8th Feb 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

জেনারেল পন্ডিত হিন্দু স্টুয়ার্ট!

19th Jan 2025

প্রতিবেদন

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত


খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের শেষে এবং উনবিংশ শতকের গোড়ায় কলকাতা শহরে একটি বিচিত্র দৃশ্য প্রায়ই দেখা যেত। ধুতি পরে, গায়ে চাদর জড়িয়ে, পায়ে খড়ম পরিহিত কিংবা নগ্নপদ এক সুপুরুষ, ভৃত্য-পরিচারক পরিবৃত হয়ে চলেছেন গঙ্গায় স্নান করতে, কিংবা জান সেরে বাড়ি ফিরছেন। এ পর্যন্ত অবশ্য দৃশ্যটিতে বৈশিষ্ট বিন্দুমাত্র নেই। কারণ এহেন দৃশ্য এ যুগেও দুষ্প্রাপ্য নয়। দৃশ্যটিতে বৈচিত্র যোগ হয় তখনই যখন দেখা যায় পুরুষটি বাঙালি তো নয়ই, এমনকি ভারতীয় ও নন, তিনি খাঁটি সাহেব। এবং যেমন-তেমন সাহেব নন, যোদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যোগ বাহিনীর জবরদস্ত অফিসার।

সাহেবের নাম চার্লস স্টুয়ার্ট। আইরিশ ম্যান। জন্ম আনুমানিক ১৭৫৮ সালে। লোকে বলে আয়ারল্যান্ডের লিমোরিক শহরের মেয়র টমাস স্নাইথ নাকি চার্লস স্টুয়ার্টের জন্মদাতা পিতা। চার্লসের বয়স যখন কুড়ির আশেপাশে, সৈনিকের চাকরি নিয়ে ভারতবর্ষে এসে পড়েন। সাধারণ কাজের হিসেবেই এদেশে আসার পর কাজে দক্ষতা দেখিয়ে যেমন ক্রমশঃ উন্নতি করছিলেন, তেমন পড়াশোনা শুরু করেন ধর্ম সম্পর্কে। এদেশের বিভিন্ন প্রচলিত ভাষা এবং সংস্কৃতিও শিখে নেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে। হিন্দুত্ব প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিল স্টুয়ার্ট সাহেবকে। তাই বছর খানেক এদেশে থাকার পর নিজে স্থানীয় হিন্দুদের প্রথামাফিক জীবনযাপন শুরু করে দিলেন।

সেনাবাহিনিতে মেজর জেনারেলের পদে পৌঁছে যাওয়ার পর চার্লস স্টুয়ার্টকে মধ্যপ্রদেশে সগর সেনা ছাউনির সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন উইলিয়ম লিনিয়াস গার্ডনার। গার্ডনার এদেশে এসে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সেইসময় শহরের ক্যান্টনমেন্ট ছিল মধ্যভারতের সবচেয়ে বড়ো ছাউনি। নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির হাতে ছাউনির সর্বোচ্চ দায়িত্ব এবং একজন মুসলমানের কাঁধে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দায়িত্ব থাকা সে-যুগে ছিল এক বিষম আশ্চর্যের বিষয়।

উইলিয়াম গার্ডনারের লেখা বিভিন্ন বিবরণ এবং চিঠি থেকে জানা যায়, স্টুয়ার্ট নিয়মিত পূজাপাঠ করতেন ন্যায়নিষ্ঠ হিন্দুদের মতো। খাদ্যাভাস ছিল ব্রাহ্মণদের উপযুক্ত। মনে করতেন গরুর মাংসের দিকে তাকানোও মহাপাপ। স্টুয়ার্টকে জেনারেল পন্ডিত বা পন্ডিত স্টুয়ার্ট নামে সম্বোধন করতেন মেজর গার্ডনার। একবার স্টুয়ার্ট তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সগর-এর চাকলা ঘাটে গিয়েছিলেন। সেখানে, মহিলাদের স্নানের ঘাটে মেজর জেনারেল একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। গার্ডনারের লেখা থেকে জানা যায়, একবার তাঁর হাতে ছাউনির দায়িত্ব দিয়ে সাত দিনের ছুটি নিয়ে কুঞ্জমেলায় গিয়ে ছিলেন স্টুয়ার্ট। গার্ডনারের বন্ধু একবার স্টুয়ার্টকে দেখেছিল একটি মেলায় কয়েকজন নায়ক সন্ন্যাসীর সঙ্গে বসে ধর্মালোচনা করতে। স্টুয়ার্ট এর পুজোপাঠে নিষ্ঠা এমনই ছিল যে, একবার ছুটিতে ইওরোপে যাওয়ার সময়ে তিনি যতগুলি দেবতার মূর্তির নিত্য পূজা করতেন, যেগুলি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

সামরিক দায়িত্ব বা কুচকাওয়াজের মাঠে না থাকলে প্রায় সবসময়ে দেশী পোশাক পরতেন স্টুয়ার্ট সাহেব। সাধারণ ধুতি, উরনি বা পিরান। বিভিন্ন লেখায় তিনি অভিমত ব্যক্ত করতেন যে, এদেশের আবহাওয়ায় এমন পোশাকই হল উপযুক্ত এবং আরামদায়ক পোশাক এদেশে আসা ইওরোপিয়দের ধুতি, চাদর বা পিরান ব্যবহারে উৎসাহ দিতেন বরাবর এদেশীয় মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে উৎসাহিত করার চেষ্টা করতেন ইওরোপিয় মহিলাদের। তাঁদের মধ্যে শাড়ি পরার প্রচলন করতে স্বনামে এবং বেনামে বহু লেখালেখি করেছেন। এদেশের মহিলারা, বিশেষত হিন্দু নারীরা সম্পূর্ণভাবে পোশাকাবৃত অবস্থায় নদী বা জলাশায় নেমে অবগাহন স্নানের পর ভেজা কাপড়ে জল থেকে উঠে এলে, তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে স্তন, জাঙ্খা, নিতম্ব যেভাবে পরিস্ফুট মনে হয়, তার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ইওরোপিয় স্ত্রীলোকদের পোশাক যেমন স্কার্ট ইত্যাদি শরীরকে ফুটিয়ে তোলার অন্য সাজসজ্জার থেকে ভারতীয় শাড়ি কিছু কম যায় না। চার্লস স্টুয়ার্টের এই বিশেষ রচনাটি লেখকের নাম না দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল আ লেডিস মনিট শীর্ষক প্রবন্ধমালা হিসেবে। এছাড়াও কলকাতা থেকে প্রকাশিত টেলিগ্রাফ পত্রিকায় একাধিক লেখায় চার্লস স্টুয়ার্ট এদেশে আশা ইওরোপিয় মহিলাদের শাড়ি পরতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

খ্রিষ্টান মিশনারিরা যে এদেশীয় হিন্দু বা মুসলমানদের ধর্মান্তর করার প্রচেষ্টা অবিরতভাবে চালিয়ে যেতেন, তার বিরুদ্ধেও খোলাখুলি মত ব্যক্ত করেছিলেন স্টুয়ার্ট। মিশনারিদের এহেন উদ্যোগের নিন্দা করে, তিনি বলেন, হিন্দুধর্ম, যথেষ্ট উন্নত ধর্ম, এবং এর ভিত্তি যথেষ্ট গভীর। হিন্দু পুরাণে বর্ণিত বিভিন্ন কাহিনীকে মিশনারিরা যে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাইতেন, সেই প্রসঙ্গে স্টুয়ার্ট লিখেছিলেন হিন্দুদের পুরাণে প্রতিটি কাহিনীতে রূপক বা অ্যালিগরির আড়ালে ভক্তি লুকিয়ে আছে। আর প্রতিটি কাহিনীর মূল ভাব হল ন্যায়পরায়ণতা।

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ সম্পর্কে চার্লস স্টুয়ার্ট তাঁর ভিনডিকশন অব দা হিন্দুজা পুস্তিকায় লিখেছিলেন, ইংরেজদের অরণ্যচারী বর্বর পূর্বপুরষদের যখন ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না, বেদ রচিত হয়েছে সেই সময়ে। তখনই হিন্দুরা জানতেন আত্মা অমর। ইওরোপিয়দের এ সম্পর্কে তখন কোনও বোধ ছিল না। আ ভিনডিকশন অব দ্য হিন্দুজ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮০৯ কিংবা তার পরের বছর। তার বহু বছর আগেই ভারতবর্ষের ইওরোপিয় মহলে চার্লস স্টুয়ার্টের নাম পরিণত হয়ে গিয়েছিল হিন্দু স্টুয়ার্ট-৩০ বৃটিশ সেনাবাহিনির অনুশাসনে সৈনিকদের, ইচ্ছেমতো দাড়ি। গোঁফ রাখা, ধর্মীয় চিহ্ন শরীরে গ্রহণ করা, প্রভৃতিতে অনেকরকম নিষেদ ছিল। মেজর জেনারেল স্টুয়ার্ট কিন্তু তাঁর অধীনস্ত ফৌজের সৈনাদের দাড়ি বা গোঁফ এমনকি গালপাট্টা রাখতে প্রশ্রয় দিতেন। তাছাড়া তাদের কপালে সিঁদুর বা চন্দনের তিলক, ফোঁটা বা প্রলেপ লাগানোতেও আপছি ছিল না তাঁর। তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধে সৈনাদের নিজ নিজ ধর্ম আচরণের সমর্থন এবং তাদের ধর্মান্তরণের বিপক্ষে বহুবার মত প্রকাশ করেছেন। স্টুয়ার্টের বক্তব্য ছিল, সৈনিকদের ধর্ম যদি আমরা জবরদস্তি করে পরিবর্তন করতে বাধ্য করি, তাহলে কখনই তাদের থেকে বিশ্বস্ততা আশা করতে পারি না। তিনি যতদিন সেনাবাহিনিতে ছিলেন ততদিন নিজের মতের সমর্থনে প্রচার চালিয়েছেন। যদিও যেভাবে সফল হননি এই বিষয়ে কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে স্টুয়ার্টের মৃত্যুর প্রায় ত্রিশ বছর পর যে মহাবিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, স্টুয়ার্টের মত মেনে নিলে সেই বিদ্রোহের অন্তত একটি কারণ এড়ানো সম্ভব হত। হিন্দু স্টুয়ার্টের কাজ কারবারে খ্রিষ্টান মিশনারিরূপে তো বটেই, যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হতেন অন্যান্য ইওরোপিয় মানুষজন এমনকি সেনাবাহিনিতে তাঁর সহকর্মীরাও। এক ব্রিটিশ অফিসার লিখেছিলেন, একজন ব্রিটিশ অফিসার যিনি হিন্দুদের রীতিনীতি মেনে চলেন, মন্দিরে গিয়ে পুজো করেন, হিন্দু দেবতার মূর্তি সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ান, ফকিরদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন, তিনি যে পাগল হিসেবে গণ্য হন। না সেটাই আশ্চর্যের ঘটনা মনে হয়। এমন লোককে যদি পাগলাগারদে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। ভারতবর্ষে বেড়াতে এসে ইংরেজ মহিলা এলিজাবেথ ফেনটন তাঁর দিনলিপিতে লেখেন, খ্রিষ্টান দুনিয়ায় শিক্ষিত এক ইংরেজ এদেশে এসে হিন্দু ধর্ম, অবশ্য একে যদি ধর্ম বলা যায়, তাই অনুসরণ করতে শুরু করেছেন। লোকে এখনও মনে করেন সেই জেনারেল এস সুহ মস্তিস্কের মানুষ। এই পরিস্থিতি দেখে মিসেস ফেন্টন যারপরনাই আতঙ্কিত বোধ করেছিলেন।

কিন্তু খ্রিষ্টান স্টুয়ার্টকে যতই ধর্মদ্রোহী মনে করুন বা সাধারণ ইওরোপিয়রা ভেবে থাকুন পাগল, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তারা কিন্তু চার্লস স্টুয়াটের উপর আস্থা হারাননি। এদেশে কোম্পানির সবচেয়ে বড়ো বাহিনীর দায়িত্ব ছিল স্টুয়ার্টের উপর। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, ঘোড়ায় টানা বর্গিগাড়িতে পাশে ভারতীয় বিবিকে নিয়ে সালাস স্টুয়ার্ট বেরোতেন প্রায় শোভাযাত্রার মতো। সাহেবের গাড়ির পিছনে চলতো তাঁর কিশোর সন্তানদের কোড, আর তারও পিছনে পালকি তে নিয়ে যাওয়া হত শিশুসন্তানদের। হিন্দু স্টুয়ার্টদের বাড়িতে রাখা দেবদেবীর মূর্তিগুলির নিয়মিত পুজা করতেন পুরুতমশাই এসে। তাছাড়া নিষ্ঠাব্রত জীবন যাপনের প্রয়োজনে ব্রাহ্মণ পাচক রাখা হয়েছিল স্টুয়ার্টের বাড়িতে।

চার্লস স্টুয়ার্টের আর এক বাতিক বা নেশা ছিল হিন্দুদের এবং বৌদ্ধদের যত প্রাচীন মূর্তি বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসা। এভাবে নিজের কলকাতার বাড়িকে প্রায় একটি ছোটখাটো সংগ্রহশালায় পরিণত করে তুলেছিলেন স্টুয়ার্ট। সংগ্রাহকদের সংগ্রহের জেদ সে বড়ো সাংঘাতিক, সেকথা অনেকেই জানেন স্টুয়ার্ট-ও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। প্রয়োজনে নানাবিধ ছল, বল ও কৌশল তিনি প্রয়োগ। করতেন বিভিন্ন মূর্তি হস্তাগত করতে। হিন্দু স্টুয়ার্টের এই রকম কাজের ফলে ওড়িশায় একবার ভুগতে হয়েছিল। মার্কহ্যাম কিটোকে। ছিলেন কোল কমিটির প্রতিনিধি। তাঁর কাজ ছিল কয়লা বা অন্য খনির সন্ধানে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনুসন্ধান করা। তবে কিট্রো খনির সন্ধান যত না করতেন, তার চাইতে বেশি সময় ব্যয় করতেন জেমস প্রিন্সেপের নির্দেশ প্রত্নবস্তু এবং প্রত্নক্ষেত্রের সন্ধানে। একবার ভুবনেশ্বর শহরের বাইরে উদয়গিরি পাহাড়ের কাছে স্থানীয় মানুষদের কাছে তাঁকে বেশ অপদস্থ হতে হয়েছিল। কারণ, কয়েকদিন আগেই নাকি একজন সাহেব এসে তাঁদের ভুল বুঝিয়ে দুখানা প্রাচীন মূর্তি গায়েব করে দিয়েছেন। এই খবর কিট্রো এশিয়াটিক সোসাইটিকে জানালে তাঁরা খোঁজ করে বার করেন যে এই কাজ হিন্দু স্টুয়াটের। তাঁর কাছ থেকে মূর্তিগুলি ফেরত নেওয়া হয় সোসাইটির তরফে। তারপর কিট্রো তা যথাস্থানে ফেরৎ দিয়ে আসেন। এরপর অবশ্য গ্রামের ওড়িয়ারা কিট্রোকে এমন কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন, যার ফলে সম্রাট অশোকের ধৌলি শিলালিপিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

চার্লস হিন্দু স্টুয়ার্ট সেনাবাহিনি থেকে অবসর নিয়েছিলেন ১৮২০ দশকের গোড়ায়। তারপর স্থিত হয়েছিলেন শহর কলকাতায়। একজন হিন্দুর মতোই ছিল তাঁর জীবনযাত্রা। নিজের পরিচয় বরাবর দিয়ে এসেছেন একজন ধর্মান্তরিত হিন্দু হিসেবে। অনেকের ধারণা, স্টুয়ার্টে হয়তো জানতেন না যে ধর্ম বদলে হিন্দু হওয়া যায় না। হিন্দু হওয়া যায় একমাত্র জন্মসূত্রে। ১৮২৮ এর একত্রিশে মার্চ স্টুয়ার্টের দেহাবসান ঘটে। তাঁর কদিন পরে এশিয়াটিক জার্নাল এ প্রকাশিত শোক সংবাদে লেখা হয়েছিল, এদেশের মানুষের ধর্মাচরণ, প্রথা, রীতিনীতি এবং ভাষা প্রস্তুতি বিষয়ে জেনারেল স্টুয়ার্টের পড়াশোনা এবং দেশীয় মানুষদের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ মেলামেশা আর এদেশের ধর্মকে মেনে নেওয়া, তাঁকে পরিচিত করেছিল হিন্দু স্টুয়ার্ট নামে। স্টুয়ার্ট সাহেবের রেখে যাওয়া পার্থিব জিনিসপত্রের মধ্যে গুঁড়তোলা নাগরা জুতো, মুখল পানপাত্র, চামর পিকদান, এঁকো ইত্যাদি যেমন পাওয়া গিয়েছিল, তেমন ছিল ক্যাম্প টেবিল, মানচিত্র, বিলিয়ার্ড খেলার কিউ, টোস্ট রযাক, টংস, ইত্যাদি।

গার্ডনারের জেনারেল পণ্ডিত যতই হিন্দুদের আচরণ অম্লাস করে থাকুন, সাউথ পার্ক স্ট্রিটের গোরস্থানে তাঁর মরদেহ সমাহিত করার ব্যাপারে কোনও মহল থেকে আপত্তি ওঠেনি। তাঁর শেষ ইচ্ছানুসারে তাঁর সংগৃহিত কয়েকটি মূর্তি কফিনের ভেতরে রেখে সমাহিত করা হয় তাঁরই সঙ্গে। অন্যগুলি বিক্রি হয়ে যায়। যেগুলির অধিকাংশ পরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সংগ্রহে পৌঁছয় ব্রিজ কালেকশন নামে। নামটি পরবর্তী ক্রেতাদের কারও। তবে এই কালেকশনের প্রতিটি মূর্তি যে হিন্দু স্টুয়ার্টের সংগ্রহের, যে কথা সর্বজন বিদিত। পার্ক স্ট্রিটের সেমেট্রিতে সম্পূর্ণ খ্রিষ্টান নিয়মে চার্লস হিন্দু স্টুয়ার্ট-কে সমাহিত করা হয় যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে। যে মর্যাদা এবং সম্মান এক প্রাক্তন জেনারেলের প্রাপ্য, তাই পেয়েছিলেন স্টুয়ার্ট। তবে তাঁর কবরের উপরে স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছিল কতকটা হিন্দু মন্দিরের আদলে। হয়তো হিন্দুধর্মের প্রতি জেনারেলের আজীবনের শ্রদ্ধা এবং তাঁর চালস হিন্দু স্টুয়ার্ট নামটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদর্শন করতে।

Archive

Most Popular

ভ্যালেন্টাইন উইক স্পেশাল ফ্যাশন স্টাইলিং

8th Feb 2025

প্রতিবেদন

অন্তরা ব্যানার্জি

Read More