25th Jun 2024
প্রতিবেদন
অনিরূদ্ধ দাস
গৃহসজ্জায় হাতের কাজ। শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজিয়ে তুলুন নিজেকেও...
লিখেছেন অনিরুদ্ধ দাস।
আজকাল রোজকার জীবনযাপনে সাধারণ মানুষ শিল্পের সমাদর করছেন যথেষ্টই। এই নান্দনিক বিকাশ মানব মনকে যেমন আনন্দ দান করে, তেমনি তার স্পর্শে পাশের মানুষটির চিন্তনেও আলো আসে। বড়োই ছোঁয়াচে এর হাতছানি।
নবরূপে পুরাতন:
বহু মানুষ আছেন যাঁরা নতুন ঘর তৈরী করতে গিয়ে অনেক পুরানো জিনিস ফেলে দেন। আবার চাইলে সেই জিনিসগুলো কেই নবরূপ দান করে অন্দর সজ্জাকে অন্য মাত্রা দিতে পারেন। যেমন ধরা যাক, কেটলি, পুরোনো টেলিফোন, বটি, হাতপাখা, খালি কাচের বোতল, টিনের বাক্স ইত্যাদি। এগুলো একটু মনমতো রঙের ছোঁয়ায় বা টুকিটাকি কাপড়, পাটের দড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে ঘরের দেওয়াল, টেবিল বা বারান্দায় রাখলে খুব সুন্দর লাগবে। সাথে বাড়িতে অতিথি এলে তাঁরাও যে চমৎকৃত হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পেঁচা:
বাঙালী গৃহসজ্জায় পেঁচার আবেদন চিরকালীন। সাথে বিভিন্ন মাপের সিঁদুরকৌটো অন্য মাত্রা দান করে। ঘরের এক কোণে ছোট টেবিল বা সিঁড়িতে ওঠার কোনে একধারে রাখা যেতে পারে, পেতলের থালায় ধান দুর্বা দিয়ে সাজিয়ে। ঠাকুরের সিংহাসন তো পেঁচা রাখার জন্য আদর্শ স্থান।
কুলো:
হালকা হলুদ বা সাদা রঙের দেওয়ালে কুলো বা হাতপাখা গোটা ঘরকে অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে পারে। নেমপ্লেট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন রকমারি হাতের কাজের কুলো।
মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে:
বিবাহানুষ্ঠানের জন্য হাতে আঁকা কুলো, সিঁদুর কৌটো, পাল্কী বা হাত আয়না এগুলো আজকাল অনেকেই খোঁজ করেন। অনুষ্ঠানের পর ঘরে সাজিয়ে রাখলে তা যেমন স্মৃতিময়তাকে বহন করে, তেমনি ঘরের সৌন্দর্যায়ন করে।
আয়না:
আয়না হল গৃহসাজের অন্যতম উপাদান। দেওয়ালে আয়না থাকলে তা ঘরের প্রতিচ্ছবি যেমন তুলে ধরে, একইসাথে ঘরখানি বড় দেখায়। ফেংশুই মতে খাবার ঘরের দেওয়ালে আয়না রাখা খুবই শুভ। সেক্ষেত্রে হাতের কাজে সজ্জিত আয়না আপনারা ব্যবহার করতেই পারেন।
ঘড়ি:
প্রতিটি ঘরে সময় দেখার জন্য ঘড়ি তো অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বটেই। তা যদি দেখতে হয় অভিনব তাহলে তো কথাই নেই। এছাড়াও চাবিরাখার জন্য চাবিদান, দূরভাষ বা টিভি রিমোট রাখার জায়গা, কলমদানী সবই সুষমাময় হলে তা রুচিশীল ঘরের পরিচয় বহন করে।
কাঠের নামফলক:
গৃহে প্রবেশপথের সম্মুখে নামফলক সংযুক্ত থাকলে, তা যথেষ্ট আভিজাত্যের স্বাক্ষর বহন করে। আর আগেকার পিতলের একঘেঁয়ে নামফলকের জায়গায়, সম্পূর্ণ হাতে গড়া নামফলক ভীষণভাবেই আবেদনময়।
প্রিয়জনদের টুকটাক উপহার হিসেবে কি দিতে পারেন, যা আলাদা করে মনে করাবে আপনার কথা?
বাংলা সাহিত্যের চরিত্রগুলির আধুনিক রূপ, সহজপাঠের চিত্র বা কোনো কমিক্স চরিত্রের চুম্বক, আলমারীর গায়ে বা ফ্রিজের দরজায় সাজিয়ে রাখা যেতে পারে। কারনে অকারনে এসব উপহার পেলে যে কেউ খুশি হবেনই।
নিজেকে সাজাতে:
অন্দরমহলের সজ্জার পাশাপাশি নিজেকে গতানুগতিক সজ্জার বাইরে গিয়ে দেখতে কে না চায়! কখনো পারিপার্শ্বিক চাপে তা হয়ত করা হয়ে ওঠেনা। কিন্তু মনের আয়নায় আমরা নিজেদেরকে সাজিয়ে নিই ঠিকই। কাঠ, বাঁশ, প্লাইউড, কাপড় এসব দিয়ে গাঁথা মালার প্রতিকণায় থাকে নানা গল্পের বুনন। এতে যেমন পোশাকের সাথে সাজুয্য থাকে, তেমনি শিল্পীর কলাকুশলতা প্রকাশের পাশাপাশি যিনি পরিধান করছেন তাঁর ব্যক্তিত্ব, রুচিশীলতা, এমনকী কোনো অনুষ্ঠানের জন্য পরা হলে তার মাত্রাখানিও বাঙ্ময় হয়ে ওঠে সুন্দরভাবে।
বাড়ির প্রতিটা কোন থেকে নিজেকে সুন্দর করে সাজানোর মূল মন্ত্রই হল শিল্পীসুলভ মনন। প্রতি মানুষের মধ্যেই রূপকার লুকিয়ে থাকেন। অনুকূল পরিবেশে যিনি মনের ঘেরাটোপের বাইরে চলে আসেন।
চিরপরিচিত সেই পংক্তিখানি মনে পড়ে,
"তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা ও মন জানো না..."
এই সুর ধ্বনিময় হয় অন্তরে, সকলেরই।