26th Jun 2024
সাহিত্য
অভিজিৎ রায়
"ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?" প্রৌঢ় তাঁর মর্মভেদী দৃষ্টি প্রিয়নাথের মুখের উপর স্থির রেখে জিজ্ঞেস করলেন। ইতিমধ্যেই তাঁর শুভ্র স্থূল গোঁফের নীচে লুক্কায়িত ঠোঁটে একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠেছে। প্রিয়নাথ সেটা লক্ষ করে বেশ অস্বস্তি অনুভব করল। দু'দিন হল প্রিয়নাথ এসেছে উত্তরবঙ্গের স্বল্প পরিচিত এই রংলি রাঙলিয়েট জেলায়। দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা তাঁর সহকর্মী শুধাংশু রায়ের কাছে সে প্রথম জানতে পারে। এবং তারপর থেকেই এই স্থান দর্শনের পিপাসাটা তীব্র হয়ে ওঠে ওর মধ্যে। কোনওরকমে দিন চারেকের ছুটি জোগাড় করে সোজা এখানে এসে হাজির হয়েছে প্রিয়নাথ। তার বর্তমান ঠিকানা তাকদা বাংলো। বিকেলে বেড়াতে বেড়িয়ে হঠাৎ এই প্রৌঢ়ের সঙ্গে প্রিয়নাথের সাক্ষাৎ। প্রৌঢ়ই এগিয়ে আসেন পরিচয় করতে। ক্রমেই আলাপ বাড়লে প্রৌঢ়, 'আপনি' থেকে নিঃসঙ্কোচে 'তুমি' সম্বোধনে অবতীর্ণ হন, এবং সুযোগ বুঝে এই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নটি করে বসেন।
প্রাথমিক বিস্ময়ভাবটা কাটিয়ে উঠে এবং সামান্য একটু চিন্তা করে প্রিয়নাথ বলল, "ক্রিপ্টোজুলজির বিষয়ে আমার বেশ আগ্রহ আছে। তবে ভ্যাম্পায়ারের বিষয়ে আমার জ্ঞান সীমিত। "ক্রিপ্টজুলজি! অর্থাৎ কিছু বিতর্কিত প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা, তাই তো?” প্রৌঢ় তাঁর ঠোঁটের হাসিটি অক্ষত রেখে বললেন।
প্রৌঢ় অপেক্ষাকৃত স্বল্প চর্চিত এই বিষয়টি সম্বন্ধেও জ্ঞান ধারণ করেন দেখে প্রিয়নাথ বেশ আশ্চর্য হল। প্রতুত্তরে সে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল মাত্র।
"ভ্যাম্পায়ার সম্বন্ধে তোমার ধারণাটা কিন্তু এখনও জানা হল না।” প্রৌঢ় যে একপ্রকার নাছোড়বান্দা তা বুঝতে পেরে প্রিয়নাথ বলল, "আমি যতদূর জানি, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ভ্যাম্পায়ার বাদুড় পাওয়া যায় এবং এদের খাদ্যাভ্যাসের মূল হল রক্ত, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় হেমাটোফ্যাগি বলা হয়। এর থেকে বেশি আর কিছুই আমার জানা নেই।"
প্রিয়নাথের ব্যাখ্যা শুনে প্রৌঢ়ের ঠোঁটের হাসি যেন আরও চওড়া হয়ে উঠল।
"শহুরে শিক্ষিত মানুষ চিনতে আমার সহজে ভুল হয় না। আমি জানতাম তুমি ভ্যাম্পায়ার সম্বন্ধে কিছু অন্তত জানো। তবে তুমি আমার এই অদ্ভুত আগ্রহ দেখে মনে মনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো?"
"সত্যি বলতে, তা একপ্রকার হচ্ছি বটে।"
"সেটাই তো স্বাভাবিক। আসলে এই পাহাড়ি অঞ্চলের অশিক্ষিত মানুষদের এসব বিষয়ে কোনও কৌতূহল নেই। এঁদের দেখে আমারও ইউলিসিসের মতো বলতে ইচ্ছে করে, 'দ্যাট হোর্ড, এন্ড স্লিপ এন্ড ফিড, এন্ড নো নট মি।" কবিতার লাইনটা প্রিয়নাথের পরিচিত। লর্ড টেনিসনের বিখ্যাত কবিতা "ইউলিসিস” থেকে উদ্ধৃত। "স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আপনার কথা যত শুনছি তত আমার বিস্ময় বেড়েই চলেছে", প্রিয়নাথ বলল। "তাই যদি হয় তবে আরেকটা বিস্ময়ের কথা তোমায় বলি। তার আগে এসো এখানে একটু বসা যাক। আমি আবার খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না,” বলেই প্রৌঢ় একটি বড় মাপের মসৃণ পাথরের দিকে আঙুল নির্দেশ করলেন। পাহাড়ি অঞ্চলে এরকম পাথর রাস্তার পাশে প্রায়শই চোখে পড়ে।
এতক্ষণ তাঁরা দু'জনে পাহাড়ের শরীরের উপর সর্পিল পথ ধরে হেঁটে চলেছিল। পশ্চিমের অস্তগামী সূর্য ইতিমধ্যেই লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে চারিপাশে। সেই আলো, গুঁড়ো আবিরের মতো আটকে আছে ওক, ম্যাপেল গাছের পাতায় পাতায়। চারিপাশে সৃষ্টি হয়েছে এক মায়াবী পরিবেশ। পাথরটির উপর দু'জন পাশাপাশি বসল। প্রৌঢ় পশ্চিম আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন, যেন তাঁর বক্তব্যটি মনে মনে মহড়া দিয়ে নিচ্ছেন।
"আপনার বিশেষ বিস্ময়কর বিষয়টি কী?” প্রিয়নাথ জিজ্ঞেস করল।
"কৃত্রিম উপায়ে যে এই দেশেও ভ্যাম্পায়ার তৈরি করা সম্ভব, সে বিষয়টি তুমি বিশ্বাস করো?” প্রৌঢ় বললেন। এতক্ষণে তাঁর ঠোঁট আঁকড়ে পড়ে থাকা হাসিটা বেমালুম উবে গেছে। পরিবর্তে তাঁর মুখমণ্ডলকে গ্রাস করেছে এক করাল ছায়া। প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠল প্রিয়নাথ। সে হয়তো কথাটাকে স্রেফ হেসেই উড়িয়ে দিত, কিন্তু প্রৌঢ়ের মুখের কাষ্ঠল অভিব্যক্তি তাঁকে নিরুৎসাহিত করল।
"কৃত্রিম ভ্যাম্পায়ার! তা...তাও আবার হয় নাকি? টেস্ট টিউব বেবি যদিও প্রমাণিত সত্য, তা বলে ভ্যাম্পায়ার!” প্রিয়নাথ ইতস্তত করে বলল। তাঁর গলায় ভয় স্পষ্ট হয়ে উঠল। "আলবাত সম্ভব।” প্রৌঢ় উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন। "কিন্তু কীভাবে?”
"ঠিক যেভাবে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতির সৃষ্টি হয়। মেটামরফসিস। অবশ্য এক্ষেত্রে পদ্ধতিটা খানিকটা জটিল। এতে মিশরীয় মমি তৈরির পদ্ধতিটিও অন্তর্ভুক্ত।” প্রৌঢ়ের ব্যাখ্যা প্রিয়নাথের কানে হেঁয়ালির মতো শোনালেও, তাঁর কৌতূহল ইতিমধ্যেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। "যদি কৃত্রিম উপায়ে ভ্যাম্পায়ারের সৃষ্টি সম্ভব বলে ধরেওনি, এই এক্সপেরিমেন্ট বাস্তবে কেউ কখনও করেছে বলে তো আমার জানা নেই।"
প্রিয়নাথের কথা শুনে প্রৌঢ় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। প্রিয়নাথের অস্বস্তি কয়েকগুণ বেড়ে উঠল। প্রৌঢ় তাঁর হাসিতে লাগাম পরিয়ে বললেন, "দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন এন্ড আর্থ, মি. সান্যাল দ্যান আর ড্রেমট অফ ইন ইওরফিলোসফি।"
কিছুক্ষণ দু'জনেই নিরব থাকার পর প্রৌঢ় পুনরায় বলতে শুরু মি করলেন, "আমার কাছে প্রমাণ আছে। তুমি যদি আগ্রহী হও তবে সেই দুর্লভ জিনিস প্রত্যক্ষ করার সুযোগ তুমি পেতে পারো।"
প্রিয়নাথ যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। প্রলোভনের আস্তরণ ক্রমেই এতটাই পুরু হয়ে উঠতে লাগল যে, পরিণামের বিষয়ে প্রিয়নাথ একপ্রকার উদাসীন হয়ে উঠল। "আপনি আমার সঙ্গে মশকরা করছেন না তো?” প্রিয়নাথ জানতে চায়।
"ওই যে পাহাড়টা দেখছো, ওটার ঠিক পিছনেই আমার বাড়ি।" প্রৌঢ় একটি ছোট মাপের পাহাড়ের দিকে আঙুল নির্দেশ করে বললেন। প্রিয়নাথ ঠিক এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে নির্দেশিত ধূসর পাহাড়টির দূরত্ব অন্তত আধ মাইল।
“গত বিশ বছর ধরে ওটাই আমার ঠিকানা।” প্রৌঢ় বলতে লাগলেন, "সাত বছর আমি প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিজিক্সের প্রফেসর ছিলাম। তাই হেঁয়ালি করাটা কোনও কালেই আমার স্বভাব নয়। পারলে কাল সন্ধে নাগাদ আমার বাড়িতে চলে এসো। তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তুমি সেখানেই পেয়ে যাবে। আর একটা কথা, এই বিষয়টি কিন্তু অত্যন্ত গোপন।"
প্রৌঢ়ের শেষ কথাটির নেপথ্যে যে সাবধানতার ইঙ্গিত লুকিয়ে ছিল তা বুঝতে প্রিয়নাথের অসুবিধা হল না। প্রৌঢ় উঠে পড়লেন। আর একটিও বাক্য ব্যয় না-করেই তিনি রওনা দিলেন। প্রিয়নাথ মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধ শরীরকে মন্থর গতিতে ধূসর আলোয় মিলিয়ে যেতে দেখল।
আজ রবিবার। পুরো দিনটা গভীর উদ্বেগে কাটিয়েছে প্রিয়নাথ। অবশেষে এসেছে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই সময়। দিনের আলো নিভে যাওয়ার আগেই একটি টর্চ হাতে নিয়ে রওনা হল প্রিয়নাথ। অচেনা পথ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে প্রায় ঘণ্টাখানেক কেটে গেল। একটি নিস্তব্ধ উপত্যকা। বাড়িটি চিনতে প্রিয়নাথকে বেগ পেতে হল না, কারণ এই অঞ্চলে দ্বিতীয় কোনও বাসস্থানের অস্তিত্ব নেই। একটি ছোট আকারের কাঠের বাড়ি। এমন পরিবেশে বাড়িটিকে পরিত্যক্ত, ভূতুড়ে আখ্যা দিলেও আশ্চর্য হওয়ার অবকাশ নেই। বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়াল প্রিয়নাথ। গতকাল পরিচয় বিনিময়ের সময় প্রৌঢ়ের বলা নামটা মনে পড়তেই প্রিয়নাথ উচ্চৈঃস্বরে ডেকে উঠল, "মনতোষবাবু, বাড়ি আছেন? আমি প্রিয়নাথ।” ঘরের ভিতর থেকে কোনও উত্তর এল না। প্রিয়নাথ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুনরায় ডাক দিল। কিন্তু তাতেও ভিন্ন ফল হল না। ঠিকানা ভুল হওয়ার উপায় নেই, কারণ প্রৌঢ়ের দিক নির্দেশ সে নির্ভুলভাবে অনুসরণ করে এখানে এসে পৌঁছেছে। তবে কি প্রৌঢ় তাঁকে এই অঞ্চলে নতুন পেয়ে বোকা বানিয়েছেন? কথাটা মনে হতেই রাগ তার মনের আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘের মতো ঘনিয়ে উঠল। বিদায় নেওয়ার আগে শেষবারের মতো দরজায় আঘাত করতেই প্রিয়নাথ আবিষ্কার করল দরজাটি খোলা। ব্যপারটা আশ্চর্যের ঠেকলেও দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল প্রিয়নাথ। বালবের টিমটিমে হলুদ আলো ঘরটিকে যেন রহস্যময় করে তুলেছে। খুব সাবধানে পা ফেলে ঘরের প্রায় কেন্দ্রবিন্দুতে এসে উপস্থিত হল প্রিয়নাথ। একটি কাঠের আলমারি ও দু'টি চেয়ার না-থাকলে ঘরটিকে আসবাবশূন্য বলেই দাবি করা যেত। প্রিয়নাথ পশ্চিমমুখী দেওয়ালের দিকে দৃষ্টি স্থির করে দাঁড়াল। এই দেওয়ালের উপর আরও একটি বন্ধ দরজা এবং সেই দরজার অপর পাশ থেকে ভেসে আসছে একটা চাপা গোঙানির শব্দ, ঠিক যেন কোনও এক হিংস্র, ক্ষুধার্ত পশুকে শিকলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রিয়নাথ স্বভাব ভীতু নয়, কিন্তু এখন যে-শব্দটা তাঁর কানকে আলোড়িত করে চলেছে তা ক্রমেই তাঁর শিরদাঁড়ায় শিহরন তুলল।
"আর একটু অপেক্ষা করো। সে এসেছে..."
কথাগুলি সাপের বিষাক্ত ঘ্রাণের মতো দরজা ভেদ করে প্রিয়নাথের কানে আছড়ে পড়ল। এই গলার স্বর প্রিয়নাথের চেনা। কোনওকিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিতে সেই বন্ধ দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন প্রৌঢ়। তাঁর পরনে একটি সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা। চুল আলুথালু। মুখের উপর বয়সের ভাঁজগুলি আরও গভীর ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। "আমি জানতাম তুমি আসবে, প্রিয়নাথ।"
"আমি তো আপনার সাড়াশব্দ না-পেয়ে ফিরেই যাচ্ছিলাম।" "ফিরে তুমি যেতে পারতে না প্রিয়নাথ।" কথাটা বলে প্রৌঢ় একটু
মৃদু হাসলেন।
"আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।"
"সব বুঝতে পারবে। এসো আমার সঙ্গে। এই দিকটায়”, বলেই প্রৌঢ় যে-দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সেই দরজার আড়ালেই অদৃশ্য হলেন। প্রিয়নাথ প্রৌঢ়কে অনুসরণ করে যে-ঘরটিতে এসে উপস্থিত হল সেই ঘরের বাতাস এক তীব্র কটু গন্ধে ভারাক্রান্ত। এই ঘরটিতে আলোর উৎস বলতে টেবিলের উপর জ্বলতে থাকামাত্র একটি মোমবাতি। প্রিয়নাথের গলা ঠেলে বমি উঠে আসার জোগাড়। কোনওক্রমে নিজেকে সামলে সে বলল, "এ কিসের গন্ধ, মনোতোষবাবু? আমার যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।" "পচনশীল ন্যাটরনের গন্ধ", প্রৌঢ় বলল। চমকিত হয়ে উঠল প্রিয়নাথ। "ন্যাটরন লবণ তো মমি তৈরির
কাজে লাগে। কিন্তু এখানে তা কীভাবে এলো?" প্রৌঢ়, প্রিয়নাথের মুখের উপর দৃষ্টি স্থির করে একটি কুৎসিত হাসি দিয়ে বলল, "কারণ এই ঘরে একটি মমি আছে। ভ্যাম্পায়ারের মমি।"
"আপনার মাথার ঠিক আছে তো? এখানে ভ্যাম্পায়ার...মানে..." কথাটা সম্পূর্ণ করতে না-দিয়েই প্রৌঢ় বলল, "গত বারো বছর ধরে আমি এই গবেষণায় লিপ্ত। আমাকে পাগল আখ্যা দিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বিতাড়িত করা হয়। কিন্তু তাতেও আমি ভেঙে পড়িনি। কলকাতায় আমার নিজের বাড়িতে আমি ল্যাব তৈরি করি। প্রতিবেশীদের তাও সহ্য হল না। অবশেষে বাধ্য হয়ে এমন একটি পরিত্যক্ত জায়গা আমি বেছে নিয়েছি আমার গবেষণার জন্য। এবং আজ আমার গবেষণা সম্পূর্ণ হওয়ার দিন।”
"আজ! ঠিক বুঝলাম না।” "আমি বুঝিয়ে বলছি। ভ্যাম্পায়ার তৈরির প্রথম ধাপ হল একটি বাদুড়ের মমি তৈরি করা। গ্রিক বা রোমানদের মমি তৈরির পদ্ধতিটিই আমি অবলম্বন করি, কারণ সেটাই সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত। বাদুড়ের শরীরে ছোট ছোট ছিদ্র করে, তাতে ন্যাটরন লবণ ভরে দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাদুড়ের হৃৎপিণ্ডটি। হৃৎপিণ্ডটিকে দেহের বাইরে অন্তত চল্লিশদিন বাঁচিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়। এই হৃৎপিণ্ডটিকে অক্ষত রাখার পদ্ধতিটি আবিষ্কার করতেই আমার ব্যয় হয় প্রায় এগারোটা বছর। অন্তত শ'দুয়েক বাদুড় আমি বলি দিয়েছি আমার এই গবেষণার স্বার্থে। বাদুড় জোগাড়ের কাজটিও মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। যাক্, সে কথা। গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োজন একটি সারকোফেগাস অর্থাৎ মমির খোলস। ভ্যাম্পায়ারের আদলে তৈরি সেই খোলস। বাদুড়টির শরীরে পুনরায় তার জীবিত হৃৎপিণ্ড প্রবেশ করিয়ে, আবদ্ধ করতে হয় ওই সারকোফেগাসের অন্ধকারে। এই পর্যায়টি শুঁয়োপোকার, প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে তুলনীয়। এই সবক'টি ধাপ আমি পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন যা প্রয়োজন তা একমাত্র দিতে পারেন আপনি।” "আ..আমি? কিন্তু আমি তো..." এা প্রিয়াগ। আম্পায়ারের চাই রক্ত, তাজা রক্ত। '
হেমাটোফ্যাগি', মনে পড়ছে নামটা? আজ আমার প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। যে- সভ্য জগৎ আমাকে বর্বর বলে একদিন বিতাড়িত করেছিল, আজ তাদেরই একজনের রক্তে আমার গবেষণার উপর শিলমোহর ছু পড়বে। আয়...আয়। কোথায় রে? চলে আয়। দেখ তোর শিকার এসে গেছে। মিটিয়ে নে তোর তৃষ্ণা” বলেই হঠাৎ প্রৌঢ় চিৎকার করতে লাগলেন।
ঠিক তখনই প্রিয়নাথ বিস্ফারিত চোখে দেখল এক বিশালাকার বাদুড় ঘরের এক অন্ধকার কোণ থেকে তার বিস্তৃত ডানার দাপটে ঘরের বাতাসকে আলোড়িত করে তুলল। প্রাণীটির ভাটার মতো চোখদু'টি রক্তলোলুপ। প্রসারিত দুই চোয়াল থেকে ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে হিংস্র দাঁতের সারি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই হিংস্র প্রাণী ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রিয়নাথের উপর। ক্রমেই তার দাঁত নেমে এল প্রিয়নাথের গলার উপর। তার রক্তাক্ত গলা চিরে বেরিয়ে এল শেষ আর্তনাদ, "নাআআআআআ...."