটার পরিবর্তে গলার কাছে একটা অস্বস্তি দলা পাকিয়ে ওঠে। এই বাড়িতে পারিবারিক চিকিৎসক হওয়ার সূত্রে যাতায়াত আছে সুস্মিতার। ছুটে বাথরুম সংলগ্ন বেসিনে বেশ কিছুটা টক জল উগ্রে দেন। ছোট ছেলে রামেশ্বরের স্ত্রী মিলি, বিশাখা দুজনেই ছুটে আসেন, চোখে মুখে জল দিন দিদি, অ্যাসিড করে গেছে মনে হয়...লিক করে ত্বকের নিচে জমতে থাকে। ফলে হাত ফুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু, তেমন কিছুই হয়নি।
তাছাড়া একদিন আগে করে দিয়ে যাওয়া চ্যানেল এত দ্রুত এক্সট্রা হওয়াটাও অস্বাভাবিক। তাছাড়া রাত মুত আর মিলি ফার্মাসিস্ট হওয়ার সুবাদে এই বিষয়গুলোর সাথে ওঁরা পরিচিত। সেটা সত্ত্বেও, চ্যানেল ব্লক হয়ে যাওয়াটা খেয়াল না করাটাও আমার অস্বাভাবিক লাগছিল। দ্বিতীয়ত, যে মানুষটা মুখে খাচ্ছে না, স্যালাইনের মাধ্যমে বেঁচে আছে, তাঁর চ্যানেল খারাপ হয়ে যাওয়া সত্ত্বে ইউরো ব্যাগে যথেষ্ট পরিমাণ প্রস্রাব জমে আছে, এটা অদ্ভুত লাগলো। দুটো জিনিস স্পষ্ট হচ্ছিল আমার কাছে, প্রথমত, আমি রোগীকে দেখতে আসার আগে, স্যালাইন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। যার ফলে স্যালাইনের ফ্লো বন্ধ থাকায় রক্তের ক্লট জমে, চ্যানেলের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কলিংবেল দেওয়ার সঙ্গেই চাকা ঘুরিয়ে চালু করে দেওয়া হয়েছিল স্যালাইন। কিন্তু, ওই সামান্য সময় হাত ফোলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। দ্বিতিয়তঃ প্রস্রাবের পরিমাণ। যার চ্যানেল এক্সট্রা তাঁর ইউরিনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে কিকরে? রায় পরিবারের প্রত্যেকেই মাথা নিচু করে বসে আছেন। তাঁরা হয়তো বুঝতে পারছেন, বিচক্ষণ এই ডাক্তার ম্যাডামের চোখকে ফাঁকি দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
সুস্মিতা বলতে থাকেন, আমি রোগীকে দেখার সময় তাঁর কফ, থুতু, তার রং, প্রস্রাবের রং এইগুলো খুঁটিয়ে দেখি। সেই উদ্দেশ্যেই বিছানার নিচে রাখা গামলাটায় উঁকি দিয়েছিলাম। দেখলাম, লাসিক্স ইঞ্জেকশানের ভাঙা অ্যামপুল। এই ইঞ্জেকশান কোন অবস্থাতেই আমার প্রেস্ক্রাইব করা নয়। কারণ এর প্রভাবে বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের রক্তের সোডিয়াম, প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। রোগীর শরীরে স্যালাইন না যাওয়া সত্ত্বেও ইউরিনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকার কারণ স্পষ্ট হয়ে এল আমার কাছে, ল্যাসিক্স ইউরিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে তাই। একদিকে স্যালাইন বন্ধ করে রাখা, অন্যদিকে সোডিয়াম বেরিয়ে যাচ্ছে, ফলে রোগী ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এই পরিবারের হাউজ ফিজিসিয়ান হওয়ায়, পুরো ঘটনাটা যে ইচ্ছাকৃত, সেটা তখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি। প্রেসক্রিপশান লিখে রেখে ওঁদের ডাকে গেছিলাম ডাইনিং-এ। সেখানে কফি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। কিছু সময় বিশ্রামের পর রায়বাবুর ঘরে গেলাম ব্রিফকেস নিতে। আমি অন প্রিন্সিপল, ডক্টরস ব্রিফকেস রোগীর বিছানায় রাখি না, কারণ ওটা আমি হাসপাতালে, চেম্বারে, বিভিন্ন রোগীর বাড়ি নিয়ে যাই। ফলে ব্রিফকেসের সঙ্গে সংবাহিত জীবাণু রোগীর সংস্পর্শে আসতে দিই না। ডাইনিং-এ উঠে যাওয়ার সময় কোলের থেকে ব্রিফকেসটা চেয়ারে নামিয়ে রেখে গেছিলাম। রায়বাবুর শরীরে বেডসোর আটকাতে অ্যাবজর্ব নামে একটা পাওডার দেওয়া হয়। সেই পাওডার ছড়িয়ে আছে বিছানায় রাবার ক্লথের উপরে। হয়তো আমার আসার আগে ইচ্ছে করেই একটু বেশি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, দেখানোর জন্য। ফলে শরীরে কম, চারপাশে ছড়িয়ে ছিল বেশি। রায়বাবুর রুমে ফিরে দেখি, পাওডারের একটা জায়গায় আয়তাকার দাগ রেখে পাওডার মুছে গেছে। দাগটা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে আমার ব্রিফকেসের মাপের। ব্রিফকেসের একদিকে সম্প্রদহমতোই হালকা পাওডারের গুঁড়ো লেগে আছে। কেউ সাময়িক আমার ব্রিফকেসটাকে চেয়ার থেকে নিয়ে বিছানায় রেখেছিলেন। তারপর আবার রেখে দিয়েছেন চেয়ারে। তখন অবশ্য শরীর এতটাই অবসন্ন ছিল, ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিইনি...
সুস্মিতা জল খায় কিছুটা। শ্রীপর্ণা তাঁর এই বাল্যবন্ধুটিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখে। ছোট থেকেই ও অনুসন্ধিৎসু টাইপের। স্কুলে নিয়মিত বন্ধুদের টিফিন চুরির রহস্য ফাঁস করা থেকে, বন্ধুর চুরি যাওয়া সাইকেল উদ্ধার, সবেতেই একসময় ছিল সুস্মিতার অবদান। ফলে এক ধরণের মানসিকতার দুই বন্ধুর মধ্যে জমত ভালো। এবারেও একটা অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং সুপরিকল্পিত অপরাধ নিখুঁতভাবে ধরে ফেলেছে ও। আবার বলতে শুরু করেন সুস্মিতা, "অবসন্ন শরীরে বাড়ি ফিরে চান করে খেয়ে শুয়ে পড়তাম। মনে খটকা থাকলেও এত বড় ষড়যন্ত্র কল্পনা করা বেশ কঠিন ছিল। তার উপর শরীর ভালো ছিল না। কিন্তু, নিয়তি কেন বষ্যতো সুষমা মাসিমা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কল পেয়ে গেলাম তাঁর বাড়ি। অনেকটা সময় চিকিৎসার পর মাসিমা যখন স্থিতিশীল, প্রেসক্রিপশান লিখতে বসেছি, শকড হলাম তখনই। ছোট থেকেই খাতার পৃষ্ঠায় একটু চাপ দিয়ে লেখা আমার স্বভাব। এখনও সেই অভ্যাস যায়নি। এইমাত্র রায়বাড়িতে প্রেসক্রিপশান করে এলাম। প্রত্যেকটা মেডিসিন, যা আমি লিখে এসেছি, আমার মনে আছে। কিন্তু, মাসিমাকে ওষুধ লিখতে গিয়ে দেখি প্যাডের পৃষ্ঠায় আগের পৃষ্ঠার লেখার কোন ইম্প্রেশান নেই। তাছাড়া এই প্যাডের উপরে আঠাটা একটু বেশি আছে, ফলে প্যাড থেকে পৃষ্ঠা আলাদা করার সময় তাড়াহুড়ো করলে, একদম শেষে এসে পাতা কিছুটা বাজে ভাবে ছিঁড়ছে, সামান্য একটু অংশ প্যাডের গায়ে থেকে যাচ্ছে। আমি ডানহাতি। ফলে পৃষ্ঠা বাঁদিক থেকে ডানদিকে ছিঁড়ি। ফলে তাড়াহুড়োর সময়, ডান ধারে সামান্য ছিন্ন অংশ লেগে থাকে, এটা ধীরেসুস্থে করলে হয় না। কিন্তু, এক্ষেত্রে রায়বাবুকে করা প্রেসক্রিপশানটার পরের খালি পৃষ্ঠা যে ছিঁড়েছে, সে ছিল বেশ তাড়ায়। ছিঁড়েছিল ডানদিক থেকে বাঁদিকে, ফলে বাম প্রান্তে কিছুটা উপরের বিচ্ছিন্ন অংশ লেগে আছে। বোঝাই যায়, যে ছিঁড়েছে, সে লেফটি। চোখ বন্ধ করে একটু ভাবতেই মনে পড়ল রামেশ্বর বাঁহাতি। আমাকে নিয়ে বিশাখা আর মিলি ব্যস্ত, ঠিক সেই অবকাশে রামেশ্বর আমার প্যাডেরপৃষ্ঠা ছিঁড়ে, তার নিচের দিকে আন্দাজে রবার স্ট্যাম্প মেরে নেন। তাড়াহুড়োয় ব্রিফকেস বিছানায় রেখে কাজ সেরেছিলেন। তখনই পাওডার লেগে যায় ওতে। আমি কিছুটা সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসেছিলাম। একটা ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে স্নায়ু অবশ হয়ে গেছিল সাময়িক। ফার্মাসিস্ট হওয়ার সুবাদে লাসিক্স ইঞ্জেকশানের সুফল এবং কুফল মিলি এবং রামেশ্বরের নখদর্পণে। কথাবার্তা বন্ধ, শয্যাশায়ী, স্মৃতি লোপ পেয়েছে অনেকটাই, রোগী এমন হলেও অবস্থা কিন্তু স্থিতিশীল ছিল। হঠাৎ করেই অবস্থার ক্রমশ অবনতির কারণ এই ল্যাসিক্স ইঞ্জেকশান। রক্তচাপ আর সোডিয়াম দুইই ওষুধের প্রভাবে কমতে থাকলো নিয়মিত। তবে খুব ধীরেসুস্থে এবং কম ডোজে এটা করছিলেন ওঁরা। অন্যান্য ওষুধপত্রও বন্ধ করে দেননি, যাতে মেডিসিন উইথড্রয়ালের কোন চিহ্ন আমার চোখে না পড়ে। স্যালাইন মাঝে মধ্যেই বন্ধ করে রাখছিলেন। আবার চালাচ্ছিলেন। মাঝে মধ্যেই স্যালাইন বন্ধ থাকায়, একদিকে চ্যানেল ব্লক হয়ে যায়, অন্যদিকে রোগী আরও খারাপ হতে থাকে। সেদিন বিকেল থেকে আর স্যালাইন চলেনি, আমি আসার আগে অবধি। ফলে চ্যানেল এক্সট্রা, সেটা ওঁরা জানতেও পারেননি। শেষবার ওঁরা পরিকল্পনা করেই আমায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল প্যাডের পৃষ্ঠা আর তাতে স্ট্যাম্প জোগাড় করা। পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে কয়েকদিন ধরে আমার বিভিন্ন প্রেসক্রিপশান থেকে হস্তাক্ষর অভ্যাস করেছেন। ডেথ সার্টিফিকেটের বয়ান লেখা মিলি আর রামেশ্বরের অজানা নয়। ওঁদের ভয় হয়েছিল, যেভাবেই জ্যাঠার মৃত্যুকে ওঁরা ত্বরান্বিত করুক, ডেথ ডিক্লেয়ার করার সময় যদি আমি কিছু সন্দেহ করি বা বেঁকে বসি, তাহলেই সমস্যা হবে। তাই চুপিচুপি রাতের অন্ধকারে বাড়ির থেকে অনেকটা দূরের শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করে দিতে চেয়েছিলেন। একবার দেহ পুড়ে গেলে আর কিছু করার থাকত না। আমার লিকার কফিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন ইপিকাক জাতীয় কিছু, যাতে আমার বমি শুরু হয়েছিল। ইচ্ছে করেই আমায় অনেকটা রাত্রে কল দিয়েছিলেন। যাতে অসুস্থ বোধ করে বাড়ি ফিরে আমি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, আর ওঁরা দাহকাজ মিটিয়ে খুনের প্রমাণ লোপাট করে দেন। কয়েকদিন পরে আমি রায়বাবুর শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে হয়তো বলে দিতেন, আমায় ফোন করে সেই রাত্রে পাননি, তাই অন্য কাউকে দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট লিখিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু, মাসিমা অসুস্থ হয়ে সবকিছু বরবাদ করে দিলেন। যদিও পোস্টমর্টেমে সবই ধরা পড়ে যাবে,
তবুও প্রাথমিক পরীক্ষায় আমার মনে হয়েছে, রায়বাবুকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে। চোখের সাদা অংশে লাল রক্তের ছোট ছোট বিন্দু বা পেটেচি, নাকের এবং প্রধানত ডান গালের চামড়ায় খুব হালকা কালশিটের মত দাগ, ডান গাল একটু বেশি ফোলা। আসলে, কোন বাঁহাতি মানুষ যদি শায়িত একজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে, একটা বালিশ মুখের উপরে চেপে ধরেন, তবে বাঁহাতের চাপটা মুখের ডানদিকে একটু বেশিই পড়বে। যার ফল ডান গালে চিহ্ন একটু বেশিই। বোঝাই যায়, কে বালিশ মুখে চেপে ধরেছিলেন...
বেশ করেছি। আমাদের বাবা একটু উড়নচণ্ডী স্বভাবের ছিলেন, তাই বলে দাদু সমস্ত সম্পত্তি জ্যাঠামশাইকে দিয়ে দিলেন! আর উইলে লিখে গেলেন একমাত্র তাঁর মৃত্যুতেই তাঁর ভাইপোরা সম্পত্তির ভাগীদার হবে। বাবা মা তো গাড়ি দুর্ঘটনায় চলে গেলেন, আর আমাদের রেখে গেলেন জ্যাঠামশাইয়ের দাক্ষিণ্যে। যতদিন তিনি সুস্থ ছিলেন, একটা টাকাও তাঁর অনুমতি ছাড়া তোলা যেত না। মাসোয়ারার বন্দোবস্তে এখনও চলছে আমাদের। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর, এখন ব্যবসায় চলছে চরম মন্দা। টিপছাপ দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা গেলেও, সেখানেও সিলিংবেঁধে রেখেছেন। এভাবে পথে বসতে হচ্ছিল আমাদের...। ওঁকে মেরে ফেলা ছাড়া আর কোন রাস্তা ছিল না... রামেশ্বর তীব্র ক্রোধে আস্ফালন করে ওঠে, বাইরে তখন কোন মৃতদেহ ঘিরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে...