17th Jan 2025
স্বাস্থ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না, যে আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যকৃৎ বা লিভার। পরিপাক ক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে এই অঙ্গ। শরীরের সব বর্জ্যপদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখাই যকৃৎ বা লিভারের কাজ। কিন্তু যদি লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়, তাহলে বাড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি। এখন কী করে বুঝবেন আপনার যকৃত ঠিক মতো কাজ করছে কিনা বা কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা? উপায় আছে। কিছু লক্ষণ আপনার শরীরেই ফুটে উঠবে যা দেখে আপনি বুঝে নিতে পারবেন আপনার যকৃৎ বা লিভার অসুস্থ কিনা!
১) যদি হঠাৎ করেই খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা তৈরি হয়, যদি দেখেন খাবার খেতে ইচ্ছেই করছে না, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। কারণ, এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।
২) পাঁজরের একটু নীচে, পেটের ডান দিকে ব্যথা হলে সাবধান। এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না।
৩) কিছু খেলেই বমি পাচ্ছে? সারাক্ষণ বমি বমি ভাব? এটি যকৃৎ বা লিভারের সমস্যার কারণে হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়েছে কিনা, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করিয়ে দেখুন।
৪) মল ও মূত্রের রং যদি হঠাৎ করে পাল্টাতে থাকে, তাহলে এখনই সাবধান হওয়া উচিত। আপনার যকৃতে কোনও সমস্যা হচ্ছে। হজমেরও সমস্যা হচ্ছে। অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।
৫) যদি আচমকা আপনার চোখের সাদা অংশের রং, গায়ের চামড়া হলুদ হতে শুরু করেছে, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। কারণ, এটি জন্ডিসের লক্ষণ। অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।
৬) হঠাৎ করেই যদি আপনার গায়ের চামড়া কোনও জায়গায় খুব শুষ্ক হয়ে যায়, খোসা খোসা উঠতে থাকে, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৭) যদি আপনার পেটের নিচের অংশ অস্বাভাবিক রকম ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিন একই অবস্থা থাকে তাহলে সাবধান। এটি যকৃতে জল জমার লক্ষণ হতে পারে। একে লিভার সিরোসিস বলা হয়। লিভার বা যকৃৎ হল একটি আবশ্যিক প্রত্যঙ্গ, যা পাচকনালী থেকে আসা রক্তকে পরিদ্রুত করে পুরো শরীরে ছড়িয়ে দেয়। পেশি গড়ে তুলতে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ও রক্তকে জমাট বাঁধতে না-দেওযার জন্য প্রয়োজনীয় কেমিক্যালকে বিষমুক্ত বা ডিটক্সিফাই করা, ওষুধপত্রকে বিপাক বা মেটাবলাইজ করা এবং প্রোটিনকে সংশ্লেষিত বা সিন্থেসাইজ করার কাজ করে লিভার।
ঘুমের হরমোন
আমাদের দেহে কর্টিসল এবং মেলাটোনিন এই দুই হরমোন ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে ঘুমানোর পরপরই শরীরে বেরয় মেলাটোনিন। এই হরমোন আমাদের শান্তি দেয়। অপরদিকে কর্টিসল হল স্ট্রেস হরমোন। এই হরমোন আমাদের ঘুম থেকে ওঠার পর সারাদিনের জন্য তৈরি করে। আর সবথেকে বড় কথা হল এই দুই হরমোনই লিভারদ্বারা অনেকটাই পরিচালিত হয়।
ঘুমের সমস্যা হয় কীভাবে?
প্রথমেই আমাদের জেনে নিতে হবে ব্যক্তি কি আগে থেকেই উৎকণ্ঠা বা স্ট্রেসের মতো সমস্যায় ভুগছেন?
উত্তর হ্যাঁ হলে তাঁর শরীরে ইতিমধ্যেই বেড়ে রয়েছে কর্টিসল হরমোন। এবার এই হরমোন শরীরে বেড়ে থাকলে লিভারকে এই হরমোন নিষ্ক্রিয় করার জন্য বেশি করে খাটতে হয়। এই কারণে গোটা দিনই লিভার বেশ। খাটাখাটনি করে চলে। এভাবে খাটাখাটনি করার কারণে লিভার কর্টিসল এবং মেলাটোনিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার ফলে দেখা দেয় ঘুমের সমস্যা।
গবেষণা বলছে, সারাদিন যাঁরা ক্লান্ত থাকেন তাঁদের রাতের বেলায় উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কোনও রোগীর যদি প্রায়ই রাত ১টা থেকে ৩ টের মধ্যে ঘুম ভেঙে যায় তবে বুঝতে হবে তাঁর লিভারেই সমস্যা আছে। এই গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে। এই গবেষকদল সিরোসিস রোগী এবং ঘুমের সমস্যা নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা করেন।
এক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার থেকে ঘুমের এই সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে
১. ঘুম চলে যাওয়া।
২. ঘুমাতে না পারা।
৩. সকালে ঘুম পাওয়া।
৪. ঘুমের চক্র বদলে যাওয়া।
কী করবেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কোনও সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে একটি আলট্রাসাউন্ড টেস্টই বলে দেবে আপনার এই সমস্যা রয়েছে কিনা।
এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে
১. খেতে হবে শাক, সবজি
২. খাওয়ার তালিকায় যোগ করুন ফল
৩. পান করুন গ্রিন টি
৪. সারাদিনে অন্তত পক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামের মাধ্যমেই অনেক সমস্যার হবে সমাধান।
৫. আর সমস্যা বেশি মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনিই আপনাকে সমস্যা মুক্তির রাস্তা দেখাবেন।