25th Jan 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

পূণ্যার্থীদের আবাহনে গঙ্গাসাগরসঙ্গম

9th Jan 2025

প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি


পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রমে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত একটি মেলা ও ধর্মীয় উৎসব গঙ্গা সাগর মেলা ও স্নান। হুগলি নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থানকে বলা হয় গঙ্গাসাগর। এটি একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলা ভূমি। এই দুয়ের মেলবন্ধনে আবদ্ধ গঙ্গাসাগর মেলা। সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে এসে পতিত হয়েছে। এই সাগর দ্বীপ হল বঙ্গোপসাগরের মহাদেশীয় সোপানে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা কলকাতা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গঙ্গা নদীর মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর।এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। তাই প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন; তবে উত্তর ভারত থেকে আগত পুণ্যার্থীদের ভীড়ই হয় সর্বাধিক। মেলাটি এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পরিচালিত হয়, তবে মকর সংক্রান্তির (পৌষ সংক্রান্তি) দিনটি একক দিন হিসাবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থীদের আকর্ষণ করে। গঙ্গাসাগর মেলায় ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পুণ্যার্থীদের সমাগম ঘটেছিল, যা ছিল প্রায় ১ কোটি।

কিংবদন্তি আছে, গঙ্গাসাগরে সাংখ্য দর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সাগর রাজার পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন।

হিন্দু মতে জন্ম ও মৃত্যুর যে অনন্তচক্র তার থেকে মুক্তিই হল মোক্ষ। হিন্দুদের বিশ্বাস, মকরসংক্রান্তির মহালগ্নে সাগরসংগমে পবিত্র জলে স্নান করলে মানুষের মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। সেই কারণে সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাসাগরের উপস্থিত হন। ঐতিহ্যগতভাবে, মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তিতে – স্নানের জন্য সবচেয়ে লালিত দিন – হিন্দু তীর্থযাত্রীরা নির্ধারিত স্নানযোগ বা স্নানের সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। উক্ত দিন, হিন্দু ভক্তরা খুব ভোরে গঙ্গাসাগরসংগমে উপস্থিত হন এবং গঙ্গা ও সাগরের সঙ্গমে (মোহনা) নদীতে পবিত্র স্নান সম্পন্ন করেন। তীর্থযাত্রীদের স্নানের আচার-বিধিতে পুরোহিতগণ সাহায্য করেন, অনেক ক্ষেত্রে তীর্থযাত্রীরা সাধারণ ডুব যা ব্যক্তিগত ভাবে স্নান সম্পন্ন করেন। এই নদীর ধারের আচার-অনুষ্ঠানের পরে, তীর্থযাত্রী জলে ডুব দেয়, কিছুক্ষণ প্রার্থনা করেন। তারা সূর্য দেবকে নৈবেদ্য প্রদান করেন এবং ভগবান সূর্য দেবের উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করেন।

গঙ্গাসাগর তীর্থক্ষেত্রের প্রধান কেন্দ্রই হল কপিল মুনির মন্দির। স্নানের আচার-অনুষ্ঠান শেষ করার পর, পুণ্যার্থীরা কপিল মুনির পূজা করেন এবং কেউ কেউ গঙ্গা স্নানের দিনে যজ্ঞ ও হোমও করেন। এমনকি কিছু ভক্ত গঙ্গা স্নানের দিনগুলিতে কঠোর উপবাস পালন করেন। সন্ধ্যায় সাগরপাড়ে পণ্ডিতদের মন্ত্রপাঠের সহিত পুণ্যার্থীদের দ্বারা দেশী ঘি দিয়ে একটি প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয় ও গঙ্গাসাগরসঙ্গমে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। গঙ্গা স্নানের এই শুভ দিনে, ভক্তরা দেবী গঙ্গার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং জ্ঞাতসারে বা অজান্তে তাদের অপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

ইতিমধ্যেই আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রম। মেলার একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। সাধসন্তরা ভিড় জমাতে শুরু করে দিয়েছেন। আগামী পৌষ সংক্রান্তিতেই গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করবেন ভক্তরা। বলা হয়, গঙ্গাসাগরে পূণ্যস্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়।

Archive

Most Popular